বারবার স্থগিত হওয়া ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে এই আয়োজন হয়।

কুচকাওয়াজে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের ৫৭ জন ছাড়াও ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের তিনজন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন। প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের পেশাদারত্ব, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানান। থানায় এসে মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও বিশেষভাবে লক্ষ রাখার নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে, সেই চেতনাকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনীর গৌরবকে আরও সমুন্নত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন কর্মকর্তাদের কোনো দলের আজ্ঞাবহ হয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ না করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র সব নাগরিকের। কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়, কোনো সম্প্রদায়ের নয়। বাংলাদেশ পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, যাঁরা সুনির্দিষ্ট আইন মেনে চলেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবে।’

পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশিক্ষণের বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করেন। এবার বেস্ট প্রবেশনার, বেস্ট একাডেমিক ও বেস্ট শুটার হয়েছেন এএসপি রুহুল আমিন লাবু। ফিল্ড অ্যাকটিভিটিস ও ঘোড়সওয়ারে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন এএসপি এম সায়েলিন।

অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

পুলিশ একাডেমিতে ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ এএসপিদের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। গেল বছরের ২০ অক্টোবর প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। গত ২০ অক্টোবর প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু আগের রাতে হঠাৎ করে অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর ২৪ নভেম্বর আবারও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু ১৮ নভেম্বর আবারও তা স্থগিত করা হয়।

পরে গত ১৫ ডিসেম্বর ব্যাচের ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থীর কাছে কৈফিয়ত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘প্যারেডে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটার অভিযোগ আনা হয়। তিন দিনের মধ্যে ওই ২৫ জন জবাব দেন। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে প্রশিক্ষণরত ছয়জন এএসপিকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর আজ প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হলো।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ষ ট র এক ড ম ব স এস অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

কেবল ক্রিকেট বাণিজ্যেই ভারত-পাকিস্তান লড়াই!

ইনস্টাগ্রামের সেই পেইজটার নাম ঠিক মনে নেই। তবে বাবর ও রিজওয়ানদের ছবি পোস্ট করে যে ক্যাপশন দিয়েছে তার ভাষা ছিল এরকম, ‘‘অর্থের শক্তি দেখাল ভারত!’’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিজেদের মাটিতে আয়োজন করেও পাকিস্তান দুবাই গেছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। বিমানবন্দরে রিজওয়ান ও বাবরের সেই ছবি।

ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বাণিজ্য এখন এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে, ভারত পূর্ব দিকে থাকলে বাকি সবাই পশ্চিমে। দুই মেরুতে অবস্থান। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করেছে পাকিস্তান। লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। প্রতিবেশী দেশ ভারত অংশগ্রহণের জন্য সরকার থেকে পায়নি সবুজ সংকেত।

আইসিসির যেকোনো ইভেন্টের সূচি যেখানে তিন মাস আগে ঠিক হয়ে যায় সেখানে ভারতের কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি আটকে থাকে দিনের পর দিন।

এর আগে, এশিয়া কাপ পাকিস্তান বিনা শর্তে মেনে নিলেও এবার তারাও একটু বেঁকে বসে। ভারতকে আসতেই হবে তাদের দেশে নয় তো তারা বাদ! ভাবনা ছিল এরকমই। কিন্তু এই কথা যে, কেবল নিজেদের আলোচনার টেবিলেই ছিল বলাবাহুল‌্য। আইসিসির মিটিংয়েও এমন কথা বলা মানে নিজেদের অবস্থানকেই ছোট করে ফেলা। বাধ্য হয়ে ভারতের হাইব্রিড মডেলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। বাকি সব ম্যাচ পাকিস্তান। আয়োজক পাকিস্তান এক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারত। ভারতের গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারত। তাহলে তাদের ঘরের মাঠেই খেলতে হতো অন্তত গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে উঠলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত।

কিন্তু ওই যে ক্রিকেট বাণিজ্য এমন অবস্থানে যেখানে পাকিস্তান চাইলেও কৌশলী হতে পারবে না। আইসিসি এবং এসিসি বাড়তি লাভের আশায় এখন গ্রুপ পর্বেই ভারত ও পাকিস্তানকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো যদি দুই দল ফাইনাল খেলে তাহলে এর আগ পর্যন্ত নক আউটে মুখোমুখি হতে হবে না। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই যার বড় প্রমাণ। গ্রুপ পর্বে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর আবার তারা ফাইনাল খেলেছিল।

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তারা একসঙ্গে খেলেছিল। এরপর ভারত নক আউট পর্বে গেলেও পাকিস্তান যেতে পারেনি। ফলে তাদের ম্যাচ খেলাও আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও একই কাণ্ড। গ্রুপ পর্বের পর দুই দল আবার সেরা চারে মুখোমুখি। ভারত ফাইনাল খেলতে পারলেও পাকিস্তান পারেনি। এবারও বাণিজ্যিক দিক থেকেই বিবেচনা করে আইসিসি দুই জায়ান্টকে একই গ্রুপে রেখেছে।

সুবিধা হলো একটাই, ক্রিকেট বাণিজ্য। দুই দলের মুখোমুখি লড়াই এখন কেবল মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ। পুরোনো সেই জৌলুস নেই। নেই লড়াইয়ের তীব্র জেদ। খেলোয়াড়রাও সেই উত্তাপ টের পান না। গণমাধ্যম, ব্রডকাস্ট আর দর্শকই সেই উত্তেজনা টিকিয়ে রেখেছেন। সব মিলেই কিন্তু বাণিজ্য। তাইতো দুই দলের ম্যাচের টিকিট দুই ঘণ্টাও অনলাইনে থাকে না। স্টেডিয়ামের বাইরে কালোবাজারিতে বিক্রি হয় চড়া দামে। সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন।

স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। বাকিদের ভরসা টিভি সেট, অনলাইন স্ট্রিমিং। এজন্য ব্রডকাস্টরাও চওড়া দামে বিক্রি করেছে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রতি ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন বিক্রি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ রুপিতে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ৩০.৪ বিলিয়ন মিনিট। টি-টোয়েন্টিতেও ওয়াচ টাইম রেকর্ডে শীর্ষে এই দুই দলের ম্যাচ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ২২ বিলিয়ন মিনিটের মতো।

ধারণা করা হচ্ছে, এবার ভেঙে যাবে অতীতের সব রেকর্ডই। এ ম্যাচের দিকে তাই অপেক্ষা নিয়ে তাকিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা ও প্রচারস্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। তাইতো ‘মওকা-মওকা’ গান প্রচার করে বাড়তি নজর কাড়ার চেষ্টাতে পুরো সফল হয়ে যান তারা।

গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচটি ছাড়া যদি ফাইনালে তাদের আবার দেখা হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাণিজ্যের অঙ্কটা তখন কোথায় গিয়ে থামে, সেটি অনুমানেরও বাইরে। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের থেকে অর্থের ঝনঝনানি নিশ্চিত বেড়ে যাবে। আয়োজকরা সেই অপেক্ষাতেই।

সেজন্যই ক্রিকেট বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের জেদের কাছে একপ্রকার নত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে! বাবর-রিজওয়ানকে তাই স্বাগতিক হয়েও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর পাড়ি দিতে হয়। মাঠের ক্রিকেটে সেই জবাবটা তারা আজ দিতে পারলে কিছুটা মুখরক্ষা হলেও হতে পারে।

ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অভিনেতা হাসপাতালে ভর্তি
  • প্রীতমের অফিস থেকে ৪০ লাখ রুপি চুরি করে চম্পট, অবশেষে পুলিশের জালে আশিষ
  • নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজাদ, আহত মা ও স্ত্রী
  • এনআরবিসি ব্যাংকে একাধিক পদে চাকরি, গ্রাহককেন্দ্রিক মানসিকতা থাকতে হবে
  • গাজীপুরে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা পেলেন লুৎফুজ্জামান বাবর 
  • পুলিশ কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে কাজ করবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • পুলিশ কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে বেআইনি কাজ করবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিয়ের বাড়িতে গান বাজানোর জেরে বাসর ঘর ভাঙচুর
  • কেবল ক্রিকেট বাণিজ্যেই ভারত-পাকিস্তান লড়াই!