ঢাকায় প্রথম কবে তেহারী বিক্রি হয়েছে?—এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই অজানা। এ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের গল্পকথা। তবে অনেকেই মনে করেন ঢাকার প্রথম তেহারীর দোকান হচ্ছে ‘ফেকুর তেহারীর দোকান’। পুরান ঢাকায় এই দোকানে পাকিস্তান আমল থেকেই তেহারী বিক্রি হয়। এই দোকানের এক প্লেট তেহারী এক সময় আট আনায় পাওয়া যেত।
যতদূর জানা যায়, ১৯৬৫ সালের আগে থেকেই তেহারী বিক্রি করা হতো ফেকু হাজীর দোকানে। সে সময় পুরান ঢাকায় অনেক মোরগ পোলাও বা কাচ্চির দোকান থাকলেও ছিল না একাধিক তেহারীর দোকান। পুরান ঢাকার লোকদের মতে ফেকুর তেহারীর দোকানই ঢাকার সর্বপ্রথম তেহারীর দোকান। স্থানীয়দের কাছে খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এই তেহারী। কিন্তু ফেকু হাজীর মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা ১৯৯০ সালের দিকে দোকানটি বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে ২০০৫ সাল থেকে আবার তেহারী বিক্রি শুরু হয়। পুরনো রন্ধনশিল্পীকে নিয়োগ দেওয়া হয় তেহারী রান্নার কাজে। কিন্তু দোকানের নাম পাল্টে যায়। এর নামকরণ হয় ‘সফর বিরিয়ানি’। নামে আলাদা হলেও এই দোকানের সিগনেচার আইটেম তেহারী। ‘ফেকুর তেহারী’ দোকানের এক রন্ধনশিল্পী আব্দুল আজিজ এই নতুন দোকানে তেহারী রান্নার দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল আজিজ কত বছর ধরে তেহারীর দোকানে কাজ করছেন তা ঠিকভাবে বলতে পারেন না। তার ভাষ্যমতে, এই তেহারী যখন ৩ ও ৬ টাকা প্লেট বিক্রি হতো সে সময় থেকেই সেই দোকানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি এবং এখানে সর্বনিম্ন তেহারীর প্লেট ছিল আট আনা।
তিনি জানান, একসময় কলাপতায় বিক্রি হতে তেহারী। সে সময় সকালে বিক্রি শুরু হলেও দশটা থেকে এগারোটার ভেতরে দুই থেকে তিন ডেক তেহারী শেষ হয়ে যেত।
সে সময়কার স্মৃতি উল্লেখ করে আব্দুল আজিজ আরও বলেন, ‘‘সে সময় ঢাকাতে গ্যাসের প্রচলন ছিল না রান্না হতো লাকড়ির চুলায় এবং সে সময় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় হতো।
দোকানের নাম সফর বিরিয়ানি হলেও এই দোকানে পাওয়া যায় না কোন বিরিয়ানি। তেহারীর চাহিদা বেশি থাকায় শুধুই তেহারী রান্না করা হয়। আধা প্লেট তেহারীর দাম ১২০ টাকা। গরুর মাংসের এই তেহারীতে ছয় সাত টুকরো মাংস থাকে, সঙ্গে থাকে আলু। পরিবেশন করা হয় লেবু ও সালাদ দিয়ে। এই দোকানে রয়েছে ১০-১২ জনের বসার ব্যবস্থা। প্রতিদিন বিক্রি হয় দুই ডেক তেহারী।
রাইজিংবিডির সাথে কথা হয় ফেকু হাজির শ্যালক সাওকাতের। তিনি বলেন, ‘‘ফেকু হাজী আমার দুলাভাই ছিলেন। তার সময়ে এই দোকানে তেহারী খাওয়ার জন্য নারিন্দা রোডে ভীড় জমতো। সে সময়কার ঢাকার যে কেউ ফেকুর তেহারী বললে এক নামে চিনে যেতেন।’’
দোকানের নাম সফর বিরিয়ানি হলেও মানুষের মুখে মুখে এখনও ফেকুর দোকান নামেই পরিচিত। এই দোকানের তেহারী খেতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে ২৩/১ নারিন্দা রোডে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্ত্রীর মৃত্যু
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুরকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা আরা মাহমুদ মারা গেছেন।
রোববার সন্ধ্যা ৬টা ২৫মিনিটে রাজধানী ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডে নিজের বাসায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
সারা আরা মাহমুদ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের সাবেক পরিচালক। তিনি অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী শিমুল ইউসুফের বড় বোন।
শহীদ আলতাফ মাহমুদ ও সারা আরা মাহমুদের একমাত্র সন্তান শাওন মাহমুদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেন, মা নাই। চলে গেছে। শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর স্ত্রী সারা মাহমুদ আজ সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন।
তিনি ফেসবুকে লিখেন, আগামীকাল বাদ যোহর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। ভাষার মাসেই চলে গেলেন তিনি।
শাওন মাহমুদ সমকালকে বলেন, জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে মায়ের হিপ রিপ্লেসমেন্ট অপারেশনটি সফল ভাবে সম্পন্ন হয়। পরবর্তী সময়ে প্রায় দশদিন মাকে নিয়ে হাসপাতাল থাকতে হয়েছিল। এরপর থেকে বাসাতেই শয্যাশায়ী ছিলেন। তবে গত চারদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আজ সন্ধ্যায় দুই চামচ স্যুপ খাওয়ানোর পর বললেন- লাইট অফ করে দিতে। আমি লাইট অফ করে বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম। ঘরে ফিরে দেখি মা নেই। ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যেই মা চলে গেলেন।
তিনি জানান, সোমবার নুরনগর জামে মসজিদে যোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলেও জানান শাওন মাহমুদ।