নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২ ডেডলাইন দিয়েছে: সিইসি
Published: 23rd, February 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দুটি ডেটলাইন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে অথবা বড় রিফর্ম হলে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এবার মৃত ভোটার ও নতুন ভোটারের সংখ্যা বাড়বে। আগামী নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা জুন নাগাদ পাওয়া যাবে।’
রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলায় ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন।
নির্বাচন কমিশন সবাইকে নিয়ে ৯১, ৯৬ ও ২০০১-এর মতো নির্বাচন করতে চায় বলে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ.
তিনি বলেন, ‘একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে সবার সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বর্তমান প্রশাসনে যারা আছেন তারা ৯১, ৯৬ ও ২০০১-এর নির্বাচন করেছেন মন্তব্য করে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কোনো অন্যায় চাপ ও অন্যায় সিদ্ধান্ত দেবে না।’
এ সময় নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিতদের আইন অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশনা এবং পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সভায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক, সব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফিরে চায় বিটিআরসি
গঠনের পর থেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। ২০১০ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা খর্ব করে সংস্থাটিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে এই সংস্থা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে। দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিটিআরসি স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফিরে পেতে চাচ্ছে। এ জন্য টেলিযোগাযোগ আইনের সংশোধন বাতিল চেয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিটিআরসি। একই সঙ্গে সংস্থাটি ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইনকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
কী ছিল সংশোধনীতে
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড অধ্যাদেশের মাধ্যমে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড গঠিত হয়। অধ্যাদেশটি ১৯৯৫ সালে সংশোধন করা হয়। ২০০১ সালে প্রণিত হয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন। এই আইনের অধীনে ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিটিআরসি যাত্রা শুরু করে। আইনটি ২০১০ সালে সংশোধনের মাধ্যমে বিটিআরসির ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করা হয়।
২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইনের প্রস্তাবনায় বলা ছিল, ‘যেহেতু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণ এবং টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ন্ত্রণের নিমিত্তে একটি স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা, কার্যাবলি ও দায়িত্ব কমিশনের কাছে হস্তান্তর এবং আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান করা সমীচীন, সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল।’ ২০১০ সালে আইন সংশোধন করে প্রস্তাবনা অংশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘ক্ষমতা’ পরিবর্তন করে ‘কতিপয় ক্ষমতা’ করা হয়।
আইনের ৩১ ধারায় কমিশনের ক্ষমতা বিষয়ে বলা ছিল, কমিশন টেলিযোগাযোগ সেবা বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স প্রদান, তা বাতিল করা, বেতার ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ, টেলিযোগাযোগ সেবার ট্যারিফ, কলচার্জ নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এই ক্ষমতা আংশিক খর্ব করে সংশোধিত আইনে লাইসেন্স দেওয়ার, লাইসেন্স হস্তান্তর বা বাতিল করার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বিধান করা হয়। মূল ১ ধারায় শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন’। ২০১০ সালে এটা পাল্টে করা হয় ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন’। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সেই সময় এ ধরনের আইন সংশোধনের উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিটিআরসির উদ্যোগ
১৬ এপ্রিল বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি পত্র দেয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ খাতে সম্পদের সুষম বণ্টন এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ করা অপরিহার্য, যা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত শতাধিক সদস্য রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করেছে। টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে বিভিন্ন নীতিমালা, নির্দেশিকা, গাইডলাইন ইত্যাদি প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক। কিন্তু ২০১০ সালে সংশোধনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের পূর্বানুমোদন-সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়। এতে লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন এবং ট্যারিফ অনুমোদনসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সংস্কৃতির বিষয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
সংশোধিত আইন ২০১০ দ্রুত বাতিল করার জন্য টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। পাশাপাশি ২০০১ সালের আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী গত শনিবার এক সেমিনারে বলেন, টেলিযোগাযোগ আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত খসড়া
সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সালের আইনের সংশোধনে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২৮৭তম কমিশন সভায়। কমিটি গত জানুয়ারি মাসে একটি সংশোধিত খসড়া কমিশনে জমা দেয়। কমিশন গত ১৩ জানুয়ারি এই খসড়া অনুমোদন করে টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায়। এখন তা মন্ত্রণালয়ে আটকে রয়েছে।
খসড়ায় আইনের ২ ও ১৮ ধারা সংশোধন করে ওটিটি, ডিজিটাল সেবা, ভ্যালু এডেড সার্ভিস ইত্যাদি নতুন প্রযুক্তি ও সেবা-সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পরিবর্তে কমিশন যুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পূর্বানুমোদনের শর্ত বাদ দেওয়া হয়েছে।