মেহেরপুরে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা সরফারাজ হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এইচ এম কবির হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ড পাওয়া সরফারাজ হোসেন মেহেরপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। গত ৪ আগস্ট মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গত ৭ জানুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এর আগে গত বছরের ২০ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেন সরফারাজের ঠিকাদারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একসময়ের অংশীদার দেবাশীষ বাগচি। ওই মামলায় আজ তাঁর সাজা হলো।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে ফরহাদ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিবেশী দেবাশীষ বাগচিকে অংশীদার হিসেবে নিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন তাঁর ছোট ভাই সরফারাজ হোসেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা কার্যালয়, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৫টি ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেন। ১১টি ঠিকাদারি কাজে দেবাশীষকে অংশীদার হিসেবে রাখেন। পরে দেবাশীষের পাওনা ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক দিয়ে তাঁকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেন সরফারাজ। তবে সরফারাজের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা ছিল না। টাকা তুলতে গিয়ে দেবাশীষ প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে তিনি আদালতে মামলা করেন।

আজ আদালত শুনানি শেষে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করে রায় ঘোষণা করেন। আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এম এ মতিন।

আইনজীবী ইমতিয়াজ বিন হারুন বলেন, আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছেন দেবাশীষ বাগচি। সরফারাজ হোসেন তাঁর কাছে যে চেকটি দিয়েছিলেন, সেই চেক আমলে নেন আদালত। এরপর তাঁর বাড়িতে হামলা ও তাঁকে এলাকাছাড়া করার অপরাধ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী এম এ মতিন বলেন, ‘এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পরিবারে নেমে আশে মহাবিপদ। অথচ এই মানুষগুলোই সারা দিন তাঁদের পাশে থাকত একটু সুবিধা নেওয়ার জন্য।’

আদালত চত্বরে কথা হয় মামলার বাদী দেবাশীষ বাগচির সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা পাওনা টাকা দিতে চাননি। এমনকি আমাকে ছেলেমেয়ে নিয়ে মেহেরপুর ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আজ আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার পর সব কষ্ট হালকা মনে হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড: ৩০ কোটি টাকার ৩০ পয়সাও পাননি ভুক্তভোগীরা

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা। নামটির পরিচিতি ছিল না তেমন, তবে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা জায়গাটির পরিচিতি এনে দেয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।

এ ঘটনায় পরদিন নিহত জুম্মনের ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তখন দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। আশ্বস্ত করা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে। এর কোনোটাই মেলেনি ভুক্তভোগী পরিবারের। উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০ কোটি টাকা সহায়তা দেয় বিভিন্ন ব্যাংক। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতো বড় আলোচিত ঘটনার বিচার তো দূরের কথা, ওই ৩০ কোটি টাকার ৩০ পয়সাও পাননি তারা।

এ দিকে চুড়িহাট্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্ত করে তিন বছর পর ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাইউম।২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়।

ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শিহাবুল ইসলামের আদালতে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন আসিফ উদ্দিন সিয়াম নামে এক ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। আগামি ১৩ এপ্রিল মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। এখন পর্যন্ত ১৬৭ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার বাদী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘‘আশায় আছি সুষ্ঠু বিচারের। কিন্তু দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। অগ্নিকাণ্ডে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বুয়েটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওয়াহেদ ম্যানশন চালু না করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই বিল্ডিং দাঁড়িয়ে গেছে। সাবেক মেয়র তাপস নিজে অনুমোদন দিয়ে ওই ভবন চালু করেছেন। অথচ ছয় বছরেও ন্যায়বিচার তিনি দিতে পারেননি।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা সবসময় মজলুম। বলার কিছু নেই। বাদী হয়ে কোনো লাভবান হইনি। উল্টো হ্যারেজমেন্টের শিকার হয়েছি। অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি টাকা দিয়েছিল। আজ দিবে, কাল দিবে করে আর দেয়নি। সেই ৩০ কোটি টাকা ৩০ পয়সাও পাইনি।’’

আসিফ আহমেদ বলেন, ‘‘তখনকার মেয়র সাঈদ খোকন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে চাকরি দেবেন এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন। কত দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে ছিলাম। চাকরি দিতে পারেননি। দিয়েছেন মাস্টার রোলে চাকরি। অনার্স, মাস্টার্স করা একজন ছেলে মাস্টার রোল কাজ করতে পারে? আমাদের মতো ভুক্তভোগী পরিবারগুলো পথে বসে গেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারালে কী থাকে? তখনকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ঢাক-ঢোল পিটিয় সাংবাদিক এনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে ৫ হাজার টাকা দেন। এই হলো তাদের অবস্থা।’’

‘‘বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ, মামলার বিচারটা যেন সুষ্ঠু হয়। কিছুই তো হলো না। না পেলাম বাবাকে, না পেলাম বিচার। তবুও আশায় আছি সুষ্ঠু বিচারের।’’ বলেন আসিফ আহমেদ। 

অগ্নিকাণ্ডে নিহত ওয়াশি উদ্দিনের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কাউকে কোনো অনুদান দেয়া হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছিল, আমরা কেউ সেই টাকা পাইনি।’’

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ মামলায় চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। আমরা নতুন জয়েন্ট করেছি। সব নথি দেখতে পারিনি। মামলাটা শেষ করা উচিত। যেহেতু দায়িত্ব পেয়েছি পালন করবো যেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পায়।’’

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘‘ এ ঘটনার মামলার বিচার দ্রুত শেষ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক মামলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এ মামলার বিচার নিয়ে তাদের মনোযোগ ছিল না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা আন্তরিক। সাক্ষীদের দ্রুত আদালতে হাজিরের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় আসিফ চকবাজার মডেল থানায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা তাদের ৪র্থ তলা বসতবাড়ীর বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ ক্রয়-বিক্রয়কারীদের নিকট হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নির্মিত ফ্যামিলি বাসায় ফ্যামিলি ভাড়া না দিয়ে অবৈধ দাহ্য পদার্থ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেন। 

মামলার আসামিরা হলেন, ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতিক, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। আসামিরা জামিনে রয়েছেন। 

আসামি ইমতিয়াজ ও জাওয়াদের আইনজীবী শেখ আবু সাইদ বলেন, ‘‘মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। ওরা কিছু জানে না। ঘটনাস্থলেও ছিল না। তারপরও তাদের আসামি করা হয়েছে।’’ 

ভবনের মালিক দুই  ভাই হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার   মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার আইসিসিতে করার দাবি
  • অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্য থেকে কিছুটা বিচ্যুত হচ্ছে: তারেক রহমান
  • নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে: তারেক রহমান
  • মানবতাবিরোধী অপরাধ: জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি মঙ্গলবার
  • খালেদা জিয়ার খালাসের বিরুদ্ধে আবেদনেরর শুনানি ২ মার্চ
  • খালেদা জিয়ার খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদনের শুনানি ২ মার্চ
  • এটিএম আজহারের রিভিউ শুনানি মঙ্গলবার
  • প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল
  • চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড: ৩০ কোটি টাকার ৩০ পয়সাও পাননি ভুক্তভোগীরা