রাজনীতিবিদদের কারণে সামনের দিনগুলো আরো খারাপ হতে পারে: আবুল আসাদ
Published: 23rd, February 2025 GMT
ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে রাজনীতিবিদদের মঝে সৃষ্ট বিভেদ নিরসন না হলে সামনের দিনগুলো আগের চেয়েও খারাপ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ।
তিনি বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম দেশ ও জাতির সার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারে। যেটা রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখতে পাই না। তাদের কাছে বড় হলো ক্ষমতায় যাওয়া। অথচ স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারিতা থেকে দেশকে রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব ছিল। যেটা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তরুণ প্রজন্ম তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন।”
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। যে জাতির অতীত ইতিহাস সামনে থাকে না, সে দেশ টিকতে পারে না। যে মূল্যবোধ থেকে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, তা এখন আর নেই। এখন পশ্চিমবঙ্গের লোকজনের ও আমাদের ভাষা, পোশাক ও চিন্তা-চেতনায় কোন স্বকীয়তা নেই। এ কারণেই পশ্চিমবঙ্গের লোকজন দুই দেশের মাঝে কোন সীমান্ত খুঁজে না পাওয়ার কথা বলে আমাদের কটাক্ষ করছে।”
“সেকুলারিজমের নামে আমাদের দেশের কিছু লোক গাছের ডালে বসে গোড়া কাটার মতো কাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাদের কারণেই ভাষার সঠিক ইতিহাস এখনো তৈরি হয়নি। সামনেও এ অবস্থার পরিবর্তন হবে কিনা আমরা নিশ্চিত নই,” যুক্ত করেন আবুল আসাদ।
প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, “আজো কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি প্রাধান্য পাচ্ছে। এমনকি বিসিএস পরীক্ষায়ও যিনি বাংলায় দক্ষ, তাকে বাদ দিয়ে ইংরেজিতে ভালো জানা ব্যক্তির চাকরি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত করতে বাংলা ভাষায় টেক্সট বই ও পত্র-পত্রিকা রচনায় বর্তমান বিপ্লোত্তর সরকারকে অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সভা শেষে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাংলাদেশি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আমি গর্ববোধ করি’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কূটনীতিক হিসেবে চাকরি করাকালীন কোনো এক বিদেশি কূটনীতিক তার শারিরীক গঠন ও চেহারার আকৃতি দেখে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে নয়, বরং ভিন্ন দেশের নাগরিক হিসাবে আখ্যায়িত করতে চাইলে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা তাতে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “আমি নিজেকে বাংলাদেশি হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।”
রবিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ভিন্টেজ কনভেনশন হলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা এমন স্মৃতিচারণ করেন।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “আমি ঐ কূটনীতিকের এমন প্রশ্নের আলোকে আরো বলেছিলাম, যদি আমাদের জীবনে ১৯৫২ ও ১৯৭১ না আসতো তাহলে আমি এখন তোমাদের কেরানি হয়ে থাকতাম। স্বাধীনতা যুদ্ধ হওয়ার কারণেই আজ আমি তোমাদের মতো কূটনীতিক হতে পেরেছি। তাই আমি ধন্য যে আমি বাংলাদেশি।”
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমাদের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সুন্দর মন থাকতে হবে। সবারই নিজের এলাকার প্রতি মায়া থাকতে হবে। সবাইকে আঞ্চলিক প্রীতির মুহূর্তগুলো স্মরণে রাখতে হবে। তবেই আমাদের স্বদেশ প্রেমবোধের পূর্ণতা পাবে।”
সুপ্রদীপ চাকমা আরো বলেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই বলেন লোক দেখানো কোনো কিছু করে নয় বরং আমাদেরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসা, সৌন্দর্য, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যই কাজ করে যাচ্ছি।”
উপদেষ্টা মাতৃভাষার চলচ্চিত্র নিয়ে সুন্দর এমন উৎসব এর আয়োজন করার জন্য এর আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ উৎসবে থাকছে সর্বমোট ১৫টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে চাকমা, মারমা, ম্রো বম, গারো ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র রয়েছে। এ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দেশে প্রথম বারের মতো নির্মিত হয়েছে ম্রো ভাষার চলচ্চিত্র ‘ক্লোবং ম্লা’ বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে গিরিকুসুম। থাকছে খেয়াং ভাষায় দেশে প্রথম বারের মতো নির্মিত চলচ্চিত্র ‘খেতসু’ বা প্রেয়সী। বম ভাষায় দেশে প্রথম বারের মতো নির্মিত চলচ্চিত্র মুনখাত দুত হেন যার বাংলা নাম বন্ধন। নতুন এই তিনটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন ডা. মং উষা থোয়াই এবং পরিচালনা করেছেন প্রদীপ ঘোষ।
বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের নির্মিত ‘রক্তকরবীর খোঁজে নন্দিনী’। এ চলচ্চিত্রে নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছে অবনী মিঠু। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্ট মাস্টার গল্প অবলম্বনে নূর আবসার প্রযোজিত ও শাঁওলি মজুমদার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ঘরে ফেরা’। মৃত্তিকা রাশেদ পরিচালিত কালারস অব হোপ। উৎসবে থাকছে নজমুল মুহাম্মদ পরিচালিত নেকলেস, এস এম শাফিনুর আলম পরিচালিত আচিক ঐক্য, রাশেদুল ইসলাম রনি পরিচালিত নো ল্যান্ড’স টক, মোবারক হোসেন পরিচালিত পৈতৃক ভিটা, ফিদেল দ্রং পরিচালিত ছাতা, পার্থ ফোলিয়া পরিচালিত আরো কিছু দিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, এ বি এম শামসুল হুদা, ডা. দিবালোক সিংহ, ডা. মুশতাক হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান জেলার চিকিৎসক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক ডা. মং উষা থোয়াই। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় শেষ হবে উৎসব।
ঢাকা/হাসান/এসবি