বিএনপি জোর করে ক্ষমতায় যেতে চায় না: নজরুল ইসলাম
Published: 23rd, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘‘স্থানীয় নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও আইনের পরিবর্তন করতে হলে সংসদ প্রয়োজন। আর সংসদের জন্য জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। তবে বিএনপি জোর করে ক্ষমতায় যেতে চায় না, যেতে পছন্দ করে না।’’
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌরউদ্যানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল সালাম পিন্টুর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আব্দুস সালাম পিন্টুকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতন হলে খালাস পায় আব্দুস সালাম পিন্টু। রবিবার প্রথম টাঙ্গাইলে আসলে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবকিছুর তদন্ত হবে: দুদু
নজরুল ইসলাম খান বর্তমান সরকারের সংস্কার বিষয়ে বলেন, ‘‘শুধু বলেন সংস্কার? দেশ সংস্কার করেছে জিয়াউর রহমান, জিয়াউর রহমান বাড়ি বাড়ি গেছেন। খালেদা জিয়া মাইলের পর মাইল হেঁটে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাই দেশ সংস্কার একমাত্র বেশি করেছে বিএনপি। যুবকদের জন্য যুব মন্ত্রণালয় করেছে বিএনপি, মহিলাদের জন্য মহিলা মন্ত্রণালয় করেছে বিএনপি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করেছে বিএনপি। সবগুলো কল্যাণকর কাজ করেছে বিএনপি। দেশে প্রথম সংস্কারের জন্য ঘোষণা দেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। ৩১ দফার মধ্যে সংস্কার রয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি জোর করে ক্ষমতায় যায় না। শোনা যাচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন দিতে পারে। তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের কোনো নেতাকর্মী যদি কাউকে অত্যাচার ও নিপীড়ন করে তাহলে আপনারা জানাবেন, আমি যথাযথ ব্যবস্থা করব।’’
সংবর্ধিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, ‘‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতা লাগালের বাইরে চলে গেলেও বর্তমান সরকার সেটি সামাল দিতে পারছে না। সংস্কার সংস্কার খেলা বন্ধ করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিন। দ্রুত রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন।’’
তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা আমাকে ফাঁসি দিয়েছিল। কখনো কল্পনা করিনি আবার ফিরে আসব। আগের সালাম পিন্টু নেই কারণ সেই সালাম পিন্টুকে শেখ হাসিনা মেরে ফেলেছে। আজকের সালাম পিন্টু জিয়াউর রহমানের সালাম পিন্টু, তারেক রহমানের সালাম পিন্টু।’’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পর বলেছিলাম, বাংলাদেশে এই গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। ভেবেছিলাম আর রাজপথে নামতে হবে না। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয়, এই সরকারও সেই পথে হাঁটছে।’’
জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহিনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, নির্বাহী সদস্য এস এম ওবায়দুল হক নাসির, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নেতাকর্মীরা আব্দুস সালাম পিন্টুকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেন। এ অনুষ্ঠানে জেলা, শহর, উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়।
ঢাকা/কাওছার/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স অন ষ ঠ ন ক ষমত য় স বর ধ র জন য সরক র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
সময়সীমা বাড়ানো ও শর্ত শিথিল বাস্তবসম্মত
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি বহুপক্ষীয় মত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এর অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনপ্রক্রিয়া। বর্তমানে প্রচলিত নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ও ২০০৮ সালের নিবন্ধন বিধিমালার অন্তর্নিহিত কঠোরতা সদ্য গঠিত কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। রক্তস্নাত গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ নীতির হাত ধরে যখন নতুন নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত হচ্ছে, সে মুহূর্তে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যে সময়সীমা নির্ধারণ করতে দেখা গেছে, তা বাস্তবতার নিরিখে অসংগত, অপর্যাপ্ত এবং নবীন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর জন্য কার্যত একপ্রকার নিষেধাজ্ঞারই নামান্তর।
এমন প্রেক্ষাপটে সদ্যোজাত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) এবং নতুনধারা বাংলাদেশ (এনডিবি) নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধিসংক্রান্ত যে দাবি তুলেছে, তা বিবেচনা করতে হবে রাজনৈতিক ন্যায়বোধ ও গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের নিরিখে।
নির্বাচন কমিশন গত ১০ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে, যার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী ৪০ দিনকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের মতো একটি জটিল ও বিস্তৃত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ প্রায় এক দশক ধরে এ নিবন্ধনপদ্ধতি অকার্যকর ছিল। উপরন্তু এ সময়ের মধ্যেই দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও টানা সরকারি ছুটি পড়ে যাওয়ায় প্রশাসনিক গতিশীলতা ও কার্যসম্পাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে।
এ বাস্তবতা বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলো যে নিবন্ধনের সময়সীমা ন্যূনপক্ষে তিন মাস বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে, সেটি নিছক একটি সুবিধার আরজি নয়; বরং তা বর্তমান বাস্তবতার গভীর উপলব্ধি থেকে উৎসারিত এক গণতান্ত্রিক দাবিমাত্র। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে এ আবেদনকে আন্তরিকতা ও যুক্তিনিষ্ঠতার সঙ্গে গ্রহণ করা এবং দ্রুত সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রদান করা।
উল্লেখ্য, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে নিবন্ধনের কড়াকড়ি শর্তাবলি শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের মতে, নিবন্ধনের পূর্বশর্ত হিসেবে দেশের ১০০টি থানা বা ৪০টি জেলার স্বীকৃত কার্যালয়, নির্ধারিত হারে নারী প্রতিনিধিত্ব, পাঁচ বছরে একবার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি শর্ত আজকের বাস্তবতায় অনেকটাই ভারসাম্যহীন ও নবীন দলবিরোধী। এ অবস্থায় একদিকে যখন শর্ত পূরণের কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন, তখন অপর দিকে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান এবং এর জন্য কড়াকড়ি সময়সীমা নির্ধারণ একপ্রকার নীতিগত অসংগতি হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
রাজনৈতিক পরিসরকে সুসংবদ্ধ ও বহুমাত্রিক করার জন্য কেবল বৃহৎ ও পুরোনো দলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে নবাগত দলগুলোর সামনে দেয়াল তুলে রাখলে তা গণতান্ত্রিক বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। বরং একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের উচিত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে সময় ও শর্ত—উভয় ক্ষেত্রেই আরও সহনীয়, বাস্তবসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমুখী করা।
আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধি করবে এবং সেই সঙ্গে শর্ত শিথিলসংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুততর করবে। গণতন্ত্রের শক্তি বহুমতের স্বীকৃতি ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির বিস্তারে নিহিত—এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ তৈরি করা, রাজনৈতিক দলের হাত-পা বেঁধে দিয়ে তরঙ্গসংকুল নদীতে সাঁতার কাটতে বাধ্য করা নয়।