বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) গত ১৬ বছরে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এত বিনিয়োগের পরও টানা লোকসানে পড়েছে তারা। সামনে লাভে ফিরতে পারবে—এমন বাস্তবতাও নেই। এরপরও জনগণের করের টাকায় সরকারের বিনিয়োগ থেমে নেই। জলযান কেনা, স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কাজে বিআইডব্লিউটিসিতে ১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা খরচ চলমান আছে।

একটি প্রকল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৪৩টি জলযান ও ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। গত বছরের মাঝামাঝি এর ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অর্থের পুরোটাই সরকারকে দিতে হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়, তখন পদ্মা সেতুর কাজ পুরোদমে চলছিল। এটা অনুমিতই ছিল যে পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরির সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট মাওয়াঘাট বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে মাওয়াঘাটকেন্দ্রিক সব ফেরি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে কিংবা ব্যবহার না থাকলে বসে থাকবে। এরপরও এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি ফেরি নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়। এর মধ্যে ছয়টি ফেরি ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে বিআইডব্লিউটিসি, আরও ছয়টি আসার অপেক্ষায় আছে।

উপকূলীয়, দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় বিআইডব্লিউটিসি সেবার বিকল্প নেই। কারণ, নিয়মিত লাভবান না হওয়ায় বেসরকারি খাত এসব জায়গায় বিনিয়োগ করে না। অধ্যাপক গৌতম কুমার সাহা, নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজের সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন নৌপথে চলা যাত্রীবাহী জাহাজগুলো অলস পড়ে আছে। এর মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিসিতে আসছে তিনটি প্যাসেঞ্জার ক্রুজার ও তিনটি আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ।

এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে সরকারি ও নিজস্ব অর্থায়নে ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ৫৪৯ কোটি টাকা খরচ করে ফেরি ও জাহাজের মতো ৭০টি জলযান কেনা হয়েছে। শত শত কোটি টাকা খরচের পরও দীর্ঘ সময় লাভে থাকা করপোরেশনটি লোকসানে পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সুরাইয়া পারভীন শেলী প্রথম আলোকে বলেন, যখন ফেরির ওপর নির্ভরশীলতা ছিল, তখন তাঁদের আয় অনেক বেশি ছিল। এখন সড়কব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় ফেরির চাহিদা কমে গেছে। এতে আয়ও কমেছে।

প্রকল্প নেওয়া হয় আয় বাড়ানোর জন্য উল্লেখ করে সুরাইয়া পারভীন বলেন, যে চিন্তাভাবনা করে প্রকল্প নেওয়া হয়, সেটি শেষ হতে হতে পারসপেক্টিভ (পরিপ্রেক্ষিত) অনেক সময় বদলে যায়।

২০২৪ সালের মে মাসে হালনাগাদ করা বিআইডব্লিউটিসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির মোট ১৭৪টি নৌযান রয়েছে। এর মধ্যে ফেরি ৫৯টি, যাত্রীবাহী জাহাজ ২০টি, কোস্টাল জাহাজ ১৬টি, কার্গো/কনটেইনার জাহাজ ১৫টি প্রভৃতি।

এর আগে ‘ফিরে দেখা সরকারি প্রতিষ্ঠান-৩’ প্রকাশিত হয়েছিল গত ১৭ অক্টোবর। শিরোনাম ছিল ‘২৮ বছরের ২৪ বছরই লোকসানে বিসিআইসি’।

আরও বিনিয়োগ আসছে, হচ্ছে আরও একটি প্রধান কার্যালয়

রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিসির একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। আগে এটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০১৭ সালে মতিঝিল থেকে রাজধানীর বাংলামোটরে প্রধান কার্যালয় নিয়ে আসে বিআইডব্লিউটিসি, যেখানে টিনশেড আধাপাকা কক্ষে কার্যক্রম চলছে তাদের।

গত ১৫ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিসির ভবনে পূবালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়। ভাড়া নিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভবনের পাঁচতলায় বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়। তবে কক্ষটি তালা দেওয়া। ওই ফ্লোরের পূবালী ব্যাংকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা এক ব্যক্তি জানালেন, কার্যালয় থাকলেও এখানে বিআইডব্লিউটিসির কেউ বসেন না।

মতিঝিলের কার্যালয় ভাড়া দিয়ে এখন বিআইডব্লিউটিসি নতুন করে প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য প্রকল্প নিতে যাচ্ছে। এতে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, ‘বিআইডব্লিউটিসির বাংলামোটরে চলে আসার নিশ্চয় একটা কারণ আছে। এটা (বাংলামোটরের জমি) বিআইডব্লিউটিসির নিজস্ব সম্পত্তি। এত মূল্যবান জায়গা ফেলে রাখলে বেহাত হয়ে যাবে। আর নতুন ভবন হলে সেখান থেকেও আয় হবে।’

বিআইডব্লিউটিসির চট্টগ্রামের টার্মিনাল ১ ও ২–এ জেটি নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নেও আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে ২২৪ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

বিদেশি অর্থায়নে বিআইডব্লিউটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে। ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হতে পারে।

লাভে ফেরার সম্ভাবনা কম

বিআইডব্লিউটিসি মূলত ফেরি সেবা, অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে যাত্রীসেবা দিয়ে থাকে। তবে সংস্থাটির আয়ের প্রধান উৎস ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার।

পদ্মা সেতু চালুর পর মাওয়াঘাটকেন্দ্রিক বিআইডব্লিউটিসির ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আয় বড় ধরনের ধাক্কা খায়।

এখন বিআইডব্লিউটিসির সবচেয়ে লাভজনক ও জনপ্রিয় ফেরিঘাট হলো পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া। তবে কোনো যানবাহন চাইলে এই ফেরিঘাট ব্যবহার না করে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করতে পারে। ফলে পদ্মা সেতুর আগে ফেরির যে গুরুত্ব ছিল, তা এখন আর নেই।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীসেবা ছিল। তবে সেই সেবাও বন্ধ করে দিয়েছে তারা। যদিও এখন ঢাকার কয়েকটি জায়গায় চারটি ওয়াটারবাস দিয়ে খেয়া পারাপার করে তারা। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে করপোরেশনটি।

অবশ্য চট্টগ্রাম–হাতিয়া, কুমিরা–গুপ্তছড়া, মনপুরা–শশীগঞ্জ, মজুচৌধুরীর হাট–ইলিশার মতো কিছু উপকূলীয় যাত্রীসেবা চালু রয়েছে। এসব যাত্রীসেবা থেকে সীমিত লাভ হয়ে থাকে।

করপোরেশনটির গত ১১টি অর্থবছরের (২০১৩–১৪ থেকে ২০২৩–২৪) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা লাভে ছিল। ২০১৯–২০ অর্থবছরে এসে তারা প্রথমে লোকসান দেয়। এর পরের বছর লাভ করলেও ২০২১–২২ অর্থবছর থেকে তারা টানা লোকসান দিচ্ছে। ২০২১–২২ অর্থবছরে ২ কোটি ২৭ লাখ এবং ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তারা ৩৩ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।

আগের উদ্যোগে সফলতা আসেনি

বিআইডব্লিউটিসি লাভে ফিরবে বলে আশাবাদী সংস্থাটির চেয়ারম্যান সুরাইয়া পারভীন শেলী। তিনি মনে করেন, সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে নিশ্চয় লাভজনক হওয়া সম্ভব। বিভিন্ন ‘ম্যাকানিজম’ গ্রহণ করে লাভজনক হওয়ার কথা বলেছেন সুরাইয়া পারভীন। এর মধ্যে স্পষ্ট করে তিনি যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের কথা বলেছেন। গবেষণাধর্মী কাজ করার কথাও বলেছেন।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ফেরি সেবা ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের সুযোগ কম। তবে উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলে যাত্রীসেবা উন্নত করার সুযোগ আছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুরাইয়া পারভীন দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ছিলেন এ কে এম মতিউর রহমান। তিনিও যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের কথা বললেও তা করতে পারেননি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিআইডব্লিউটিসি যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সফলতা আসেনি। ২০১৯ সালের মার্চে বিআইডব্লিউটিসির ‘এমভি মধুমতি’ নামের একটি জাহাজ ভারতের কলকাতা যায়। তবে তা লাভজনক না হওয়ায় এ ধরনের কার্যক্রম থেকে তারা সরে আসে। গত বছর বেসরকারি উদ্যোগেও ভারতে নৌপথে যাত্রা শুরু করেছিল, পরে সেটিও আর অব্যাহত থাকেনি।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র বলছে, ঢাকা থেকে ভোলা নৌপথে যাত্রীসেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

‘উপকূলে সেবা বাড়াতে হবে’

সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটনায় বিআইডব্লিউটিসির আগের সুদিন ফিরে পাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক গৌতম কুমার সাহা।

উপকূলীয়, দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় এখন বিআইডব্লিউটিসির সেবার মান ও পরিমাণ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন গৌতম কুমার সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপকূলীয়, দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় বিআইডব্লিউটিসি সেবার বিকল্প নেই। কারণ, নিয়মিত লাভবান না হওয়ায় বেসরকারি খাত এসব জায়গায় বিনিয়োগ করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআইডব্লিউটিসি দুর্গম এলাকায় নতুন নতুন সেবা চালু করতে পারে। আগে যেখানে দিনে দুটি–একটি ট্রিপ (যাওয়া–আসা) দিত, এখন সেখানে দুটি দিতে পারে। এতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবন আরও সহজ ও নিরাপদ হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র আওত য় প রকল প ন উপক ল য় ল ভজনক র জন য কল প ন করপ র সরক র ব যবস প রথম হওয় য় বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন মানুষ, কারণ কী

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখেন ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন; কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকেরা। অন্যদিকে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিক্রি হয়েছিল ৪১ হাজার ২৯০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। তার মানে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারেরা। তাঁরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না। সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না। এই আস্থাহীনতার কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন অনেক গ্রাহক। অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও স্থগিতের মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভেঙে ফেলার পরিমাণ বেশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙে মানুষ। তার মধ্যে অক্টোবরে ৯ হাজার ৮৩ কোটি, নভেম্বরে ৮ হাজার ১৫০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ৮ হাজার ৪৬১ কোটি অর্থাৎ তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন গ্রাহকেরা। এতে করে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে গেছে। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ার অর্থ হলো, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া কমছে। এতে সরকারকে সুদও কম গুনতে হবে। তবে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের জন্য সরকারকে এখনো বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে।

শুধু তা–ই নয়, সঞ্চয়কারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গত জানুয়ারিতে বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বেড়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। তার বিপরীতে গ্রাহকেরা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার। অর্থাৎ নিট বিক্রি ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কমেছে। তার মানে সরকার গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এক টাকাও পায়নি। নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৪ সালের জুন শেষে ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকায়।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রথম কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। মজুরি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে ব্যয় বাড়ছে। সে জন্য সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে মানুষকে। এ ছাড়া অনেক ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। সামগ্রিক ব্যাংক খাতে আস্থার ঘাটতির কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙার হার বাড়ছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যাংকে আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদহারের মধ্যে তফাৎ কমে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকে বিকল্প বিনিয়োগ পণ্যে অর্থ লগ্নি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। আবার সরকার পরিবর্তনের পর অনেক সম্পদশালীদের ব্যাংক হিসাব ও বিনিয়োগে নজরদারি বেড়েছে। সে কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সোনাসহ অন্যান্য বিকল্প পণ্যে বিনিয়োগ করছেন।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার প্রভাব কী জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার আর্থিক সংকটে আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ও আশানুরূপ হচ্ছে না। বৈদেশিক অর্থায়নও সেভাবে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে অর্থের জোগানের জন্য সঞ্চয়পত্র গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বাড়লে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থবছরের মাঝপথে এসে বাজেট কর্তন করতে হতে পারে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আরও কমতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আনসারদের রেশন বাড়ছে, জুলাই থেকে কার্যকর  
  • পণ্যবাহী ট্রেনের অভাবে কনটেইনার জমে যাচ্ছে
  • বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি সব বাজারেই বেড়েছে
  • প্রথম ছয় মাসে সব বাজারেই বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি
  • তিন মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন মানুষ, কারণ কী
  • ঘন কুয়াশায় তিন ঘণ্টা বন্ধের পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি চলাচল শুরু
  • রোজার ৯ পণ্যের আমদানি বেড়েছে