পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা: চিফ প্রসিকিউটর
Published: 23rd, February 2025 GMT
পতনের কিছুদিন আগে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে গিয়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। যার প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
আজ রোববার আদালতে পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর। খবর বাসসের
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, “নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ”। অর্থাৎ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলির কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদের জানিয়েছেন। এর তথ্য প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।’
এ সময়, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই–আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের যে সন্তানেরা শহীদ হয়েছেন, তাদের মৃতদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেওয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহীদ হয়েছেন, তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে—এই কথাটিও লিখতে দেওয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে—এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহীদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা–আক্রমণ করেছে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই? আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে, সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দ্রুত শহীদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে, কী ধরনের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল!’
শেখ হাসিনার এমন নির্মমতার প্রমাণগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই–বাছাই ও ফরেনসিক করার পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত জ ল ইসল ম ত জ ল ইসল ম আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৭, আহত ২৯
ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ রবিবার (১৩) রাতের হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৯ জন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সানার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রবিবার রাতে রাজধানীর কাছে একটি সিরামিক কারখানায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে ৭ জন নিহত এবং আরো অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু এবং একজন নারী রয়েছেন। নিহতরা কারখানার শ্রমিক এবং এর পাশের বাড়ির বাসিন্দা।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প
মার্কিন দূতাবাসের কড়া বার্তা
যে কারণে কখনো যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারবেন না
এদিকে হুতিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজ্জাহ গভর্নরেটের আকাশসীমায় একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
হুতিদের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজ্জাহ গভর্নরেটের আকাশসীমায় এমকিউ-৯ মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী গত ১৫ মার্চ থেকে হুতিদের ওপর বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে হুতি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে ইরান সমর্থিত হুতিরা। ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।
এরপর হুতিদের থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হামলা শুরু হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে আবারো হুতিদের ওপর হামলা জোরদার করার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ফিরোজ