কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রায় ৪০ দিন আগে পুলিশ পরিচয়ে ৩০০ বস্তা চালবোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আজ রোববার সকালে ট্রাকটি গাজীপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ছাড়া উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি চালও।

আজ বিকেলে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উপজেলার মিরশ্বানী এলাকা থেকে গত ১৫ জানুয়ারি চালক ও হেলপারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাকটি ছিনতাই করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি ট্রাকের মালিক সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করেছিলেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৪ জানুয়ারি বগুড়ার রেলগেটের তিনমাথা এলাকা থেকে কিবরিয়া ট্রেডার্স অটো রাইস মিলের ১৫ টন চাল (৩০০ বস্তা) নিয়ে ট্রাকটি কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করে। চালগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা। ১৫ জানুয়ারি ভোরে ট্রাকটি মহাসড়কের মিরাশ্বানী এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মাইক্রোবাস ট্রাকটির গতি রোধ করে। এ সময় ৩ থেকে ৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি পুলিশের পোশাক পরে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে তারা চালক মো.

মিরাজুল ইসলাম ও হেলপারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাক থেকে নামিয়ে তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এ সময় মিরাজুল ও রবিউলকে প্রথমে চোখ বেঁধে, পরে হাত-পা বেঁধে মহাসড়কের দৈলবাড়ি এলাকায় ফেলে দিয়ে চালবোঝাই ট্রাকটি নিয়ে উধাও হয়ে যায় ওই ব্যক্তিরা।

ট্রাকটির চালক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাক নিয়ে গেছে, তারা পুলিশের পোশাক পরা ছিল এবং তাদের হাতে পিস্তল ছিল। তারা গাড়ি থামিয়ে আমাকে ট্রাক থেকে নামতে বলে। এ সময় তারা বলে, আমার ট্রাকের ভেতরে নাকি অবৈধ মাদকদ্রব্য আছে। গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলে। আমি কাগজপত্র দেখাতে চাইলে তারা আমি এবং আমার সহকারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করে তাদের ব্যবহৃত গাড়িতে তুলে চোখ এবং হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে ডাকাত দল আমাদের দৈলবাড়ি স্কুলের সামনে ফেলে দিয়ে ট্রাকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। মহাসড়ক দিন দিন বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। চালকদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোববার সকালে ট্রাকটি খালি অবস্থায় গাজীপুর সিটির বাহাদুরপুর এলাকার বাংলাবাজারমুখী রাস্তার ওপর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা লুট হওয়া চাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ছিনতাইয়ে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ের নতুন তারিখ ২৭ মার্চ

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) ও তাঁর মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার রায় ঘোষণার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ মার্চ।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারকে মো. রবিউল আলম আজ রোববার এই তারিখ ধার্য করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই আদালতের বেঞ্চ সহকারী বিল্লাল হোসেন।

জি কে শামীম কারাগারে আছেন। তাঁর মা পলাতক। এ মামলায় গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। আদালত সেদিন ৩০ জানুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছিলেন। কিন্তু সেদিন (৩০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন আদালত।

তবে আসামিপক্ষ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি আবার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার আবেদন করা হয়। পরে আদালতের আদেশে মামলাটি রায়ের পর্যায় থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আসে। আজ রোববার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের নতুন তারিখ ঠিক করেন আদালত।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর দুদক মামলা করে।

মামলায় ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, শামীমকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে তাঁর মায়ের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এই টাকার তথ্য শামীম বা তাঁর মায়ের আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়েশা আক্তার তাঁর ছেলে শামীমের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ নিজ নামে রেখে তাঁকে (শামীম) অপরাধে সহায়তা করেছেন।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন শামীম। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে পৃথক মামলা হয়।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চলিয়ে ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার জব্দ করে র‍্যাব। এই টাকার কোনো উৎস পায়নি দুদক। সব মিলিয়ে শামীমের ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে শামীমের। এ ছাড়া ঢাকায় দুটি বাড়িসহ প্রায় ৫২ কাঠা জমির মালিক তিনি। এসবের দাম ৪১ কোটি টাকা। শামীম তাঁর অস্ত্রধারী সাত দেহরক্ষীকে দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টেন্ডারবাজি, বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটে চাঁদাবাজি করে এসব অর্থসম্পদ অর্জন করেছেন।

২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় শামীম ও তাঁর সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। অন্যদিকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই শামীমকে ১০ বছর এবং তাঁর সাত দেহরক্ষীর প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার সিলেট জেলা বৈষম্যবিরোধীদের আহ্বায়ক আকতারের জামিন
  • জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ের নতুন তারিখ ২৭ মার্চ