সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানির অপসারণের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ‘বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ’ নামে একটি সংগঠন।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এফডিসি প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন ‘বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ’ কমিটির উপদেষ্টা, চিত্রনায়ক, পরিচালক ও প্রযোজক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল।

সংবাদ সম্মেলনে উজ্জল বলেন, “এফডিসিতে প্রশাসনিক কাজে যদি কোনো প্রশাসক আসে, আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। কারণ এটা সরকারি জায়গা, একটা লোক চাকরি করতে আসবে, সে আসতেই পারে। এখানে চাকরি করতেই পারে। কিন্তু আপনি এমন একজনকে পাঠাচ্ছেন, যিনি অজ্ঞাতনামা আসামি আমাদের চোখে, আমরা তাকে চিনি না, জানি না, আমাদের ওপর আপনারা চাপিয়ে দেবেন, সেটা হবে না। আমরা সেটা প্রতিহত করব।”

আরো পড়ুন:

নব্বইয়ের শেষে যারা জন্মেছে, তারা ‘খিচুড়ি’ ভাষার মধ্যে বড় হয়েছে: পরমব্রত

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নাবিলাকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না: জয়

মাসুমা রহমান তানিকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে পরিচালক ও বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক বদিউল আলম বলেন, “আমরা বলছি না, আমাদের পছন্দের কাউকে এফডিসির এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। কিন্তু যাকে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাকে অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দক্ষতা থাকতে হবে, চলচ্চিত্র সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে আমরা দেখছি এখন ফ্যাসিস্ট ও আওয়ামী দোসরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন সময়ে এ রকম একজনকে এফডিসির এমডি করা হয়েছে শুনে আমরা সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। এফডিসির ক্ষতি হতে হতে প্রতিষ্ঠানটি আজ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে প্রাণসঞ্চার করতে হলে একজন যোগ্য লোককে এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। তাই আমরা সবাই এক হয়েছি।”

বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলমের সভাপতিত্বে এফডিসি ফটকে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, চিত্রনায়ক হেলাল খান, শিল্পী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরমান, অভিনয়শিল্পী এ বি এম সোহেল রশিদ, কেয়া চৌধুরী, শারমিন, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, শাওন আশরাফ, শফিকুল ইসলাম, কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার কাসেম আলী, ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে মাসুমা রহমান তানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সালেহ মো.

মাহফুজুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন অ্যাক্ট, ১৯৫৭ এর ধারা ৯ ও ৯ (ডি) অনুযায়ী মাসুমা রহমান তানিকে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে তিন বছর মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো। এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মাসুমা রহমান তানি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি নাটকও নির্মাণ করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় তার নির্মিত ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ সিনেমা। এতে অভিনয় করেছেন সাদিকা পারভিন পপি।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র রহম ন ত ন এফড স র আম দ র ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে বড়াল

মুরগি আর গরুর খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বড়াল নদীতে। এর সঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার আবর্জনা ফেলায় দূষণের পাশাপাশি ভরাট হচ্ছে নদী। সমানতালে চলছে পার দখল। এভাবে দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এক সময় প্রমত্ত বড়াল। শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে গেছে। নদীর বুকজুড়ে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। পার দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা।
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া বড়াল মিশেছে যমুনায়। এর মধ্যে চাটমোহর এলাকায় বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে নদীটি। ২০০৮ সালে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠন করা হয়। তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণসংযোগের কারণে সরকার ক্রসবাঁধ অপসারণ করে। তুলে দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। নানান জরিপ, পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনসহ নানা প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়। এর পরও নদীতে প্রাণ ফেরেনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর অনেক স্থান ভরাট হয়ে একাধিক সরু খালে পরিণত হয়েছে। পানি কালচে রং ধারণ করেছে। অনেক স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। নদীর অধিকাংশ স্থানেই এখন পানি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, নদী দখল আর দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর প্রতিবাদে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বড়াল রক্ষার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিল। এর পরও নদী অবমুক্ত কিংবা খননকাজ করার জন্য আজও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কবে উদ্যোগ নেওয়া হবে, তাও কেউ জানেন না। দখল আর দূষণ রোধে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচি নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এভাবে চলতে থাকলে নদী অস্তিত্ব হারাবে বলে মনে করছেন তারা।
বড়াল নিয়মিত দখল আর দূষণ করা হচ্ছে জানিয়ে এলাকার লোকজন বলেন, পানি থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে এলাকায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। এ দুর্ভোগ থেকে সহসা মুক্তিও মিলছে না। এরই মধ্যে নদীপারে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। বড়াল রক্ষায় গড়ে ওঠা কমিটি এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। মাঝেমধ্যে দু-একটা সভায় আন্দোলন জোরদার করার কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন।
বড়াল পারের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও সুজা উদ্দিন বিশ্বাসের ভাষ্য, নদীতে দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা কঠিন। গরু-মুরগির খামারের বর্জ্য এবং পৌরসভা, হাসপাতাল, হাট-বাজারের আবর্জনায় ফেলা হয় বড়ালে। তাদের অভিযোগ, নদী দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরা নানা কারণে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় নদী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী। এরই মধ্যে চাটমোহর নতুন বাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ী নদী দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবোর পরিচালনা পরিষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে নদী দখল করে বাড়ি নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইতোপূর্বে একই অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, পরিমাপ করে নিজস্ব জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছেন। নদীর জায়গা দখল করা হয়নি। অভিযোগ সত্য নয়।
বড়াল নদী দখল আর দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, দূষণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ