নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজু নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা ফারুকুল ইসলাম ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের মধ্য সানারপাড় এলাকাস্থ ফারুকের নিজ বাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মামলা নং-৫, তাং ০৩/০৯/২৪ইং।

গ্রেফতারকৃত আওয়ামীলীগ নেতা ফারুকুল ইসলাম ফারুক সিদ্ধিরগঞ্জের মধ্য সানারপাড় এলাকার মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে। তার ছোটভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিনুল ক্রসফায়ারে নিহত হয়। একসময় আমিনুল ও ফারুক সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যাপক আলোচিত ছিল।

গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ জানান, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে বাদী আকলিমা আক্তারের স্বামী সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজুকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরদের নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফারুক সহ অন্যান্য আসামিরা চিটাগাং রোড ডাচ বাংলা ব্যাংকের পিছন হইতে গুলি করিয়া হত্যা করে।

এই সংক্রান্তে থানায় বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলার রুজু হয়।  সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এর নির্দেশ মোতাবেক মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ফারুকুল ইসলাম ফারুককে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ুক

যেই সময়ে দেশব্যাপী সেনাসদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলমান, সেই সময়েই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রমবর্ধমান অপরাধ সংঘটিত হইবার উদ্বেগজনক তথ্য আসিতেছে। রবিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রত্যহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীদের বহুমাত্রিক তৎপরতার খবর মিলিতেছে এবং সংশ্লিষ্টরা এতটাই বেপরোয়া, ভুক্তভোগীকে প্রকাশ্যে অস্ত্রাঘাতে জখম করিতেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে বাসে আরোহণ করিয়া যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, টাকা লুণ্ঠন করিতেছে। এমনকি চলমান বাসে অস্ত্রের মুখে নারীর শ্লীলতাহানিও ঘটাইতেছে। পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সমগ্র দেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২৯৪ জন। এই সময়ে ১৭১টি চুরি, ৭১টি ডাকাতি, ১০৫টি অপহরণ এবং ১ সহস্র ৪৪০ জন নারী- শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। গত বৎসর একই সময়ে হত্যার শিকার হন ২৩১ জন, ডাকাতি ২৯, চুরি ১৪১, অপহরণ ৪৩ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ সহস্র ৪৩টি। স্পষ্টত, গত বৎসরের জানুয়ারি অপেক্ষা এই জানুয়ারিতে সকল প্রকার অপরাধই বৃদ্ধি পাইয়াছে। শুধু ইহা নহে; অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান দিয়া সমাজের প্রকৃত চিত্র অনুধাবন কঠিন। কারণ, ঘটনার শিকার হইয়াও অনেকে মামলা করিতে চাহেন না। মামলা হইলেও পুলিশ গড়িমসি করে। উপরন্তু অভিযোগ, একাদিক্রমে অপরাধমূলক তৎপরতার তথ্যপ্রাপ্তির পরও পুলিশের কাহারও কাহারও মধ্যে রহিয়াছে আত্মতুষ্টির ছাপ। কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হইলেই উহা লইয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হইতেছে। এমনকি রাজধানীর অধিকাংশ থানায় নূতন মুখ হওয়ায় তাহারা এখনও এলাকাভিত্তিক অপরাধী এবং গোয়েন্দা তথ্য না রাখায় অকুস্থলে যথাসময়ে উপস্থিত হইতে পারেন নাই। ফলস্বরূপ, জেল হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া পুনরায় অনেককে বড় অপরাধ সংঘটনে সংশ্লিষ্ট হইতে দেখা যাইতেছে।

শনিবার পুলিশ সদরদপ্তর জানাইয়াছে, সমগ্র দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ গত ১৪ দিনে সাকল্যে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮ সহস্রাধিক। অন্যান্য মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার হইয়াছে ৫৭২ জন। এতৎসত্ত্বেও অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাইল কেন? সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর হিসাবেই সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলিয়াছেন, অভিযানের মধ্যেও অপরাধমূলক তৎপরতা ইঙ্গিত দেয়– ততটা কার্যকরী অভিযান হইতেছে না। অপরাধ প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম আশানুরূপ নহে। এই প্রসঙ্গে অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হকের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন, অভিযান সামগ্রিকভাবে না হইলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসিবে না। তাঁহার পরামর্শ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর গুরুত্ব না দিয়া যাহারাই অপরাধে সংশ্লিষ্ট হইবে, তাহাদের হস্তে লৌহকঙ্কণ পরাইতে হইবে।
জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি হইতে ৫ সহস্র ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। সেই অস্ত্রগুলির মধ্যে এখনও বেহাত ১৩ শতাধিক অস্ত্র। লুণ্ঠিত অনেক অস্ত্র পেশাদার অপরাধীদের হস্তগত হইয়াছে বলিয়া ধারণা করা হইতেছে। এহেন প্রেক্ষাপটে অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এহেন অবনতি এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন খোদ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাম্প্রতিক ডিসি সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শক্ত হস্তে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলিয়াছেন। ইহার অর্থ প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ বা আহ্বান মাঠে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হইতেছে না, যাহা দুঃখজনক। আমাদের প্রত্যাশা, পুলিশের দুই কর্মকর্তার সমকালকে প্রদত্ত বক্তব্য অনুযায়ী, বিভিন্ন বাহিনীর সহিত আরও কার্যকর সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হইবে। এই বিষয়ও বিবেচনায় রাখিতে হইবে, শুধু বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার যদি চলমান অভিযানের উদ্দেশ্য হয়, তাহা হইলে আটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইবে বটে, প্রকৃত কার্যসিদ্ধি হইবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ