নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির একটি খসড়া তৈরি করে নাগরিকদের মতামত চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাড়াহুড়ায় করা প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি দায়সারা হয়েছে। এতে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। বরং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা করবে এবং তারা আরও বেশি মুনাফাভোগী হবে। জনগণের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ বাড়বে।

উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) উদ্যোগে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির একটি খসড়া নিয়ে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ রোববার বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে উপস্থাপন করা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে সব সময় সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যায়। এর ফলে এ খাতের সফলতা অধরা থেকে যাচ্ছে এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালাটি প্রণয়নে সরকার বেশ তাড়াহুড়ো করছে। আগের সরকারের সময় করা খসড়া কিছুটা কাটছাঁট করে এটি তৈরি হয়েছে। সরকারের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালায় আলাদা পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাই সবার আগে জাতীয় জ্বালানি নীতিমালা তৈরি করা দরকার।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক মো.

শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, নীতিমালার খসড়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনাগুলো খুবই অস্পষ্ট। কোন উৎস থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, তা উল্লেখ করা নেই। শুধু কার্বন নিঃসরণ নয়, অর্থনৈতিক বিবেচনাতেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ দরকার। বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তির দাম কমছে। এতে এ খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে আসছে। সরকারের তরফ থেকে শুধু বাস্তবসম্মত নীতি সহায়তা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, সরকার একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে চার বছরের বেশি সময় নিয়েছে। আর মতামত দিতে নাগরিকদের মাত্র ২১ দিন সময় দিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, খসড়া নীতিমালাটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য কমানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ হাজার ১৪৫ মেগাওয়াট (২০%) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট (৩০%) ধরা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল বা অর্থায়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা খসড়ায় নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানিগুলো ১০ বছর সম্পূর্ণ এবং ৫ বছর আংশিক কর অব্যাহতি পেলেও সাধারণ নাগরিকেরা কোনো কর–সুবিধা বা প্রণোদনা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে অন্যান্য দেশে ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনে সরাসরি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমন কোনো সুবিধা রাখা হয়নি।

ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের সমন্বয়কারী বারিশ হাসান চৌধুরী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার সংজ্ঞাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর। এতে কার্বন নির্গমন হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছে, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এই নীতিমালা একধরনের দিকনির্দেশনাহীন নৌকার মতো, যা বাস্তবে কার্যকর ফল দিতে পারবে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র একট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন করবে সরকার

বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

তিনি জানান, ২০২৭ সালের মধ্যে এ আইন প্রণয়ন করা হবে। ইতিমধ্যে সরকার এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে মরক্কোর মারাকাসে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব সড়ক নিরাপত্তা সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হবে। সরকার ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কৌশলগত কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনা।

জানা যায়, সরকার ২০৩০ সালের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে বিশেষ করে লক্ষ্য ৩.৬ এবং ১১.২ অর্জনের জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩ ও ১১ অর্জনে সড়ক নিরাপত্তার ভূমিকা স্বীকার করেছে।

এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করছে। বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে প্রথম জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা আইন চূড়ান্ত ও অনুমোদন করবে, যা নিরাপদ ব্যবস্থা (সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ) অনুসরণ করে প্রণয়ন করা হবে।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভিত্তিক ডেটাবেইস ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হবে।

২০২৬ সালের মধ্যে একটি গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে, যা ২০২৪ সালের মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নির্দেশিকা তৈরি করবে।

এই সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অ্যানফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক নাজনীন হোসেন, গ্লোবাল রোড সেফটি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গ্রান্টস প্রোগ্রামের ম্যানেজার তাইফুর রহমান, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম, নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ ও সিআইপিআরবি’র ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরীসহ বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা বিধি নেই। তাই এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২৭ সালের মধ্যে একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করবে।

ঢাকা/হাসান/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাহী প্রেসিডেন্ট খুঁজছে বিআইসিএম, মূল বেতন পৌনে ২ লাখ
  • বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানো ও সুদের হার কমানোর দাবি
  • চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার ডিএমটিসিএল কর্মীদের
  • ২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন করবে সরকার