দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক: জনপ্রশাসন সচিব
Published: 23rd, February 2025 GMT
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেছ উর রহমান।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব এ কথা জানান।
মো. মোখলেছ উর রহমান বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে, যেমন- ওএসডি হয়েছে, বাধ্যতামূলক অবসর হয়েছে। আর এটা বলা হয়েছে, তারা এমন ঘৃণ্য অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন, আমাদের কলিগদের সম্পর্কে অনেক কথা বাজারে আছে। চার কোটি, পাঁচ কোটি, ৩০ কোটি এমন আছে। আমরা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এবং আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে যদি দেখি সত্যি সত্যি ঘটনা আছে, শুধু সেই কেসগুলো আমরা দুদকে পাঠাব।’’
তিনি বলেন, ‘‘যাদের নামে অপপ্রচার কিংবা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না, এ রকম কিছুই করেনি; সাময়িক ওএসডি হয়েছেন, তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। এখানে সরকার বায়াসড না, সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজটা করবে। যেন একজনও নিরীহ কর্মকর্তা কোনো সাজা বা অসম্মানিত না হন।’’
‘‘২০২৪ সালের ভোটের দায়িত্ব পালনকারীদের তথ্য আমরা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠিয়েছি, সেগুলো আসলে আমরা বিবেচনা করবো। আপনারা জানেন, চারজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটিতে এগুলো বিশ্লেষণ হবে। বায়াসড কিংবা কোনো কিছুর বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। সব সিদ্ধান্ত হবে নিয়মনীতির মাধ্যমে হবে’’ বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের আমলের বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে ৬৫ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া এবং ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইডির চেয়ার দখলের ঘটনায় আরও দুই প্রকৌশলী বরখাস্ত, থানায় মামলায়
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলামকে বের করে দিয়ে চেয়ার দখলের ঘটনায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার পর আরও দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামানকে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৫ মার্চ রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় একটি মামলাও হয়েছে। মামলা পর থেকে অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সই করা পৃথক অফিস আদেশে বাধ্যতামূলক অবসর ও বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত দুই কর্মকর্তা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা ও সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। বরখাস্ত হওয়া সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জে কর্মরত। তিনি কোনো অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থল থেকে রাজশাহীতে চলে এসেছিলেন। অতিরিক্ত সচিবকে হেনস্তার সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামানকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে ওই ঘটনার জন্য ভর্ৎসনা করা হয়। আসাদুজ্জামানে ইন্ধনে ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটনার পরও তিনি কিছু বহিরাগত ব্যক্তি দিয়ে মানববন্ধনসহ নানা ষড়যন্ত্র করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংস্থার প্রধান হিসেবে এ বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
বিএমডিএর ইডি শফিকুল ইসলামকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দপ্তর ছাড়তে পারছিলেন না। এর মধ্যে ২৩ মার্চ দুপুরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে ইডির দপ্তরে ঢুকে পড়েন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান। তারা তাকে জোরপূর্বক দপ্তর ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। পরে অফিস আদেশ ছাড়াই ইডির চেয়ারে বসে পড়েন জাহাঙ্গীর আলম খান।
ঘটনার পরপরই কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম এবং ২৫ মার্চ রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেন।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়ায় বিএমডিএ থেকে তিনি অবমুক্ত হতে পারছিলেন না। রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে তার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে বিএমডিএ ছেড়ে যেতে চাপাচাপি করছিলেন।
তিনি তাদের রিলিজ স্লিপ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি। এমনকি অফিস ত্যাগ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে ৩০ মিনিট সময় চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। এ সময় জোর করে তার থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদী, সহকারী মেকানিক মো. আপেল, মেহেদী হাসান, গুদামরক্ষক মো. নুরুজ্জামান, মজিবুর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম খান, ক্যাশিয়ার শফিকুল ইসলাম, গাড়িচালক মো. শাহাবুল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শমসের আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা আত্মগোপন আছেন। অফিসও ছুটি হয়ে গেছে। এ জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে আহ্বায়ক ও উপসচিব মো. মনিরুজ্জামানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। অন্য চার সদস্যের মধ্যে আছেন বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মো. জাফরুল্লাহ। কমিটিতে জেলার একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখতে বলা হয়েছে।
বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের পদটি একটি প্রশাসনিক পদ, যা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু তাকে চেয়ার থেকে টেনে নামানো এবং সেই চেয়ার দখল করা চাকরিবিধির গুরুতর লঙ্ঘন। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দরকার ছিল। তদন্তের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম খানের অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা আশা করছেন।