সংবাদপত্রশিল্পে শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন সংবাদপত্রের মালিকেরা। মোটাদাগে তিনটি প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। প্রস্তাবগুলো হলো নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা; আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা; সংবাদপত্রশিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে করপোরেট কর অবলোপন করা বা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নির্ধারণ করা।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতারা এসব সুপারিশ করেন। আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংবাদপত্রের মালিকেরা এ শিল্পের বর্তমান বিভিন্ন সংকটের কথা তুলে ধরেন।

নোয়াব বলেছে, সংবাদপত্রশিল্প সাম্প্রতিক কালে কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মাধ্যমের বহিঃপ্রকাশ এবং অন্যান্য মাধ্যমের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যেমন সংবাদপত্রশিল্পকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে, অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, করপোরেট কর এই শিল্পের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নোয়াব আরও বলেছে, নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হলেও এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর, পরিবহন বিমা ইত্যাদি যোগ করে ল্যান্ডেড ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ।

প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এ কে আজাদ। আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ইংরেজি দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা এখানে এসে বৈঠক করি। সবাই আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হন; কিন্তু বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন থাকে না। বিগত সরকার আমাদের দাবি বিবেচনায় নেয়নি। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই।’ সংবাদপত্রের ওপর শুল্ক-করের চাপ কমানোর দাবি করেন তিনি।

এ কে আজাদ আরও বলেন, এখন ডলারের দাম অনেক বেশি। কয়েক বছর আগে এক টন নিউজপ্রিন্টের (সংবাদপত্রে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট) মূল্য ছিল ৬০০ ডলারের নিচে। এখন তা ৭০০ ডলারের ওপরে। এই দাম ৮০০-৯০০ ডলারে উঠেছিল। এর অন্যতম প্রধান কারণ, টাকা-ডলারের বিরূপ বিনিময় হার। তাঁর মতে, সরকার সংবাদপত্রকে সেবা শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাংবাদিক ছাড়াও মুদ্রণ, বিপণন, বিতরণ, বিজ্ঞাপন ইত্যাদিসহ অনেক মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ শিল্পের অগ্রগতি ও পরিচালনার জন্য শুল্ক ও কর নীতি প্রয়োগে সংস্কার প্রয়োজন।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্রশিল্প গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাঠক কমছে, ছাপা পত্রিকার সংখ্যা কমছে। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে টিকে থাকা প্রয়োজন। এ জন্য বিনিয়োগ দরকার। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি ও সরকারি—এই খাত থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন আসে। কিন্তু ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে শ্লথগতি আছে। গত ১৬ বছরে সরকারের তরফ থেকে সংবাদপত্রগুলো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। একপেশে সিদ্ধান্ত হতো। সংবাদপত্রের ওপর নানা ধরনের আক্রমণ হয়েছে। মামলা হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে।

মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্রশিল্পের ওপর সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট কর আরোপ হয়। কিন্তু কিছু শিল্প খাতে ১২ শতাংশ করপোরেট কর রয়েছে। সংবাদপত্রশিল্পে এত বেশি করপোরেট কর বসানোর কোনো যুক্তি নেই। করপোরেট কর না থাকলেই ভালো; থাকলেও ৫ বা ১০ শতাংশ হতে পারে।

আমদানি পর্যায়ে শুল্কায়নের সময় নিউজপ্রিন্টের নির্ধারিত মূল্য (ট্যারিফ মূল্য) বেশি ধরেন শুল্ক কর্মকর্তারা—এমন অভিযোগ করেন ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শাসমুল হক জাহিদ। তিনি বলেন, যে দামে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করা হয়, এর চেয়ে বেশি দাম ধরে শুল্কায়ন করা হয়। তাই যে দামে আমদানি করা হয়, সেই দামের ওপর ভিত্তি করে শুল্কায়ন করার দাবি জানান তিনি। এ কথা শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান তা সমাধানের আশ্বাস দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, আপনাদের জন্য কিছু করা যায় কি না। আপনাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করব।’ তিনি অগ্রিম কর, আগাম কর (এটি) এসব কমানোর আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো.

আবদুর রউফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব দপত র র শ ল ক কর র রহম ন কম ন র র ওপর সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক-প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে শিক্ষা উপদেষ্টার তাগিদ

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল ইসলাম আবরার। তিনি শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ বিষয়গুলোতে নজর রেখে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে দক্ষতা ও বাস্তবমুখী করা জরুরি। 

মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক নয়, বরং সহায়ক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমিকা রাখবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন ও শিক্ষাক্রমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া গুণগতমান উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে। 

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর প্রক্রিয়া চলমান। এর মাধ্যমে গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাসম্ভব সহায়তা করবে।
উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিয়া ও শিল্পখাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে। আগামীতে এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. সবুর খান অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর করারোপ প্রসঙ্গে বলেন, যে পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে আদায় করা হয়েছে, তা গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য পুনরায় বরাদ্দ করা উচিত। এ অর্থ উদ্ভাবনী গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যয় হলে উচ্চশিক্ষা খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।  

বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের পদ্ধতি প্রসঙ্গে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আবেদীন বলেন, প্রতিটি পদের জন্য ১৫-২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব করতে হয়। সে হিসাবে সহস্রাধিক মানসম্পন্ন অধ্যাপক পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমিতির কোষাধ্যক্ষ কে বিএ ম মঈন উদ্দিন চিশতি বলেন, একটি মানসম্পন্ন ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য কয়েকশ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে জমি কেনার পর ক্যাম্পাস নির্মাণে অর্থের সংস্থান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সরকারি সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য কাইয়ূম রেজা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ