প্রীতমের অফিস থেকে ৪০ লাখ রুপি চুরি করে চম্পট, অবশেষে পুলিশের জালে আশিষ
Published: 23rd, February 2025 GMT
বলিউডের সংগীত পরিচালক প্রীতম চক্রবর্তীর অফিস থেকে রুপিভর্তি ব্যাগ চুরি গিয়েছিল। প্রীতমের অফিস কর্মচারী আশিষ সয়াল সেই ব্যাগ নিয়ে পালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। এত দিন পলাতক ছিলেন প্রীতমের অফিসের সেই অভিযুক্ত কর্মচারী। বেশ কয়েক দিন চোর-পুলিশ খেলার পর অবশেষে পুলিশের পাতা জালে ধরা পড়েছেন আশিষ।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রীতমের স্টুডিও থেকে ৪০ লাখ রুপিভর্তি ব্যাগ নিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন আশিষ। পুলিশ জানিয়েছে, চুরি যাওয়া অর্থের ৯৫ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। মুম্বাই পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির থেকে উদ্ধার করেছে ৩৬ লাখ ৯১ হাজার রুপি, একটি ল্যাপটপ ও আইফোন। ট্রানজিট রিমান্ডে আশিষকে মুম্বাইতে এনেছে পুলিশ। জানা গেছে, পুলিশকে ধোঁকা দিতে অভিযুক্ত চুরি করার পর বেশ কয়েকবার স্থান বদল করেছেন, আর প্রায় ১০ ঘণ্টার মতো হেঁটেছেন। প্রায় ২০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে পুলিশ অবশেষে চোরের নাগাল পেয়েছে।
পুলিশ জানতে পেরেছিল, অভিযুক্ত কর্মচারী জম্মু-কাশ্মীরে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। হোটেল ও রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ খোঁজ পেয়েছে যে জম্মু-কাশ্মীরের সাম্বা জেলায় আছেন আশিষ। সাম্বা জেলার সাম্বা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে তাঁর লোকেশন পেয়েছিল তারা। পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের এক করে তাঁদের অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধের কথা বলেছিল। এরপর স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় মনোহর গোপালা গ্রাম থেকে আশিষকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে চুরি করা রুপিতে একটি আইফোন কিনেছেন অভিযুক্ত কর্মচারী।
৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা নাগাদ চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল। ওই সময় এক প্রযোজনা সংস্থার কর্মচারী গোরেগাঁওতে প্রীতমের সংগীত স্টুডিওতে গিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি প্রীতমের ব্যবস্থাপককে একটি ব্যাগে করে ৪০ লাখ রুপি দিয়েছিলেন। লেনদেনের সময় আশিষ সয়াল উপস্থিত ছিলেন। প্রীতমের ব্যবস্থাপক রুপিভরা ব্যাগ সেখানে রেখে গিয়েছিলেন। পরে এসে তিনি দেখেন যে ব্যাগটি গায়েব। আশিষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন অভিযুক্ত আশিষ।
আরও পড়ুনসিমলা, মনীষাদের অসম প্রেমের এই ৭ সিনেমা দেখেছেন কি১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এরপর তাঁর পুরো সন্দেহ গিয়ে পড়ে আশিষের ওপর। প্রীতমের ব্যবস্থাপক পুলিশকে পুরো ঘটনাটি জানান। আর আশিষের নামে মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি। পুলিশ এরপর আদাজল খেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরার কাজে নেমে পড়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অফ স
এছাড়াও পড়ুন:
গাঁজা সেবন করে ধর্ষণের পরিকল্পনা, আদালতে স্বীকারোক্তি
প্রবাসী বাবার খালার (দাদি) বাড়ি পাশের গ্রামে হওয়ায় প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করতো মেয়েটি। দাদির বাড়িতে মাঝেমধ্যে রাতেও থাকতো। পহেলা বৈশাখের দিন বিকেলেও দাদির বাড়িতে সেমাই খাওয়ার কথা বলে বের হয়। পরদিন সকালে মেয়েকে আনতে যান মা। কিন্তু তাকে আর পায়নি। দাদির ভাষ্য, আগের দিনই সে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছে। এরপরই উদ্বিগ্ন হয়ে মাসহ স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন শিশুটিকে। একপর্যায়ে খোঁজ মেলে শিশুটির। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে প্রাণ নেই। এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে মুখ ঝলসানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, পহেলা বৈশাখের দিন দাদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে চার কিশোরসহ পাঁচজন। পরে শ্বাসরোধ করে ঘাড় মটকে হত্যা নিশ্চিতের পর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে মরদেহ ফেল চলে যায়। এরপর বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে তারা।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।
শিশুটির বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহরে। দুই উপজেলার দুটি গ্রামই পাশাপাশি। শিশুটির বাবা মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সে স্থানীয় একটি ক্যাডেট মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাকে একটি কলাবাগানে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে যায় পাঁচজন। ঘটনার পর শিশুটির মা চাটমোহর থানায় মামলা করেন। পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খাঁনের নির্দেশে ওসি মনজুরুল আলমে নেতৃত্বে এসআই আওলাদ হোসাইনসহ অন্যরা তদন্ত শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন শিশুটি হত্যার পেছনের ঘটনা।
আজ রোববার চাটমোহর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান ওসি মঞ্জুরুল আলম। চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা এবং ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। গ্রেপ্তার চার কিশোরের বাড়ি চাটমোহর ও বড়াইগ্রামে। তাদের সবার বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছর। অপর আসামি বড়াইগ্রামের তরুণ সোহেল রানা (২৫)।
স্থানীয় এক ব্যক্তি ভুট্টা ক্ষেতে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চাটমোহর থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরের চারদিনে গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।
এরইমধ্যে অপর এক কিশোর শিশুটির বাড়ির পাশে আমগাছের আড়ালে অপেক্ষায় ছিল। মেয়েটি বাগানে আম কুড়াতে ও খেলতে গেলে তার হাত ধরে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায় সে। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা চারজন তাকে একে একে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক কিশোর ধর্ষণ করে। এরপর তার পরনে থাকা প্যান্ট গলায় বেঁধে এক কিশোর শ্বাসরোধে হত্যা করে। সোহেল তার ঘাড় মটকে দেয়। অপর কিশোর পা ধরে রাখে। এরপর আরেক কিশোর তার মুখে এসিড জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে। ডিএনএ সংরক্ষণ ও পরীক্ষাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চাটমোহর থানার ওসি বলেছেন, ঘটনার পর থেকে চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ হত্যার কারণ উদঘাটনে কাজ শুরু করে। চার দিনের মধ্যে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের রোববার পাবনার আদালতে তোলা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।