নিজেদের কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে ফেডারেল কর্মীদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমেইল করতে একপ্রকার হুমকিই দিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইলন মাস্ক তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্টে দিয়ে বলেন, কর্মীদের একটি ইমেইলের জবাব দিতে হবে। সেখানে তারা চলতি সপ্তাহে কী কাজ করেছেন তার ব্যাখ্যা দেবেন, নয়ত তাদের পদত্যাগ করতে হবে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সব কর্মকর্তা এই উদ্যোগের সঙ্গে একমত নন। এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, এই ইমেইলের উত্তর আপাতত না দিতে। তিনি বলেছেন, এফবিআই নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের কর্মীদের কাজ পর্যালোচনা করবে। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্ত‌রও তাদের কর্মীদের ইমেইলের জবাব না দিতে বলেছে।

রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ খবর জানিয়েছে।

সংবাদে বলা হয়েছে, ফেডারেল কর্মীরা এরই মধ্যে একটি করে ই-মেইল পেতে শুরু করেছেন। ওই ইমেইলে তাদের এই সপ্তাহে করা কাজের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিতে বলা হয়েছে। তবে, মাস্কের পোস্টের মতো সেই ইমেইলে সরাসরি পদত্যাগের হুমকি দেওয়া হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের মানবসম্পদ এজেন্সি-অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে কর্মীদের কাছে ওই ইমেইলগুলো পাঠানো হয়েছে।

ইমেইলে কর্মীদের পাঁচটি বুলেট পয়েন্টের মাধ্যমে তাদের কাজের তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। কর্মীদের পাঠানো ই-মেইল তাদের ম্যানেজারদেরও পাঠাতে বা সিসি করতে বলা হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মীরা যেন কোনও গোপনীয় তথ্য, লিঙ্ক বা সংযুক্তি সংযুক্ত না করেন। এছাড়া সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে কর্মীদের ওই ইমেইলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মাস্ক তার পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট @realDonaldTrump-এর নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, শীঘ্রই সমস্ত ফেডারেল কর্মী একটি ইমেইল পাবেন। ইমেইলে কর্মীরা গত সপ্তাহে কী কাজ করেছেন, তা জানানোর অনুরোধ করা হবে। এতেও বোঝা যাবে, আসলেই তিনি কি কাজ করেছেন। কোনো কর্মী ইমেইলের জবাব না দিলে সেটা পদত্যাগ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রদূত টিবর পি.

নাগি কর্মীদের পাঠানো এক ই-মেইলে জানান, দপ্ত‌রের পক্ষ থেকে কর্মীদের হয়ে জবাব দেওয়া হবে। কোনও কর্মী তাদের নিজস্ব দপ্ত‌রের নির্দেশনার বাইরে অন্য কাউকে তাদের কাজের প্রতিবেদন দিতে বাধ্য নন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ফ ড র ল কর ম কর ম দ র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি শিবিরের

দেশে সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা ছাড়াও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি, ইসলাম বিদ্বেষের দায়ে এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন  কমিটির সদস্য রাখাল রাহার গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পৌনে ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও নেতিবাচক রাজনীতি চর্চার অবসান এখনো ঘটেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, আবারো কিছু ছাত্র সংগঠন সেই ফ্যাসিবাদী ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি অবতারণা করছে, যা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট পরিপন্থি। সহস্রাধিক শহীদের জীবন, অগণিত আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সম্প্রীতি ও একতার বাংলাদেশে মানবিকতা, মূল্যবোধ, নাগরিক অধিকার, সুস্থ সংস্কৃতি, সন্ত্রাসমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সব নাগরিকের প্রধানতম কর্তব্য।”

তিনি আরো বলেন, “ছাত্র রাজনীতির মূল মন্ত্র একদল সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরিতে ভূমিকা রাখা। ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন সাধিত হবে এবং দেশ পরিচালনার যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান।”

ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের যত অভিযোগ

গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঘটা সহিংস ঘটনায় ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে শিবির সভাপতি বলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে যে জনাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা কিছু ছাত্র সংগঠনের আধিপত্যনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলদারি, ট্যাগিং ও দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মতো হীন সংস্কৃতি চালু রাখায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতি বিমুখতা তৈরি এবং শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রদলকে তাদের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে। নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তার দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যার প্রবক্তা ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।”

তিনি আরো বলেন, “স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদের টুলসগুলো কিছু ছাত্র সংগঠন ঘোষণা দিয়ে গ্রহণ করেছে। আপনারা দেখেছেন, তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘শিবির কোবানো/কোপানো জায়েজ আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে’ এমন বীভৎস ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা নোয়াখালীতে এমন একজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমরা আশা করব সরকার তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”

“শুধু তাই নয়, কুয়েটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে। খুলনার শিববাড়ীতে তাদের মিছিল থেকে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ স্লোগান দেওয়া হয়। এমন ভয়ংকর, হিংস্র স্লোগান আমরা ছাত্রলীগের মুখে শুনতাম। কিন্তু ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি,” যুক্ত করেন তিনি।

সভাপতি বলেন, “সারা দেশে শত শত জায়গায় চাঁদাবাজি, দখলদারি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে কোন পরিবর্তন হয়েছে। অপরাধীদের হাত বদল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অপরাধ আগের মতোই চলছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি যশোরে চাঁচড়ায় চাঁদা না দেওয়ায় সম্রাট নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর চোখ উপড়ে ফেলে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। গতকাল গাজীপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁদা আদায় করার ঘটনা আপনারা দেখেছেন। প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে।”

কুয়েটের ঘটনায় শিবিরের ব্যাখ্যা

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল ও যুবদলকে দায়ী করেছে শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি কুয়েট, এমসি কলেজ ও গত ২০ ফেব্রুয়ারি তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় যে হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা একটি ছাত্র সংগঠনের নব্য ফ্যাসিবাদ হয়ে ওঠার ধারাবাহিকতারই অংশ। কুয়েটে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রদল যুবদলের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে। যেখানে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়। কিন্তু ছাত্রদল তাদের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব শিবিরের ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে। যার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে যায়।”

তিনি বলেন, “একদিকে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে চেষ্টা করে, অন্যদিকে যুবদল তাদের চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে নিজের সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয়ে যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে তা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিলেটের এমসি কলেজে আঞ্জুমানে তালমীযে ইসলামিয়ার কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনায় দুইজন আহত হওয়ার দায় শিবিরের ওপর প্রদান করে। পরে কলেজ অধ্যক্ষের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পেলে ছাত্রশিবির যে সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তা প্রমাণিত হয়।”

তা’মিরুল মিল্লাত নিয়ে যা বলছে শিবির

তা’মিরুল মিল্লাত মাদরাসার শিক্ষার্থী ও ওয়ার্ড শিবিরের সভাপতি ফজলে রাব্বি সিফাতের ওপর হামলার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করে শিবির সভাপতি বলেন, “কুয়েটে শিক্ষার্থীদের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীতে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতি ফজলে রাব্বি সিফাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। শুধু তাই নয়, জোরপূর্বক নিজেদের পক্ষে স্বীকারোক্তি নিতে একাধিকবার ছাত্রদল কর্মীরা নির্যাতন করে। আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য নিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা থানার সামনে মব তৈরি করার চেষ্টা করে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

জামায়াত নেতার মুক্তি দাবি

কারাগারে আটকে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের মুক্তির দাবি জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে দেশের নানা প্রান্তে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ২৭৩টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।”

জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের ৭২৩ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। অথচ বিগত ১৫ বছরের দায়ের করা মামলার আসামিদেরকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামসহ সব মজলুমদের দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে শিবির সভাপতি বলেন, “সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়ন, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ কেন্দ্র ও রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া রাজশাহীগামী একটি বাসে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আমরা ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রশাসনকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। অথবা নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ে প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে।”

রাখাল রাহার গ্রেপ্তার ও পদত্যাগ দাবি

ইসলাম বিদ্বেষের দায়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

শিবির সভাপতি লেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, মুক্ত চিন্তার নামে এ দেশে ইসলামবিদ্বেষী একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। সেই গোষ্ঠীরই এক ক্রীড়নক রাখাল রাহা আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর শানে চরম অবমাননাকর ও ধৃষ্টতাপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে যা ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের শামিল। আমরা অতিদ্রুত তাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ

কতিপয় মিডিয়া সঠিকভাবে তথ্য যাচাই বাছাই না করেই শিবিরের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এ ছাত্রনেতা। তিনি বলেন, “পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সবার বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তন্ত গণমাধ্যমের ও জাতির বিবেক সংবাদকর্মীদের ভূমিকা অপরিহার্য। জুলাই অভ্যুত্থানে সব পক্ষ এক মোহনায় মিলিত হওয়ার ফলেই আমরা চেপে বসা পাহাড়সম জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশে কতিপয় গণমাধ্যমের অপেশাদার আচরণ আমাদের ব্যথিত করেছে।”

তিনি বলেন, “কিছু কিছু সংবাদ আমাদের কাছে একপেশে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা মনে করি এগুলো মিডিয়ার ইচ্ছাকৃত ভুল নয়, অসাবধানতা বা তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনুসরণ করতে না পারার দরুণ এমনটা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি, বরগুনার পাথরঘাটায় পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবদল কর্মী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। স্থানীয় মিডিয়া এবং পাথরঘাটা বিএনপির আহ্বায়ক উমর ফারুক সেই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীকে দায়ী করে। কিন্তু জাতীয় একটি সংবাদমাধ্যম সেই ঘটনার তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে সংবাদ প্রচার করে।”

তিনি বলেন, “কুয়েটের ঘটনাতেও আমরা লক্ষ করেছি, শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনাতেও কতিপয় সংবাদমাধ্যম উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। এ ছাড়াও আরো একাধিক ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। অথচ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে এ সকল ঘটনার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।”

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ক্যাম্পাস হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক উন্নতির জন্য সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। ধর্মীয় অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

এ সময় তিনি ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনকে বিভাজন সৃষ্টিকারী, দোষারোপ ও সহিংসতা পরিহার করে ছাত্রবান্ধব, গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী রাজনীতির দিকে আহ্বান জানান।

শিবির ৭১ এর মতো ৫২ কেও ধারণ করে না এমন মন্তব্য করেছেন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। এ প্রশ্নের উত্তরে শিবির সভাপতি বলেন, “আমরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম করে থাকি। আজকের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেও ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছি। এরপরও কীভাবে ভাষা আন্দোলনকে ধারণ করা যায়, তা ওনার (নাছির) কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আসবেন আমরা সে অনুযায়ী ধারণ করার চেষ্টা করব।”

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ও ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সিবগাতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম প্রমুখ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ