পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার তরুণ মো. রাসেল মিয়া (২৫)। অবৈধপথে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে তার ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই দালাল চক্রের নির্যাতনে লিবিয়ায় শুক্রবার (২১ ফ্রেরুয়ারি) তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (২২ ফ্রেরুয়ারি) দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে রাসেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার। নিহত রাসেল নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ধরমণ্ডল গ্রামের লাউস মিয়া ও আউলিয়া বেগমের বড় ছেলে।

রাসেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ ভাই–বোনের মধ্যে রাসেল ছিল সবার বড়। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। পরিবারের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে ও স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মোট ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার মাধ্যমে তিনি লিবিয়ায় যান। কথা ছিল লিবিয়া থেকে তাকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। দালাল চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে ভিডিও বাংলাদেশে পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় আরও ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। টাকা দিতে না পারায় দালাল চক্রের সদস্যরা তাকে নির্যাতন করা শুরু করেন। এতে শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। আজ (শনিবার) দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে স্বজনেরা তার মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন।

রাসেলের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন, “আমার জীবনের শেষ সম্বল বসতভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা কয়েক ধাপে টাকা দিছি। আরও টাকা চাইছিল তারা। দিতে না পারায় আমার ছেলেরে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।” 

তিনি বলেন, “লিবিয়ায় যাওয়ার পর ছেলের কপালে জোটে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। মাফিয়া চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আরও ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে ছেলেকে হত্যা করেছে।”

রাসেলের মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানির পর গণমাধ্যমকর্মীরা ধরমণ্ডল গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে তিনি পলাতক। একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় লিলু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ধরমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.

সফিকুল ইসলাম বলেন, “রাসেলকে বাঁচাতে তার পরিবার লাখ লাখ টাকা দিয়েছে। টাকা দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারেনি। যারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। যাতে রাসেলের মতো আর কোনো তরুণের অকালে মরতে না হয়।”

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, “স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে ওই তরুণের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/রুবেল/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

ফুল দিতে যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের ভিডিও করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বিএনপি ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা ওই সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি দৈনিক কালবেলা ও এনটিভি অনলাইনের নাসিরনগর উপজেলা প্রতিনিধি। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার পর উপজেলার শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। রাতে উপজেলা নাগরিক কমিটির ব্যানারে কয়েকজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান। তাঁদের সঙ্গে জি এম সোহেল নামের একজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে ছাত্রলীগ কর্মী অবহিত করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নানসহ স্থানীয় যুবদল-ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা বিরোধিতা করেন। একপর্যায়ে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা সোহেলসহ দুজনকে মারধর শুরু করেন। পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার সময়ও সোহেলকে মারধর করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভিডিও ধারণ শুরু করেন। তা দেখে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে মারধর করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেন।

আহত আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, নাগরিক কমিটির ব্যানারে শহীদ মিনারে আসা দুজন ছাত্রলীগ কর্মীকে বিএনপিসহ যুবদল-ছাত্রদলের নেতা–কর্মী মারধর করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন রড দিয়ে আঘাত করে মারধর শুরু করেন। অকথ্য ভাষায় তিনি গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে বিএনপির এই নেতার নেতৃত্বে যুবদল-ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেন। ক্যামেরা ভেঙে ফেলে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল হান্নানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনাটি শুনেছি। আমি শহীদ মিনারে ছিলাম আর ঘটনা ঘটেছে বাইরে। এ বিষয়ে বশিরই ভালো বলতে পারবেন।’

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে ফুল দিয়ে শহীদ মিনার থেকে চলে যান। পরে নাগরিক কমিটির একাংশের নেতা–কর্মীরা ফুল দিতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী জি এম সোহেলও ছিলেন। তাঁকে দেখে উপজেলা বিএনপি বিরোধিতা করে। যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা হট্টগোল ও হাতাহাতি শুরু করেন। ভিডিও করতে গেলে সাংবাদকি মাহমুদকে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মী মারধর করেন। সোহেল যে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত, সেটির প্রমাণও পুলিশ পেয়েছে। তিনি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নাগরিক কমিটির ২ নম্বর সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘উপজেলায় নাগরিক কমিটির দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি অনুমোদিত ১২৮ সদস্যের কমিটি; আরেকটি বর্ধিত কমিটি। কমিটিতে আওয়ামী পরিবারের ও মতাদর্শী অনেকেই আছেন। সোহেল আওয়ামী লীগ নিয়ে ফেসবুকে অনেক পোস্ট দিয়েছে। সেসব থানার হাজির করা হচ্ছে। সোহেল অনুমোদিত কমিটির সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়েছিল আর আমি প্রেসক্লাবের সঙ্গে ফুল দিতে গিয়েছিলাম।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলভীবাজারের ‘গলফ মাঠ’ এক টুকরা সবুজ ঘাসের দেশ
  • স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে শঙ্কিত ইয়াসমিন
  • ‘আম্মা আমারে মাফ করছোনি আর আধা ঘণ্টা বাঁচুম’
  • লিবিয়ায় দালাল চক্রের নির্যাতনে মৃত্যু, ইতালি যাওয়া হলো না রাসেলের
  • স্ত্রীর সামনে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার নেই
  • স্ত্রীর সামনে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, মামলা পরও গ্রেপ্তার নেই
  • ধামরাইয়ে দিনদুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা
  • জাবিয়ান ফুটসাল কার্নিভাল শুরু
  • ফুল দিতে যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের ভিডিও করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা