লুট করা মোবাইল সেটের বিনিময়ে গাঁজা নেন তারা: পুলিশ
Published: 23rd, February 2025 GMT
মাদক কেনার জন্যই মূলত ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে আসামিরা। ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সবাই মাদকাসক্ত। বাস থেকে লুট করা একটি মোবাইল সেটের বিনিময়ে গাঁজা নেন তারা। এর সূত্র ধরেই সন্ধান মেলে ডাকাত চক্রের সদস্যদের। নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে থাকেন।
আজ রোববার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারি, ডাকাত দলের সদস্যরা সাভার আশুলিয়া এলাকায় অবস্থান করছেন। এছাড়াও সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি, ওই এলাকার নেশাখোর কিছু যুবক বাসে ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই করে থাকেন। তারা সাভার এলাকার একজন মাদক কারবারির কাছ থেকে নিয়মিত গাঁজা ও হেরোইন কেনেন। গত শুক্রবার বিকেলে সাভারের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের একটি পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে ওই মাদক কারবারিকে আটক করা হয়।
মামলার তদন্তকর্মকর্তা এসআই মো. আহসানুজ্জামান বলেন, ওই সোর্স জানান- শহিদুল, সবুজ, শরীফুজ্জামানসহ কয়েকজনের কাছে প্রতিনিয়ত গাঁজা ও হেরোইন বিক্রি করে থাকেন। পরে ওই সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে সাভারের গেন্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শহিদুল, সবুজ ও শরীফুজ্জামানকে আটক করা হয়। ডাকাতির সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে সাভারের গেণ্ডা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন– মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিত, শরীয়তপুরের জাজিরা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সবুজ এবং সাভার পৌরসভার টান গেণ্ডা গ্রামের শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ। গত শুক্রবার বিকেলে গেণ্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।
গতকাল শনিবার বিকেলে তিনজনকে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন করিমের আদালতে হাজির করা হয়। এর পর দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আহসান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার তিনজনের বরাতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন টাঙ্গাইলের এসপি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে রাজশাহীগামী ইউনিক রয়েল রোড পরিবহন বাসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে তিন-চার ঘণ্টা ধরে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত ২টার দিকে বাসযাত্রী ওমর আলী মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মির্জাপুর থানা পুলিশ ও টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার মডেল থানায় অভিযান চালায়।
গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোনসেট, একটি ছুরি এবং নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার মহিতের বিরুদ্ধে দুটি বাস ডাকাতিসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, আমরা বাসের যাত্রীদের খুঁজে বের করেছি। নারী যাত্রীদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা আমরা আমলে নিয়ে কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ‘টাচে’ যেতে পারে এবং তা শ্লীলতাহানি পর্যন্ত যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার কারণে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোশারফ হোসেন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী বাসযাত্রীরা যখন মির্জাপুর থানায় আসেন, তখন থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন আতিকুজ্জামান। তিনি কোনো কাজ না করে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে বলেন। যাত্রীরা কয়েক মিনিট পর চলে গেলেও ডিউটি অফিসারের কাছে তাদের নাম-ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর ছিল না। এভাবে দায়িত্বে অবহেলা করায় এসপি তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেন। শুক্রবার রাতে আতিকুজ্জামানকে মির্জাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বাদী ওমর আলী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সোহাগ হোসেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ওঠেন। ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও ১০-১২ যাত্রীকে ওঠান চালক। রাত ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাস এলাকায় এসে চা-বিরতির জন্য বাসটি দাঁড় করানো হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখান থেকে আরও তিন-চারজন নতুন যাত্রী উঠিয়ে বাসটি চলতে থাকে। দেড়টার দিকে গাজীপুর হাই-টেক সিটি পার্ক এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ৮-৯ জন হাতে চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং চুপ থাকতে বলে।
এতে বলা হয়, কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় ডাকাত দলের তিন সদস্য গিয়ে চালককে টেনেহিঁচড়ে সিট থেকে ফেলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছয়-সাত ডাকাত চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোদের কাছে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব দিয়ে দে।’ ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়। এ সময় দুই-তিন ডাকাত বাসে থাকা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মালপত্র ডাকাতি করে নন্দন পার্কের সামনে নেমে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনা জানার পর পুলিশ তাদের মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে দেখা করে ডাকাতির বিষয়ে আবহিত করেন। পুলিশ অপেক্ষা করতে বললে কয়েক মিনিট পর চলে যান তারা। নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান যাত্রীরা। পুলিশ গিয়ে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে আটক করে।
জানা গেছে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বুধবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন।
বাদী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতরা অনেক যাত্রীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। যার কাছে যা ছিল, সব নিয়েছে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাসে ৪০ বছরের একজন ও ২০-২১ বছরের এক নারী ছিলেন। তাদের টেনেহিঁচড়ে সবকিছু নিয়েছে ডাকাতরা। এ ছাড়া তারা তাদের শরীরে হাত দিয়েছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাংলাদেশি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আমি গর্ববোধ করি’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কূটনীতিক হিসেবে চাকরি করাকালীন কোনো এক বিদেশি কূটনীতিক তার শারিরীক গঠন ও চেহারার আকৃতি দেখে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে নয়, বরং ভিন্ন দেশের নাগরিক হিসাবে আখ্যায়িত করতে চাইলে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা তাতে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “আমি নিজেকে বাংলাদেশি হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।”
রবিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ভিন্টেজ কনভেনশন হলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা এমন স্মৃতিচারণ করেন।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “আমি ঐ কূটনীতিকের এমন প্রশ্নের আলোকে আরো বলেছিলাম, যদি আমাদের জীবনে ১৯৫২ ও ১৯৭১ না আসতো তাহলে আমি এখন তোমাদের কেরানি হয়ে থাকতাম। স্বাধীনতা যুদ্ধ হওয়ার কারণেই আজ আমি তোমাদের মতো কূটনীতিক হতে পেরেছি। তাই আমি ধন্য যে আমি বাংলাদেশি।”
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমাদের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সুন্দর মন থাকতে হবে। সবারই নিজের এলাকার প্রতি মায়া থাকতে হবে। সবাইকে আঞ্চলিক প্রীতির মুহূর্তগুলো স্মরণে রাখতে হবে। তবেই আমাদের স্বদেশ প্রেমবোধের পূর্ণতা পাবে।”
সুপ্রদীপ চাকমা আরো বলেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই বলেন লোক দেখানো কোনো কিছু করে নয় বরং আমাদেরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসা, সৌন্দর্য, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যই কাজ করে যাচ্ছি।”
উপদেষ্টা মাতৃভাষার চলচ্চিত্র নিয়ে সুন্দর এমন উৎসব এর আয়োজন করার জন্য এর আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ উৎসবে থাকছে সর্বমোট ১৫টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে চাকমা, মারমা, ম্রো বম, গারো ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র রয়েছে। এ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দেশে প্রথম বারের মতো নির্মিত হয়েছে ম্রো ভাষার চলচ্চিত্র ‘ক্লোবং ম্লা’ বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে গিরিকুসুম। থাকছে খেয়াং ভাষায় দেশে প্রথম বারের মতো নির্মিত চলচ্চিত্র ‘খেতসু’ বা প্রেয়সী। বম ভাষায় দেশে প্রথম বারের মতো নির্মিত চলচ্চিত্র মুনখাত দুত হেন যার বাংলা নাম বন্ধন। নতুন এই তিনটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন ডা. মং উষা থোয়াই এবং পরিচালনা করেছেন প্রদীপ ঘোষ।
বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের নির্মিত ‘রক্তকরবীর খোঁজে নন্দিনী’। এ চলচ্চিত্রে নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছে অবনী মিঠু। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্ট মাস্টার গল্প অবলম্বনে নূর আবসার প্রযোজিত ও শাঁওলি মজুমদার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ঘরে ফেরা’। মৃত্তিকা রাশেদ পরিচালিত কালারস অব হোপ। উৎসবে থাকছে নজমুল মুহাম্মদ পরিচালিত নেকলেস, এস এম শাফিনুর আলম পরিচালিত আচিক ঐক্য, রাশেদুল ইসলাম রনি পরিচালিত নো ল্যান্ড’স টক, মোবারক হোসেন পরিচালিত পৈতৃক ভিটা, ফিদেল দ্রং পরিচালিত ছাতা, পার্থ ফোলিয়া পরিচালিত আরো কিছু দিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, এ বি এম শামসুল হুদা, ডা. দিবালোক সিংহ, ডা. মুশতাক হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান জেলার চিকিৎসক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক ডা. মং উষা থোয়াই। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় শেষ হবে উৎসব।
ঢাকা/হাসান/এসবি