বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) গত ১৬ বছরে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এত বিনিয়োগের পরও টানা লোকসানে পড়েছে তারা। সামনে লাভে ফিরতে পারবে—এমন বাস্তবতাও নেই। এরপরও জনগণের করের টাকায় সরকারের বিনিয়োগ থেমে নেই। জলযান কেনা, স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কাজে বিআইডব্লিউটিসিতে ১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা খরচ চলমান আছে।

একটি প্রকল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৪৩টি জলযান ও ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। গত বছরের মাঝামাঝি এর ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অর্থের পুরোটাই সরকারকে দিতে হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়, তখন পদ্মা সেতুর কাজ পুরোদমে চলছিল। এটা অনুমিতই ছিল যে পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরির সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট মাওয়াঘাট বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে মাওয়াঘাটকেন্দ্রিক সব ফেরি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে কিংবা ব্যবহার না থাকলে বসে থাকবে। এরপরও এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি ফেরি নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়। এর মধ্যে ছয়টি ফেরি ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে বিআইডব্লিউটিসি, আরও ছয়টি আসার অপেক্ষায় আছে।

উপকূলীয়, দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় বিআইডব্লিউটিসি সেবার বিকল্প নেই। কারণ, নিয়মিত লাভবান না হওয়ায় বেসরকারি খাত এসব জায়গায় বিনিয়োগ করে না। অধ্যাপক গৌতম কুমার সাহা, নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজের সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন নৌপথে চলা যাত্রীবাহী জাহাজগুলো অলস পড়ে আছে। এর মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিসিতে আসছে তিনটি প্যাসেঞ্জার ক্রুজার ও তিনটি আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ।

এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে সরকারি ও নিজস্ব অর্থায়নে ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ৫৪৯ কোটি টাকা খরচ করে ফেরি ও জাহাজের মতো ৭০টি জলযান কেনা হয়েছে। শত শত কোটি টাকা খরচের পরও দীর্ঘ সময় লাভে থাকা করপোরেশনটি লোকসানে পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সুরাইয়া পারভীন শেলী প্রথম আলোকে বলেন, যখন ফেরির ওপর নির্ভরশীলতা ছিল, তখন তাঁদের আয় অনেক বেশি ছিল। এখন সড়কব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় ফেরির চাহিদা কমে গেছে। এতে আয়ও কমেছে।

প্রকল্প নেওয়া হয় আয় বাড়ানোর জন্য উল্লেখ করে সুরাইয়া পারভীন বলেন, যে চিন্তাভাবনা করে প্রকল্প নেওয়া হয়, সেটি শেষ হতে হতে পারসপেক্টিভ (পরিপ্রেক্ষিত) অনেক সময় বদলে যায়।

২০২৪ সালের মে মাসে হালনাগাদ করা বিআইডব্লিউটিসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির মোট ১৭৪টি নৌযান রয়েছে। এর মধ্যে ফেরি ৫৯টি, যাত্রীবাহী জাহাজ ২০টি, কোস্টাল জাহাজ ১৬টি, কার্গো/কনটেইনার জাহাজ ১৫টি প্রভৃতি।

এর আগে ‘ফিরে দেখা সরকারি প্রতিষ্ঠান-৩’ প্রকাশিত হয়েছিল গত ১৭ অক্টোবর। শিরোনাম ছিল ‘২৮ বছরের ২৪ বছরই লোকসানে বিসিআইসি’।

আরও বিনিয়োগ আসছে, হচ্ছে আরও একটি প্রধান কার্যালয়

রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিসির একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। আগে এটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০১৭ সালে মতিঝিল থেকে রাজধানীর বাংলামোটরে প্রধান কার্যালয় নিয়ে আসে বিআইডব্লিউটিসি, যেখানে টিনশেড আধাপাকা কক্ষে কার্যক্রম চলছে তাদের।

গত ১৫ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিসির ভবনে পূবালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়। ভাড়া নিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভবনের পাঁচতলায় বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়। তবে কক্ষটি তালা দেওয়া। ওই ফ্লোরের পূবালী ব্যাংকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা এক ব্যক্তি জানালেন, কার্যালয় থাকলেও এখানে বিআইডব্লিউটিসির কেউ বসেন না।

মতিঝিলের কার্যালয় ভাড়া দিয়ে এখন বিআইডব্লিউটিসি নতুন করে প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য প্রকল্প নিতে যাচ্ছে। এতে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, ‘বিআইডব্লিউটিসির বাংলামোটরে চলে আসার নিশ্চয় একটা কারণ আছে। এটা (বাংলামোটরের জমি) বিআইডব্লিউটিসির নিজস্ব সম্পত্তি। এত মূল্যবান জায়গা ফেলে রাখলে বেহাত হয়ে যাবে। আর নতুন ভবন হলে সেখান থেকেও আয় হবে।’

বিআইডব্লিউটিসির চট্টগ্রামের টার্মিনাল ১ ও ২–এ জেটি নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নেও আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে ২২৪ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

বিদেশি অর্থায়নে বিআইডব্লিউটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে। ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হতে পারে।

লাভে ফেরার সম্ভাবনা কম

বিআইডব্লিউটিসি মূলত ফেরি সেবা, অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে যাত্রীসেবা দিয়ে থাকে। তবে সংস্থাটির আয়ের প্রধান উৎস ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার।

পদ্মা সেতু চালুর পর মাওয়াঘাটকেন্দ্রিক বিআইডব্লিউটিসির ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আয় বড় ধরনের ধাক্কা খায়।

এখন বিআইডব্লিউটিসির সবচেয়ে লাভজনক ও জনপ্রিয় ফেরিঘাট হলো পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া। তবে কোনো যানবাহন চাইলে এই ফেরিঘাট ব্যবহার না করে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করতে পারে। ফলে পদ্মা সেতুর আগে ফেরির যে গুরুত্ব ছিল, তা এখন আর নেই।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীসেবা ছিল। তবে সেই সেবাও বন্ধ করে দিয়েছে তারা। যদিও এখন ঢাকার কয়েকটি জায়গায় চারটি ওয়াটারবাস দিয়ে খেয়া পারাপার করে তারা। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে করপোরেশনটি।

অবশ্য চট্টগ্রাম–হাতিয়া, কুমিরা–গুপ্তছড়া, মনপুরা–শশীগঞ্জ, মজুচৌধুরীর হাট–ইলিশার মতো কিছু উপকূলীয় যাত্রীসেবা চালু রয়েছে। এসব যাত্রীসেবা থেকে সীমিত লাভ হয়ে থাকে।

করপোরেশনটির গত ১১টি অর্থবছরের (২০১৩–১৪ থেকে ২০২৩–২৪) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা লাভে ছিল। ২০১৯–২০ অর্থবছরে এসে তারা প্রথমে লোকসান দেয়। এর পরের বছর লাভ করলেও ২০২১–২২ অর্থবছর থেকে তারা টানা লোকসান দিচ্ছে। ২০২১–২২ অর্থবছরে ২ কোটি ২৭ লাখ এবং ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তারা ৩৩ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।

আগের উদ্যোগে সফলতা আসেনি

বিআইডব্লিউটিসি লাভে ফিরবে বলে আশাবাদী সংস্থাটির চেয়ারম্যান সুরাইয়া পারভীন শেলী। তিনি মনে করেন, সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে নিশ্চয় লাভজনক হওয়া সম্ভব। বিভিন্ন ‘ম্যাকানিজম’ গ্রহণ করে লাভজনক হওয়ার কথা বলেছেন সুরাইয়া পারভীন। এর মধ্যে স্পষ্ট করে তিনি যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের কথা বলেছেন। গবেষণাধর্মী কাজ করার কথাও বলেছেন।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ফেরি সেবা ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের সুযোগ কম। তবে উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলে যাত্রীসেবা উন্নত করার সুযোগ আছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুরাইয়া পারভীন দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ছিলেন এ কে এম মতিউর রহমান। তিনিও যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের কথা বললেও তা করতে পারেননি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিআইডব্লিউটিসি যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সফলতা আসেনি। ২০১৯ সালের মার্চে বিআইডব্লিউটিসির ‘এমভি মধুমতি’ নামের একটি জাহাজ ভারতের কলকাতা যায়। তবে তা লাভজনক না হওয়ায় এ ধরনের কার্যক্রম থেকে তারা সরে আসে। গত বছর বেসরকারি উদ্যোগেও ভারতে নৌপথে যাত্রা শুরু করেছিল, পরে সেটিও আর অব্যাহত থাকেনি।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র বলছে, ঢাকা থেকে ভোলা নৌপথে যাত্রীসেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

‘উপকূলে সেবা বাড়াতে হবে’

সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটনায় বিআইডব্লিউটিসির আগের সুদিন ফিরে পাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক গৌতম কুমার সাহা।

উপকূলীয়, দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় এখন বিআইডব্লিউটিসির সেবার মান ও পরিমাণ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন গৌতম কুমার সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপকূলীয়, দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় বিআইডব্লিউটিসি সেবার বিকল্প নেই। কারণ, নিয়মিত লাভবান না হওয়ায় বেসরকারি খাত এসব জায়গায় বিনিয়োগ করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআইডব্লিউটিসি দুর্গম এলাকায় নতুন নতুন সেবা চালু করতে পারে। আগে যেখানে দিনে দুটি–একটি ট্রিপ (যাওয়া–আসা) দিত, এখন সেখানে দুটি দিতে পারে। এতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবন আরও সহজ ও নিরাপদ হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র আওত য় প রকল প ন উপক ল য় ল ভজনক র জন য কল প ন করপ র সরক র ব যবস প রথম হওয় য় বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে নৌকায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালালেন শিকারিরা

সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে মাংস কেটে নৌকার পাটাতনে বিছিয়ে রেখেছিল শিকারির দল। জেলের ছদ্মবেশে নৌকা নিয়ে ফিরছিলেন লোকালয়ে। এ সময় বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা হাজির হলে নৌকায় মাংস ফেলে খালের মধ্যে লাফিয়ে সাঁতরে গহিন বনে পালিয়ে যান শিকারিরা।

পরে নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে ৫০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেন বনরক্ষীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনের মায়ের খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দুপুরে সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে দেখা যায়, জব্দ করা হরিণের মাংস আদালতে আনা হয়েছে। আদালত ভবনের কাছাকাছি গর্ত খুঁড়ছেন এক ব্যক্তি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁরা জানান, আদালতের নির্দেশে হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।

বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ সকালে তিনি কয়েকজন বনরক্ষী নিয়ে টহল দিতে ট্রলার নিয়ে বনে যান। আড়পাঙ্গাসিয়া নদী পেরিয়ে মায়ের খাল ধরে একটু আগাতেই একটি জেলেনৌকা দেখতে পান। দুজন নৌকায় বইঠা বাইছিলেন। তাঁদের নৌকার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই তাঁরা নৌকা ফেলে খাল সাঁতরে গহিন বনে পালিয়ে যান। ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ায় পিছু নিয়েও কাউকে আটক করা যায়নি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, পালিয়ে যাওয়া শিকারিদের শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামে। পরিত্যক্ত নৌকা তল্লাশি করে ৫০ কেজি হরিণের মাংস এবং মাছ ধরতে আসা জেলে হিসেবে বন বিভাগের অনুমতিপত্র পেয়েছেন।

সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে যাঁরা হরিণ শিকার করেন, তাঁরা ফাঁদ বহন করেন না। জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার জালের সঙ্গে দড়ি নিয়ে যান। বনের ভেতর বসে সেই দড়ি দিয়ে হরিণ ধরার ফাঁদ তৈরি করেন। তারপর হরিণের যাতায়াতের পথে ফাঁদ পেতে রাখেন। চলাচলের সময় প্রাণীগুলো সেই ফাঁদে আটকা পড়ে। পরে বনের ভেতরে মাংস কেটে লোকালয়ে এনে বিক্রি করা হয়। শিকার শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ফাঁদগুলো বস্তায় ভরে জঙ্গলের ভেতর মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়। সময়-সুযোগ পেলেই তাঁরা আবার শিকারে আসেন।

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হরিণ শিকারের জন্য সুন্দরবন অঞ্চলের ৩০টির মতো ছোট-বড় চক্র আছে। হরিণের মাংস, চামড়া ও শিং পাচারকারী এসব চক্রে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ৭৫৭ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৩৬টি। আসামি করা হয়েছে ৮৪ জনকে। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫১৪ কেজি ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২৩ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছিল।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণ শিকারের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। সুন্দরবনে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমে এসেছে। হরিণের মাংস জব্দের ঘটনা আজ কয়রা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হবে। হরিণ নিধনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাড়ছে আমদানিনির্ভর কৃষিপণ্যের উৎপাদন
  • ঈদযাত্রা: সদরঘাটে চিরচেনা ভিড়
  • ঈদের আগে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, আগস্টের পর থেকেই বাড়ছে
  • সুন্দরবনে নৌকায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালালেন শিকারিরা
  • ২৬ দিনে রেমিট্যান্স ৩শ’ কোটি ডলারের  কাছাকাছি 
  • রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড
  • প্রবাসী আয় ৩ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই, ঈদের আগেই রেকর্ড
  • ফেরি উদ্বোধনের দুদিনে পৌনে চার লাখ টাকা টোল আদায়
  • ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের লোকসান বেড়েছে ৮২ শতাংশ
  • বিডি সার্ভিসেসের লোকসান বেড়েছে ৯০ শতাংশ