রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারির ডানে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা একটি চিত্রকর্ম চোখে পড়ল। চিত্রকর্মে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যার চিত্র সবই উঠে এসেছে। ঢাকা আর্ট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী রওশন আরার আঁকা চিত্রকর্মটিতে উঠে আসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগও।

চিত্রশিল্পটির মতো দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আন্দোলন, সংগ্রামী মানুষ, গ্রামীণ জীবন, নদী, প্রকৃতি, সুন্দরবনসহ ১০০টি চিত্রকর্মে সাজানো হয়েছে শিল্পকলার আর্ট গ্যালারি। দেশের ৫২ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

নর্থ ক্যানভাস বাংলাদেশের আয়োজনে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এই চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী। তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী আজ রোববার রাত ৯টায় শেষ হয়েছে। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।

আজ দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রদর্শনী দেখতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসছেন। প্রদর্শনীতে একটি চিত্রকর্ম চোখে পড়ল জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে। একটি সড়কে ইট-সুরকির স্তূপ। এক কিশোর ইট ছুড়ছে পুলিশের দিকে। পুলিশ গাড়ি নিয়ে পলায়নরত।

চিত্রশিল্পী এরাশ মাহমুদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে বেইলি রোড থেকে সাতরাস্তার দিকে পুলিশদের তাড়িয়ে দেওয়ার সময়কে ধরে চিত্রকর্মটি তিনি এঁকেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের কাছে পুলিশ তথা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পরাজয় এই চিত্রকল্পে ফুটে উঠেছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার, তোষামোদ, লেজুড়বৃত্তি, ব্যাংক লুটপাট, অর্থ কেলেঙ্কারির চিত্র অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে এঁকেছেন শেখ মনজুরুল আহসান। আরেকটি চিত্রকর্মে স্বৈরাচারের স্বরূপ কী ভয়ংকর হতে পারে, তা জলরঙের মাধ্যমে এঁকেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিব উল্লাহ বাহার।

বিভাগীয় চারুকলা প্রদর্শনী উদ্‌যাপন কমিটির আহসান আহমেদ বলেন, চিত্রকর্মটি শেখ হাসিনার সরকারের সময় দেশে কোথাও প্রদর্শন করতে দেওয়া হয়নি। কামরুল হাসানের আঁকা ‘বিশ্ববেহায়ার’ মতো চিত্রশিল্পটি স্বৈরাচারের প্রতীক।

আয়োজকেরা জানান, রংপুর বিভাগীয় চারুকলা প্রদর্শনী-২০২৫–এ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮৫ জন শিল্পীর দুই শতাধিক শিল্পীর শিল্পকর্ম জমা পড়ে। সেখান থেকে বরেণ্য শিল্পী আলাউদ্দিন আহমেদ ৫২ জন শিল্পীর ১০৮টি শিল্পকর্ম নির্বাচন করেন। তবে কয়েকটি না পৌঁছানোয় ১০০টি চিত্রশিল্প দিয়ে প্রদর্শনী করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ত রকর ম

এছাড়াও পড়ুন:

১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুমোদন পাওয়া ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি জানান, বাতিল হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে পাঁচটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আশিক চৌধুরী বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১০টিকে চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাতিল হওয়া সরকারি পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলো কক্সবাজারের সোনাদিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, বাগেরহাটের সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরের শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বিজিএমইএ পোশাকশিল্প পার্ক, সুনামগঞ্জের ছাতক অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের ফমকম অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকা জেলার সিটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে এক দশকের বেশি সময়ে কয়েকটি বেসরকারি অঞ্চল ছাড়া সফল কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

এমন বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকার এসে অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারি মাসে বেজার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বদলে আপাতত পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বল্পমেয়াদি ও সময় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ওই সময় জানান, এই পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সবার মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তাতে দুই বছরের মধ্যে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৩৩টি শিল্পকারখানা নির্মাণ, ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আশিক চৌধুরী আগে জানিয়েছিলেন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একেবারে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে তা থাকবে। কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন বাতিলও হতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলের ঘোষণা এল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার