পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না করার ঘটনায় নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন আহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তবাংলার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে আহত হওয়া দুজন হলেন দুমকী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম ও সদস্য মতিউর রহমান দিপু। তাঁদের দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন উপলক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে আজ রোববার প্রস্তুতমূলক মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.

) আলতাফ হোসেন চৌধুরীও অংশ নেন। ওই মতবিনিময় সভায় আলতাফ চৌধুরীর সমর্থক দুমকী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম খলিল, সদস্য মতিউর রহমান দিপুকেও আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও তাঁর লোকজনকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়নি।

ওই মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ না করা নিয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সমর্থক ও দুমকী উপজেলা বিএনপির অপর পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম ও সদস্য মতিউর রহমান আহত হন।

এ বিষয়ে দুমকী উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করার কারণে হাতাহাতি হয়েছে, আর কিছুই নয়।’

তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আলতাফ হোসেন চৌধুরী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর ক্যাম্পাসে আগমন সম্পর্কে আমরা উপজেলা বিএনপি কিছুই জানি না।’

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আলতাফ হোসেন চৌধুরী রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে ক্যাম্পাসে আসেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে অবদান থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রস্তুতি বৈঠকে তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে তাঁর উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলে সুস্পষ্ট তথ্য–প্রমাণ এবং অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’

গত ১৩ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম হেমায়েত জাহান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আলত ফ হ স ন চ ধ র ব এনপ র স সদস য ম র রহম ন স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে বড়াল

মুরগি আর গরুর খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বড়াল নদীতে। এর সঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার আবর্জনা ফেলায় দূষণের পাশাপাশি ভরাট হচ্ছে নদী। সমানতালে চলছে পার দখল। এভাবে দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এক সময় প্রমত্ত বড়াল। শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে গেছে। নদীর বুকজুড়ে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। পার দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা।
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া বড়াল মিশেছে যমুনায়। এর মধ্যে চাটমোহর এলাকায় বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে নদীটি। ২০০৮ সালে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠন করা হয়। তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণসংযোগের কারণে সরকার ক্রসবাঁধ অপসারণ করে। তুলে দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। নানান জরিপ, পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনসহ নানা প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়। এর পরও নদীতে প্রাণ ফেরেনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর অনেক স্থান ভরাট হয়ে একাধিক সরু খালে পরিণত হয়েছে। পানি কালচে রং ধারণ করেছে। অনেক স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। নদীর অধিকাংশ স্থানেই এখন পানি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, নদী দখল আর দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর প্রতিবাদে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বড়াল রক্ষার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিল। এর পরও নদী অবমুক্ত কিংবা খননকাজ করার জন্য আজও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কবে উদ্যোগ নেওয়া হবে, তাও কেউ জানেন না। দখল আর দূষণ রোধে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচি নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এভাবে চলতে থাকলে নদী অস্তিত্ব হারাবে বলে মনে করছেন তারা।
বড়াল নিয়মিত দখল আর দূষণ করা হচ্ছে জানিয়ে এলাকার লোকজন বলেন, পানি থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে এলাকায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। এ দুর্ভোগ থেকে সহসা মুক্তিও মিলছে না। এরই মধ্যে নদীপারে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। বড়াল রক্ষায় গড়ে ওঠা কমিটি এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। মাঝেমধ্যে দু-একটা সভায় আন্দোলন জোরদার করার কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন।
বড়াল পারের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও সুজা উদ্দিন বিশ্বাসের ভাষ্য, নদীতে দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা কঠিন। গরু-মুরগির খামারের বর্জ্য এবং পৌরসভা, হাসপাতাল, হাট-বাজারের আবর্জনায় ফেলা হয় বড়ালে। তাদের অভিযোগ, নদী দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরা নানা কারণে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় নদী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী। এরই মধ্যে চাটমোহর নতুন বাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ী নদী দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবোর পরিচালনা পরিষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে নদী দখল করে বাড়ি নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইতোপূর্বে একই অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, পরিমাপ করে নিজস্ব জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছেন। নদীর জায়গা দখল করা হয়নি। অভিযোগ সত্য নয়।
বড়াল নদী দখল আর দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, দূষণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ