আমদানি-রপ্তানিতে ১০ প্রতিষ্ঠান পেল এইও সনদ
Published: 23rd, February 2025 GMT
দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠানকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগ। ফলে এসব কোম্পানি কাস্টমসের প্রক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে।
এই সনদ পাওয়ার ফলে কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশনের পরিবর্তে এইও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আঙিনায় পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে। জাহাজ বা উড়োজাহাজ থেকে কিংবা সীমান্তের অন্যপ্রান্ত থেকে পণ্য খালাস হয়ে সরাসরি চলে যাবে আমদানিকারকের গুদামে। এ ছাড়া বন্দরে পণ্য আসার আগেই বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ শুল্কায়নের কাজ শেষ করা যাবে।
আজ রোববার এনবিআর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে এইও সনদ তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জাভেদ আখতার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
একই অনুষ্ঠানে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এইচএস কোডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যসংবলিত ওয়েবসাইট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট হাব এবং কাস্টমস স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ২০২৪-২৮–এরও উদ্বোধন করা হয়।
এইও সনদ পাওয়া ১০ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, এসিআই গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ স্টিল রিরোলিং মিলস (বিএসআরএম), জিপিএস ইস্পাত, টোয়া পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ডিভাইস বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের এইও বিধিমালার আলোকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে এইও সনদ দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের জুনে নতুন বিধিমালা করা হয়। নতুন এ বিধিমালার আলোকে এখন পর্যন্ত ১০টি প্রতিষ্ঠান এ সনদের শর্ত পূরণ করেছে। আজ তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, এই ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগের বিধিমালার আওতায় সনদ পাওয়াদের থেকে ৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নতুন বিধিমালা মেনে সম্পূর্ণ নতুন দুটি প্রতিষ্ঠান এইও সনদ পেয়েছে। অন্যদিকে, পুরোনো বিধিমালার আলোকে সাতটি প্রতিষ্ঠানের এইও সনদ আছে। তারা নতুন বিধিমালার আলোকে সনদ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। তাতে দুই বিধিমালা মিলিয়ে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের এইও সনদ রয়েছে।
এইও সনদ পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী ও ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের পরিচালক মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। রূপালী চৌধুরী বলেন, কমপ্লায়েন্স অর্জন ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়, যদিও কমপ্লায়েন্স অর্জন করলে দক্ষতা বাড়ে। দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে এইও। আজ যারা এই সনদ পেয়েছে, তারা বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দূত হিসেবে কাজ করতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের সিস্টেমে কিছু লোক সব ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স মানার চেষ্টা করে; আবার কিছু লোক সব জায়গাতেই ফাঁকি দেয়। এটা চলতে পারে না। এ কারণে ভালো প্রতিষ্ঠানের জন্য এইও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা বিশেষ সুবিধা পাবে। ফলে আমরা এখন এইও তথা কমপ্লায়েন্স অর্জনের প্রতিযোগিতা দেখতে চাই।’
আবদুর রহমান খান বলেন, দেশের মোংলা ও পানগাঁও বন্দর দিয়ে অনেক বেশি পণ্য আমদানি হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই দুই বন্দরে পণ্যের চাপ কম থাকায় এখানে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, ভুল-ত্রুটি বেশি বেশি বের করা হয় (কাস্টমস কর্মকর্তারা)। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যের চাপ বেশি থাকে। ফলে অনেক পণ্য যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বের হয়ে যায়। এ কারণে অনেকে মোংলা বা পানগাঁওয়ের পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আনতে উৎসাহী হয়।
আবদুর রহমান খান বলেন, এইও চালুর ফলে পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যের চাপ কমে আসবে। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা আরও সহজ হবে। সমান সুবিধা পেলে মোংলা ও পানগাঁও বন্দরও কম ব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে না।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এইও পুরোপুরি চালু হলে এনবিআর ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় উভয়ের ক্ষেত্রেই চাপ কমবে। সরকারের অন্যান্য সংস্থাও এইও প্রকল্প থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারে।
এইওর সুবিধা
এনবিআরের বিধিমালা অনুযায়ী, এইও সনদধারীরা ১০ ধরনের সুবিধা পাবে। বড় সুবিধা হলো কাস্টম হাউস বা শুল্ক স্টেশনের পরিবর্তে এইও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আঙিনায় পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে। জাহাজ বা উড়োজাহাজ থেকে কিংবা সীমান্তের অন্য প্রান্ত থেকে পণ্য খালাস হয়ে সরাসরি চলে যাবে আমদানিকারকের গুদামে। এ ছাড়া বন্দরে পণ্য আসার আগেই বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ শুল্কায়নের কাজ শেষ করা যাবে।
এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের এইও-সংক্রান্ত মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্টে (এমআরএ) থাকে, তাহলে বাংলাদেশের এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চালান ওই সব দেশের বন্দরেও একই সুবিধা পাবে।
বাংলাদেশ অবশ্য এখন পর্যন্ত কোনো দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করেনি। তবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য ১০০টির বেশি মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্টে (এমআরএ) আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
শুরু ২০১৮ সালে
বাংলাদেশে এইও সুবিধা ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। শুরুতে তিনটি ওষুধ কোম্পানি এইও সনদ নিয়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম চালায়। কোম্পানিগুলো হলো বেক্সিমকো, স্কয়ার ও ইনসেপ্টা। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আরও ৯টি কোম্পানিকে এইও সনদ দেওয়া হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘নাইন-ইলেভেন’ সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বব্যাপী পণ্য নিরাপদ চলাচলের উদ্যোগ নেয় বড় অর্থনীতির দেশগুলো। ২০০৫ সালে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেফ ফ্রেমওয়ার্ক চালু করে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউসিও)। সেখানে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর বা এইও ব্যবস্থা চালুর বিধান রাখা হয়।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাণিজ্য সহায়তা চুক্তি (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) হয়। এতে বাংলাদেশও সই করে। এই চুক্তির ৭ দশমিক ৭ অনুচ্ছেদে এইও ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়। এরপর পাঁচ বছর সময় লেগে যায় এইওর বিধিমালা তৈরি করতে। ২০১৮ সালে এ দেশে এইওর যাত্রা শুরু হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন খ ন ব ধ ম ল র আল ক কমপ ল য় ন স ২০১৮ স ল ক স টমস ন বল ন পর ক ষ অন ষ ঠ র পর ব ব যবস আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তারা কি ফিরিবে আর...
‘যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষালোভী
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণচুমি’
গানের এই চরণগুলো ভেসে আসছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এই গান শুনে মনে প্রশ্ন জাগে, মোহিনী চৌধুরীর কথাগুলো আজ কেন শহীদ মিনারে।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়েছে। ২৫ মার্চ কালরাতের শহীদদের স্মরণে গান গাইছেন একদল শিল্পী। গানটি শেষ হতে না হতেই আবারও তাঁরা গেয়ে উঠলেন—
‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল’
সে সময় তাঁদের চেহারায় মোমবাতির আভা। সেই চেহারায় ফুটে উঠছে নানা দাবি। গোবিন্দ হালদারের গানের কথায় যেন সেই দাবিগুলোই তুলে ধরছিলেন—
‘আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয় বিষাণ
বিদ্যুৎ গতি হউক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল, শত্রু জাল’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ভুলি নাই ভুলি নাই মৃত্যুমিছিল: জেনোসাইড একাত্তর দায়বদ্ধতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মোমবাতি প্রজ্বালন শেষে এভাবেই সব প্রজন্মের কাছে একাত্তরের গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরেন শিল্পীরা। স্মরণ করেছেন কালরাতের শহীদদের।
মোমবাতি প্রজ্বালন ও শহীদ স্মরণের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মোমবাতি প্রজ্বালনের আগে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে আজকের এই আয়োজন করেছি। একই সঙ্গে ২৫ মার্চ কালরাতের নির্মম গণহত্যা আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি লাভের দাবি জানাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়