জাতীয় নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অনেকে বলেন নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? নির্বাচন হলে একটি স্থিতি অবস্থা আসবে এবং ধীরে ধীরে সংস্কারের কাজগুলো শুরু হবে। সমস্যাগুলোর তীব্রতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে যে যত সংস্কারই ঘোষণা করি না কেন, যে যত নীতি গ্রহণ করি না কেন, কোনোটিই সফল হবে না। রাজনীতি অস্থির হলে প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে এবং অর্থনীতি প্রভাব ফেলবে সবকিছুতে।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। এই কর্মশালার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিট।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, কোন নির্বাচন আগে হবে, কোনটি পরে হবে—এ নিয়ে বিভিন্ন দাবি থাকতেই পারে। তবে এ নিয়ে বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। চারদিকে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্বের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তার সঙ্গে একমত পোষণ করা। দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করা। কিন্তু সরকারের ভেতরকার ও বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তির আলোচনা শুনে মনে হচ্ছে সম্ভবত তারা ক্ষেত্রবিশেষে তাদের লক্ষ্য থেকে কিছুটা হলেও বিচ্যুত হচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন বিবৃতি থেকে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। রাজনীতিতে যখন দ্বিধা থাকবে, তখন অস্থিরতা দেখা দেবে।

সংসদকে কার্যকর করতে যত দেরি হবে, তত বেশি চারদিকে এই অস্থিরতা, তর্ক-বিতর্ক ছড়াতে থাকবে বলেও মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ কারণে সামগ্রিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি মনে করে, যত দ্রুত দেশে একটি স্থিতি অবস্থা আনা যাবে, তত দ্রুত দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্যে দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর প্রমুখ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সদস্যসচিব মো.

নিহার হোসেনের সঞ্চালনায় আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে

ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার আইনটির বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন স্থগিতের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার ছিল ওয়াক্ফ মামলায় সুপ্রিম শুনানি। আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াক্ফ এবং ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরকার জানায়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট ৭৩টি পিটিশনের মধ্যে পাঁচটি নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ১০০ বা ২০০টি পিটিশন নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। বাকিগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে বলে ধরা হবে।

‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে, এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াক্ফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়। তিনি জানান, ১৩০০, ১৪০০ বা ১৫০০ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব। তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।’

আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ‘হাজার বছর আগে ওয়াক্ফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা।’ আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের ৮ লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির মধ্যে ৪ লাখই ওয়াক্ফ বাই ইউজার।

নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে আটজন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে চারজন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার ২৭৪ জন: মুর্শিদাবাদে ওয়াক্ফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক অশান্তি ও হিংসার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এনজামুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার ভবানী ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ তথ্য জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। তিনি জানান, এই ঘটনার তদন্তে বর্তমানে সিট-এ সদস্য সংখ্যা ১১। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ ওয়াকার রেজা। বিগত কয়েকদিন ধরে জঙ্গিপুর মহকুমার শামসেরগঞ্জ থানা থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন তিনি।

সাংবাদিকদের সামনে এডিজি জানান, অশান্তির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬০টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ২৭৪ জনকে। এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হলো- জাফরাবাদে বাবা ও ছেলেকে নৃশংসভাবে খুনের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত এনজামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। সুতি এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাকে ধরা হয়। পেশায় রাজমিস্ত্রি, এনজামুল সুলিপাড়ার বাসিন্দা।

এডিজি জানান, নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়। ওই মামলায় এরই মধ্যে কালু ও দিলাবর নাদাব নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনজামুল বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করে প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সে-ই।

অশান্ত মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এডিজি আশ্বস্ত করে বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। প্রায় ৭০ শতাংশ দোকান ও বাজার ইতোমধ্যেই খুলে গেছে। আমরা আশাবাদী শনিবারের মধ্যে বাকি দোকানগুলোও খুলে যাবে।

এদিন বিকেল পর্যন্ত ৮৫ জন ঘরছাড়া মানুষকে পুলিশি নিরাপত্তায় বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ধুলিয়ান, সুতিসহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন রয়েছে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে ভারতে
  • আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষা, প্রস্তুতিতে যা যা করতে পারেন
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে
  • আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরু
  • গাইবান্ধার সাবেক এমপি সারোয়ার কবির কারাগারে 
  • বিচারক বললেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া মক্কেলের সঙ্গে আইনজীবীর কথা নয়
  • অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট–অ্যাপ ব্লক, প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সরাতে নির্দেশনা চেয়ে রিট
  • অনলাইন জুয়া ও বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন বন্ধে রিট
  • সাবেক দুই এমপি-আইজিপি-ওসি রিমান্ডে
  • ১১ আসামিকে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ