পরিবেশ দূষণ রোধে ৭৫টি ওয়ার্ডে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ‘ক্লিন সপ্তাহ’ অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)।

সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ের ২২ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি এ কার্যক্রম চলবে। 

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ডিএসসিসি জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্লিন সপ্তাহ অভিযানে ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে সড়কের মিড আইল্যান্ড পরিচ্ছন্ন, সড়কে জমাকৃত বালি/মাটি, ঝরা পাতা অপসারণ, সসার ড্রেনের বালি/মাটি অপসারণ, ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ঢাকা/আসাদ/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স

এছাড়াও পড়ুন:

মানব পাচার সিন্ডিকেট

‘আম্মা, আমারে মাফ করছোনি? আম্মা, আমি আর আধাঘণ্টা বাঁচুম। আমারে শরীরে কিতা য্যান দিছে গো। আমি মইরা যাইতেছি।’ এই আর্তনাদ কণ্ঠ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রাসেল মিয়ার, যাকে দু’দিন আগে দালালরা লিবিয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছে। রোববার সমকাল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। 

ভালো জীবনযাপনের আশায় অনেক মানুষ বিদেশ গমন করেন। রাসেল মিয়াও পরিবারের মোড় ঘুরিয়ে দিতে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দালাল চক্র তাঁর সেই স্বপ্ন শুধু মাটিচাপাই দেয়নি; তাঁকে নিষ্ঠুরতম উপায়ে হত্যাও করেছে। দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা দিয়েও বেচারা রেহায় পাননি!

বাংলাদেশে এ ধরনের নিষ্ঠুর, পাশবিক ঘটনা নতুন নয়। দেশে পাচার চক্র গড়ে উঠেছে; সেটিও বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। পাচার চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক মহলের সরাসরি যোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের বেশির ভাগ অবৈধ এজেন্সি রাজনীতিবিদদের মালিকানায়। তাদের কারসাজিতে পাচার চক্রগুলো দিব্যি কাজ করে। যেখানে রাজনীতিবিদরা সরাসরি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, সেখানে সমস্যা নিরসনের ব্যাপারটি অলীক ছাড়া আর কী! 

গত বছর সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় দেশের সিন্ডিকেট নিয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছিল, যেখানে স্বয়ং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘হাসিনার ইচ্ছায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট’। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠাতেন। এর পেছনে রয়েছে অন্তত ২০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। এসব ঘটনায় বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধানে নতুন করে মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজার খুলে দিয়েছে। 

মূলত রাসেল মিয়ার সঙ্গে যে পাশবিক ঘটনা ঘটেছে, তার বন্দোবস্ত আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই বিদ্যমান। দেশের ভেতরে-বাইরে যে পাচার চক্র সক্রিয়, তার গোড়ার সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবেই। ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় অবৈধ এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে বহু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এখন দরকার এজেন্সিগুলোর মালিকদের বিচারের মুখোমুখি করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশযাত্রায় সহজ প্রক্রিয়ার বন্দোবস্ত করা। 

অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যেমন বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য ভিআইপি সেবা চালু। আমাদের এখন দরকার বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি খরচ সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসা এবং সরকারি-বেসরকারি এজেন্সিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। 

মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে শ্রমিক পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সংকট স্থায়ীভাবে নিরসন করা সম্ভব নয়। টেকসই সমাধানের জন্য দেশের মধ্যেই মৌলিক পুনর্গঠন আবশ্যক। বিপুলসংখ্যক তরুণকে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেলে তাদের বিদেশ পাড়ি দিতে হতো না। গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে সেই সম্ভাবনা কিছুটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু স্রেফ নির্বাচনের কথা বলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধারক-বাহকরা সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই রাসেলের মতো অসংখ্য মানুষের বিদেশ গমন নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। 
বাংলাদেশ ১৭/১৮ কোটি মানুষের দেশ। কিন্তু কর্মসংস্থানের অভাবে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের শক্তি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমান। রাষ্ট্রের দিক থেকে এটা আমাদের জন্য যেমন লজ্জাজনক, তেমনি তা অক্ষমতা ও ব্যর্থতা হিসেবেই তুলে ধরে। নিঃসন্দেহে প্রবাসীদের রক্ত ও ঘামের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও ধসে পড়েনি। কেবল এ খাত বন্ধ হলেই দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে পড়বে।

ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল 
iftekarulbd@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ