বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর
Published: 23rd, February 2025 GMT
ভারতের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করেন।
শনিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এস জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি- আমরা এমন কোনো আচরণ দেখতে চাই না, যা ভারতের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ সংকেত দেয়। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়। ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক যেন স্বাভাবিক থাকে, ভারত সেটাই চায়। আমরা প্রতিবেশীদের সর্বদা শুভকামনা জানাই। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল দীর্ঘ নয়, এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক বিশেষ ইতিহাস।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বছর সেখানে যা ঘটেছে, তা সবাই জানে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দুটি দিক ভারতের জন্য ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’। প্রথমত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা। আমি মনে করি, এটি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে এবং এ বিষয়ে আমাদের কথা বলা প্রয়োজন। যা আমরা এরই মধ্যে করেছি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়। কারণ প্রতিদিন যদি বাংলাদেশের কেউ, যারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন তারা যদি দাঁড়িয়ে সবকিছুর জন্য ভারতকে দোষারোপ করে এবং কিছু জিনিস যদি আপনি প্রতিবেদনগুলোতে দেখেন, তাহলে তা একেবারেই হাস্যকর। আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, আমি আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক, বাণিজ্য, পারস্পরিক যোগাযোগ ও অন্যান্য সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকুক। কিন্তু আমরা এমন কোনো বার্তা বা আচরণ দেখতে চাই না, যা বারবার ভারতের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ সংকেত দেয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থান সম্পর্কে জানলেও কিছু করার ছিল না ভারতের: জয়শঙ্কর
২০২৪ সালের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই বাংলাদেশে হাসিনাবিরোধী গণঅভুত্থান তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়টি ভারত সরকার আগেই অবগত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যদের এ কথা জানান তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, আগে থেকে জানতে পারলেও এ বিষয়ে বিশেষ ‘কিছু করার মত অবস্থানে’ ভারত ছিল না, কারণ শেখ হাসিনার ওপর তাদের ‘যথেষ্ট প্রভাব ছিল না’ এবং তাকে কেবল ‘পরামর্শ’ দেওয়ার সুযোগ ছিল। খবর দ্য হিন্দুর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যরা ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য জয়শঙ্করের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর- বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ইঙ্গিত দেন, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মত ভারতও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। আলোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ভলকার তুর্ক সম্প্রতি বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল, যদি তারা দমন-পীড়নে জড়িত হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তি রয়ে গেছে।
ছাত্র জনতার সেই প্রবল আন্দোলনেই গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখনও সেখানেই আছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় বিষয়টিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির যোগাযোগের সূচনা হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
তবে আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সফর সেরে ফেলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ মাসের শেষে যাচ্ছেন চীন সফরে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান সংযোগ বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সে সময় স্বাক্ষরিত হতে পারে।