Risingbd:
2025-03-26@07:43:30 GMT

আট আনার ‘ফেকুর তেহারী’ এখন কত?

Published: 23rd, February 2025 GMT

আট আনার ‘ফেকুর তেহারী’ এখন কত?

ঢাকায় প্রথম কবে তেহারী বিক্রি হয়েছে?—এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই অজানা। এ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের গল্পকথা। তবে অনেকেই মনে করেন ঢাকার প্রথম তেহারীর দোকান হচ্ছে ‘ফেকুর তেহারীর দোকান’। পুরান ঢাকায় এই দোকানে পাকিস্তান আমল থেকেই তেহারী বিক্রি হয়। এই দোকানের এক প্লেট তেহারী এক সময় আট আনায় পাওয়া যেত।  
 
যতদূর জানা যায়, ১৯৬৫ সালের আগে থেকেই তেহারী বিক্রি করা হতো ফেকু হাজীর দোকানে। সে সময় পুরান ঢাকায় অনেক মোরগ পোলাও বা কাচ্চির দোকান থাকলেও ছিল না একাধিক তেহারীর দোকান। পুরান ঢাকার লোকদের মতে ফেকুর তেহারীর দোকানই ঢাকার সর্বপ্রথম তেহারীর দোকান। স্থানীয়দের কাছে খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এই তেহারী। কিন্তু ফেকু হাজীর মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা ১৯৯০ সালের দিকে দোকানটি বন্ধ করে দেয়। 

পরবর্তীতে ২০০৫ সাল থেকে আবার তেহারী বিক্রি শুরু হয়। পুরনো রন্ধনশিল্পীকে নিয়োগ দেওয়া হয় তেহারী রান্নার কাজে। কিন্তু দোকানের নাম পাল্টে যায়। এর নামকরণ হয় ‘সফর বিরিয়ানি’। নামে আলাদা হলেও এই দোকানের সিগনেচার আইটেম তেহারী। ‘ফেকুর তেহারী’ দোকানের এক রন্ধনশিল্পী আব্দুল আজিজ এই নতুন দোকানে তেহারী রান্নার দায়িত্ব পালন করেন। 

আব্দুল আজিজ কত বছর ধরে তেহারীর দোকানে কাজ করছেন তা ঠিকভাবে বলতে পারেন না। তার ভাষ্যমতে, এই তেহারী যখন ৩ ও ৬ টাকা প্লেট বিক্রি হতো সে সময় থেকেই সেই দোকানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি এবং এখানে সর্বনিম্ন তেহারীর প্লেট ছিল আট আনা।

তিনি জানান, একসময় কলাপতায় বিক্রি হতে তেহারী। সে সময় সকালে বিক্রি শুরু হলেও দশটা থেকে এগারোটার ভেতরে দুই থেকে তিন ডেক তেহারী শেষ হয়ে যেত।

সে সময়কার স্মৃতি উল্লেখ করে আব্দুল আজিজ আরও বলেন, ‘‘সে সময় ঢাকাতে গ্যাসের প্রচলন ছিল না রান্না হতো লাকড়ির চুলায় এবং সে সময় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় হতো।

দোকানের নাম সফর বিরিয়ানি হলেও এই দোকানে পাওয়া যায় না কোন বিরিয়ানি। তেহারীর চাহিদা বেশি থাকায় শুধুই তেহারী রান্না করা হয়। আধা প্লেট তেহারীর দাম ১২০ টাকা। গরুর মাংসের এই তেহারীতে ছয় সাত টুকরো মাংস থাকে, সঙ্গে থাকে আলু। পরিবেশন করা হয় লেবু ও সালাদ দিয়ে। এই দোকানে রয়েছে ১০-১২ জনের বসার ব্যবস্থা। প্রতিদিন বিক্রি হয় দুই ডেক তেহারী।

রাইজিংবিডির সাথে কথা হয় ফেকু হাজির  শ্যালক সাওকাতের। তিনি বলেন, ‘‘ফেকু হাজী আমার দুলাভাই ছিলেন। তার সময়ে এই দোকানে তেহারী খাওয়ার জন্য নারিন্দা রোডে ভীড় জমতো। সে সময়কার ঢাকার যে কেউ ফেকুর তেহারী বললে এক নামে চিনে যেতেন।’’ 

দোকানের নাম সফর বিরিয়ানি হলেও মানুষের মুখে মুখে এখনও ফেকুর দোকান নামেই পরিচিত। এই দোকানের তেহারী খেতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে ২৩/১ নারিন্দা রোডে। 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই দ ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থী দল: স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা নিয়ে মোটাদাগে তিন ধরনের অতিশয়োক্তি আছে। এর মধ্যে প্রথমটি এসেছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। দলটি মনে করে, আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধ, তথা স্বাধীনতাসংগ্রামের একমাত্র হকদার। এতে অন্য কারও কৃতিত্ব নেই।

আবার বামপন্থীদের মধ্যে মস্কোপন্থী অংশ দাবি করে, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের পর তাদের অবদানই বেশি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের ‘অভিভাবক’ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, এটা তাদের দাবির পক্ষে বড় যুক্তি।

অন্যদিকে পিকিংপন্থী বামদের ধারণা, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁরাই মুক্তিযুদ্ধের বীজতলা নির্মাণ করেছেন। আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে মিলে যুদ্ধটা অল্প সময়ে শেষ না করলে তাঁরাই এর নেতৃত্বে থাকতেন।

এই তিন পক্ষের বক্তব্যের মধ্যে আবেগ–উচ্ছ্বাস আছে। তবে গণযুদ্ধের প্রকৃতি বুঝতে না পারার ব্যর্থতাও যে নেই, তা বলা যাবে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সব অর্থে একটি গণযুদ্ধ। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে সাধারণ মানুষ কোন নেতা কখন ঘোষণা দিলেন কিংবা কোন দল কত বছর আগে স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম প্রস্তাব রেখেছিল, সেসব বিবেচনা করেনি। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগে পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ সদস্যরা ও পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তরে ইপিআর সদস্যরা যে পাকিস্তানিদের আক্রমণ মোকাবিলা করেছিলেন, সে জন্য তাঁরা কারও নির্দেশের মুখাপেক্ষী ছিলেন না। তাঁদের সূচিত প্রতিরোধ সাধারণ মানুষকেও উজ্জীবিত করেছে। যেখানে কতিপয় ‘দালাল’ ছাড়া গোটা জাতি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সেখানে দলীয় রাজনীতির বিতর্ক তুচ্ছ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কোনোভাবেই চায়নি তাদের যুদ্ধে অন্য কেউ ‘ভাগ’ বসাক। এই মানসিকতার কারণে বামদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে নানা বাধার মুখোমুখি হতে হয়। ভারত সরকারের সঙ্গে সিপিআইএমের ঘনিষ্ঠতার কারণে মস্কোপন্থীরা তবু এ ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে তাঁরা ভারত সরকারের সহায়তা পান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই পিকিংপন্থীরা নানা উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আবদুল হকের নেতৃত্বাধীন ইপিসিপিএমএল এই যুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে নাকচ করে দিলেও দলের বড় অংশ দেশের ভেতরে থেকে সীমিত পরিসরে যুদ্ধ করেছে।

সত্য যে ১৯৪৭ সালের পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বঞ্চনার বিষয়টি বাম–প্রগতিশীলেরাই প্রথমে সামনে নিয়ে এসেছিলেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনেও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আবার ১৯৬০–এর দশকে বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়ন ও মধ্যপন্থী ছাত্রলীগ একযোগেই ’৬২–এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে, যা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা আন্দোলনে রূপ নেয়।

১৯৬০–এর দশকের মাঝামাঝি প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন, পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বিভক্ত হলে জাতীয় রাজনীতিতে বামদের প্রভাব অনেকটা কমে যায়। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে দুই বাম ছাত্র সংগঠনের অগ্রণী ভূমিকা সত্ত্বেও এর সুফল তারা ঘরে তুলতে পারেনি। কিছুদিন না যেতেই পিকিংপন্থীরা নানা উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েন; মস্কোপন্থীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যের আওয়াজ তুলে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান
বিসর্জন দেন।

১৯৭০ সালের যে নির্বাচন এ দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, সেই নির্বাচনে বামদের ভূমিকা ছিল দুর্বল ও বিভ্রান্তিকর। পিকিংপন্থীরা ‘ভোটের আগে ভাত চাই’ বলে তা বর্জন করেন। মস্কোপন্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলেও তাঁরা জাতীয় পরিষদে কোনো আসন পাননি। প্রাদেশিক পরিষদে মাত্র একটি আসন নিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

নির্বাচনের আগে যে বামপন্থীরা আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করতেন, নির্বাচনের পরে তাঁদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগকে ‘নেতা’ মেনে সশস্ত্র সংগ্রামের আওয়াজ তোলেন। বামদের অনেকে মনে করতেন, আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানিদের সঙ্গে আপসরফা করবে এবং যুদ্ধে তারাই নেতৃত্ব দেবে। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদার এক খোলা চিঠিতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায় সময়ক্ষেপণ না করে অবিলম্বে যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানান। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মুজাফ্‌ফর আহমদ প্রমুখের কাছ থেকেও এ ধরনের আহ্বান এসেছিল।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, মার্চের আগে বা পরে দুই বাম শিবিরের নেতারা একে অপরকে আস্থায় নেননি, ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেননি। বরং তাঁরা একে অপরকে সন্দেহ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ মে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি তাদের দলিলে লিখেছে, ‘মাওবাদী তিনটি উপদল বর্তমানে এই সংগ্রামের সমর্থন জানাইতেছে। ইহারা আওয়ামী লীগসহ সকল বামপন্থী শক্তির ঐক্যফ্রন্ট প্রয়োজনের কথা বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইহারা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়া একটা বামপন্থী ফ্রন্ট গঠনে ইচ্ছুক।’ (সূত্র: লাল সালাম: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি: গঠন–সংগ্রাম ১৯৪৭–১৯৭১, মতিউর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

বামপন্থীদের তাত্ত্বিক বিতর্কের পেছনে তৎকালীন ভূরাজনীতিও কাজ করেছে। সে সময় চীনের এক নম্বর শত্রু ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। পিকিংপন্থীরা সে কারণে আওয়ামী লীগের চেয়েও মস্কোপন্থীদের বড় শত্রু মনে করতেন। অন্যদিকে মস্কোপন্থীদের কাছে পিকিংপন্থীরা সব সময়ই ছিলেন বিভ্রান্ত ও হঠকারী।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কোনোভাবেই চায়নি তাদের যুদ্ধে অন্য কেউ ‘ভাগ’ বসাক। এই মানসিকতার কারণে বামদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে নানা বাধার মুখোমুখি হতে হয়। ভারত সরকারের সঙ্গে সিপিআইএমের ঘনিষ্ঠতার কারণে মস্কোপন্থীরা তবু এ ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে তারা ভারত সরকারের সহায়তা পান।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই পিকিংপন্থীরা নানা উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। আবদুল হকের নেতৃত্বাধীন ইপিসিপিএমএল এই যুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে নাকচ করে দিলেও দলের বড় অংশ দেশের ভেতরে থেকে সীমিত পরিসরে যুদ্ধ করেছে। কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি নরসিংদীর শিবপুরে, সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি বরিশালের পেয়ারাবাগানে, ইপিসিপিএমএল থেকে বেরিয়ে আসা নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা যশোরে, ওয়াহিদুর রহমানের অনুসারীরা আত্রাইয়ে ঘাঁটি গড়ে তোলেন। এর বাইরে মোহাম্মদ তোয়াহা-দেবেন সিকদারের নেতৃত্বে একটি অংশ নোয়াখালী অঞ্চলেও যুদ্ধ করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।

পিকিংপন্থীদের প্রধান নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস নিজ দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তিনি ভারত সরকারের অবিচ্ছিন্ন নজরদারিতে ছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। তারপরও তাঁর ব্যক্তিগত উপস্থিতি বামপন্থীদের অনুপ্রাণিত করেছে।

মস্কোপন্থী বাম নেতা-কর্মীরা সিপিআইয়ের সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় ঠাঁই পেলেও প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিবাহিনীতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বাইরে খুব বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে নেওয়া হয়নি। আর মুজিববাহিনী গঠিতই হয়েছিল এই প্রক্রিয়া থেকে বামপন্থীদের দূরে রাখতে। এ বিষয়ে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের হস্তক্ষেপ কামনা করেও খুব একটা লাভ হয়নি।

সেক্টর কমান্ডারদের সবাই অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুব একটা দলীয় বিবেচনা করেননি। খালেদ মোশাররফ ও কাজী নূরুজ্জামানের অধীন মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল বামপন্থী মতাদর্শের। এ অবস্থায় মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে আলাদা গেরিলা বাহিনী গঠিত হয়। এর সদস্যসংখ্যা ছিল ১৯ হাজার। হায়দার আকবর খান রনোর লেখা থেকে জানা যায়, তাঁদের অনুসারী পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন ৩০ হাজার।

বামপন্থীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে সাংবাদিক নূরুল কবীর লিখেছেন, ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সব দল ও গোষ্ঠীই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তারা মুজিবনগর সরকার কিংবা ভারতের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি। থানা ও পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্রই ছিল তাদের প্রধান সম্বল। (বার্থ অব বাংলাদেশ: দ্য পলিটিকস অব হিস্টরি অ্যান্ড দ্য হিস্টরি)

বামপন্থী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর বামদের দুর্বলতার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘এপ্রিলের ১৪ তারিখে চৌ এন লাইয়ের ভাষণের আগে পিকিংপন্থীদের অবস্থান ছিল এমন যে দেশের মাটিতে থেকেই তারা লড়াই করবে, সংগ্রাম করবে। চীনে যেমন একটা ঐক্যফ্রন্ট হয়েছিল, তেমন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট করে তারা একসঙ্গে লড়াই করতে চেয়েছিল। কিন্তু যেই চৌ এন লাইয়ের ঘোষণা এল, চীনপন্থীদের অবস্থান পুরোপুরি পাল্টে গেল।’ (‘কমিউনিস্টরা বাংলাদেশকে জানতেন না’, বদরুদ্দীন উমরের সাক্ষাৎকার, প্রথম আলো, ২৬ মার্চ ২০২৫)

একাত্তরে বামপন্থীরা চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হোক। মুজিবনগর সরকার কোনোভাবে তাতে সায় দেয়নি। তবে যুদ্ধকে সর্বদলীয় মোড়ক দিতে ৮ সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, মুজাফ্‌ফর আহমদ, মনোরঞ্জন ধর, তাজউদ্দীন আহমদ ও খন্দকার মোশতাক আহমদ।

চীন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এ কারণে পিকিংপন্থী বামদের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়নি, যদিও কেউ কেউ ভারতের সিপিআইএমের সহায়তা পেয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক শিবির বাংলাদেশের পক্ষে থাকায় মস্কোপন্থীরা বিশ্বশান্তি পরিষদ, যুব–ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখার সুযোগ পান। সে সময়ে সিপিবির (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি) পক্ষ থেকে ১০০টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে চিঠি লেখা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের মধ্যে যে বিভাজন ছিল, স্বাধীনতা-উত্তরকালে মস্কো-পিকিংনির্বিশেষে সে বিভাজন আরও বেড়েছে। কেউ কেউ আত্মবিলোপের পথেও চলে গেছেন। কোনো জায়গাই শূন্য থাকে না। বামপন্থীদের শূন্যস্থান এখন পূরণ করে চলেছেন ডানপন্থীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ