নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। 

রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক–বাজেট বৈঠকে নোয়াব জানিয়েছে, বেশ কয়েক বছর সরকার তাদের  কোনো প্রস্তাব বিবেচনায় নেয় নি। সংবাদপত্র শিল্প কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনেক বেশি হারে শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর এবং  করপোরেট কর এ শিল্পের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সবাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খান। তিনি অগ্রিম আয়কর এবং অগ্রিম ভ্যাট  কমানোর আশ্বাস দেন। কাগজের প্রকৃত আমদানি মূল্যের ওপর ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করা হবে বলে জানান। সভার শুরুতে নোয়াবের পক্ষে লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি এ. কে. আজাদ। এ সময় এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) ড. আব্দুর রউফ ও সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর–জিডিপি অনুপাত বাড়াতে সচেতনতামূলক সংবাদ প্রচার করছে গণমাধ্যম। ভবিষ্যতে গণমাধ্যম আরও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তাই রাষ্ট্রের উপকার হবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হবে না এনবিআর। এতে যদি ব্যক্তি বা এনবিআরেরও ক্ষতি হয়, হোক। সবক্ষেত্রে নৈতিকতা দিয়ে হবে না আইনেরও প্রয়োগ করতে হবে। 

লিখিত প্রস্তাবে নোয়াব সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক কালে সংবাদপত্র শিল্প একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল মাধ্যমের বহি:প্রকাশ এবং অন্যান্য মাধ্যমের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যেমন সংবাদপত্র শিল্পকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে, তেমন বিভিন্ন শুল্ক, ভ্যাট, কর্পোরেট ট্যাক্স এই শিল্পের বিকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে ডলারের দর বৃদ্ধি এ শিল্পকে নতজানু করে ফেলছে।

নোয়াব সভাপতি বলেন, কয়েক বছর আগে এক টন নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৬০০ ডলারের কম, এখন ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ টাকা-ডলারের বিনিময় হার। বর্তমানে নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হলেও এর সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ও পরিবহন বীমা সহ ল্যান্ডেড ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ। 

নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াব।  এছাড়া সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে কর্পোরেট কর সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপন করার অনুরোধ করেছে।  লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার সংবাদপত্রকে সেবা শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাংবাদিক বাদেও মুদ্রণ, বিপণন, বিতরণ ও বিজ্ঞাপন সহ অগণিত মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এর অব্যাহত অগ্রগতি ও পরিচালনার জন্য শুল্ক ও কর নীতি প্রয়োগের বিপুল সংস্কার তথা সহায়ক ভূমিকা প্রয়োজন। 

নোয়াব সভাপতি বলেন, বিগত বেশ কয়েক বছর সরকার সংবাদপত্র শিল্প বিকাশে এ খাতের উদ্যোক্তাদের কোনো প্রস্তাব বা প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নেয়নি। এখন যেহেতু রাজনৈতিক সরকার নেই, তাই আগামী বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন তিনি। 

নোয়াবের সাবেক সভাপতি ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এই মূহুর্তে সংবাদপত্র শিল্প সবচেয়ে গভীর সংকটে পড়েছে। এর প্রধান কারণ একদিকে সংবাদপত্রের পাঠক কমেছে, অন্যদিকে ভিডিও-অডিও মাধ্যমের প্রসার বাড়ছে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট । এক সময় প্রতি টন নিউজপ্রিন্টের  দর ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার। এখন দাম বেড়ে ৭০০ ডলার ছাড়িয়েছে। কালির দামও বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ার কারণে বাড়তি খরচ হচ্ছে। সংবাদপত্রের মূল আয় বিজ্ঞাপন। নানা কারণে এখন ব্যক্তিখাতের বিকাশ কিছুটা হলেও আটকে আছে। সরকারি বিজ্ঞাপন কিছু পাওয়া গেলেও বছরের পর বছর সেগুলোর বিল আটকে থাকে। 

তিনি বলেন, গত ১৬ বছর সংবাদপত্র শিল্প কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। এমন কি এ শিল্পের কারো সাথে কোনো বৈঠকও করা হতো না। কখনও আলোচনা করা হলেও সরকার একপেশে সিদ্ধান্ত দিতো। ফলে এ শিল্প ভালো কিছু পায়নি। বরং সংবাদপত্র শিল্প  আক্রমণের শিকার হয়েছে। মামলা-মোকাদ্দমা, চাপ এবং  ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। বিগত সরকার অনেক পত্রিকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু সরকারি নয়, বড় বড় ব্যক্তিখাতের বিজ্ঞাপনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এনবিআরকে উদ্দেশ করে মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্র একটা রুগ্ন শিল্প। পোশাক শিল্পে করপোরেট কর ১২ শতাংশ। অথচ সংবাদপত্রে শিল্পে সাড়ে ২৭ শতাংশ। কয়টা পত্রিকা লাভ করে? এনবিআরের কাছে সব ফাইলপত্র যায়। এনবিআর সব কিছুই জানে। তাই এ খাতে করপোরেট কর না রাখলেও হয়। আর যদি রাখতেই হয় তাহলে যৌক্তিক হওয়া উচিত। ৫ বা ১০ শতাংশ করা উচিত। যারা সৎভাবে কর দিতে চায় তাদের জন্য বর্তমান করপোরটে করহার  জুলুম। 

ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, কয়েকদিন আগে নিউজপ্রিন্ট  আমদানি করেছেন  সাড়ে ৭শ ডলারে। কিন্তু এনবিআরে কাস্টমসে  নির্ধারিত থাকে ৮৪০ বা ৮৫০ ডলার। ফলে সাড়ে ৭শ ডলারে আমদানি করলেও ট্যারিফ ভ্যালু অনুযাযী শুল্ক দিতে হয়েছে, যা অযৌক্তিক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব দপত র শ ল প প র ট কর র জন য বছর স আমদ ন করপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

`সাজা মাইন্যা নিছি, কিন্তু ন্যায্য বিচার পাইনি’

‘আমার ৫১টা গাভী ছিলো। প্রতিদিন ৩৫০-৩৬০ লিটার দুধ পাই। হাতিরপুলের বাড়ি থেকে আমার মা তিনটা ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিছে আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার জন্য। আমার আয়কর নথির বাইরে কিছু পাইনি। তারপরও এই সাজা আমি মাইন্যা নিছি, কিন্তু ন্যায্য বিচার পাইনি।’

রবিবার (২৩ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক জাকারিয়া হোসেনের আদালত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত সাবেক গাড়িচালক আব্দুল মালেককে পৃথক দুই ধারায় ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন।

মালেক বলেন, “আমি ৩৮ বছর ৯ মাস ১৮ দিন সরকারি চাকরি করেছি। সরকার আমাকে চার বছরের বেতন, ওভারটটাইমের টাকার হিসাব নিছে। বাকি ৩৫ বছর বিনা বেতনে চাকরি করেছি? আমার বাড়িতে আয়কর নথির বাইরে কিছু পাই নাই। মাত্র চার বছরের বেতন মামলার মধ্যে নথিভূক্ত করেছে। আর বাকি ৩৫ বছর বেতন ছাড়া চাকরি করলাম।'

তিনি বলেন, “হাতিরপুলের বাড়ি থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি, দাদার সম্পত্তি। এই সম্পত্তি বিক্রি করে বাড়ি করি। অন্য যে সব সম্পদ দেখায়ছে কিছু পাই নাই। সরকার আমার নামে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছি। অথচ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদের ট্যাক্স আমি দেয়। ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কিছু নাই। আমারে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা দিছে।”

দণ্ডিত এ ব্যক্তি বলেন, “আপনারা জানেন করোনাকালীন সময় আমাদের অফিসে যে অকারেন্স ঘটছে। সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের নিরীহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিছে। আর মিডিয়া দেখায় আমার কোটি কোটি টাকা সম্পদ। কিন্তু মামলায় তো এগুলি নাই। মামলায় দেখায়ছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আমি ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ট্যাক্স দেয়। এর বাইরে কিছু নাই। অথচ দেখেন ষড়যন্ত্রের মামলায় আমি সাজা পেলাম। টাকা কি আমি জেলখানায় নিয়ে গেছি। আমার সম্পদগুলি গেল কোথায়? মিথ্যা মামলা দিলো। কেন আমার নামে মিথ্যা মামলা দিলো। দেশে কি একটাও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি নাই। মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করতেছি।”

জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাস কারাভোগ করতে হবে। তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অবৈধভাবে অর্জিত এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে মর্মে আদালত আদেশ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে জানান দুদক প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান রানা।

রায় ঘোষণার সময় মালেককে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আব্দুল মালেক এবং তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের আরেক মামলায় রায় প্রস্তুত না হওয়া পিছিয়ে আগামী ১৬ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছে।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনলাইনে ১৫ লাখ রিটার্নের ১০ লাখে কোনো কর নেই
  • সব কোম্পানিকে কেন বাধ্যতামূলক নিরীক্ষা করাতে হবে
  • `সাজা মাইন্যা নিছি, কিন্তু ন্যায্য বিচার পাইনি’