ফ্রান্সে ছুরি নিয়ে হামলায় নিহত ১, আহত ৩ পুলিশ
Published: 23rd, February 2025 GMT
ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের নগরী মিলুজে গতকাল শনিবার ছুরি নিয়ে হামলায় এক ব্যক্তি নিহত এবং তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর সমর্থনে একটি বিক্ষোভ চলছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে ঘটনাস্থল থেকে আলজেরিয়ার ৩৭ বছর বয়সী এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি সন্ত্রাসী হামলা কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কারণ জানা গেছে, হামলার সময় ওই ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করছিলেন।
যে তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দুজনের আঘাত গুরুতর। তাঁদের একজন গলায় ও একজন বুকে আঘাত পেয়েছেন। হামলার সময় ৬৯ বছর বয়সী পর্তুগালের এক নাগরিক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং তিনি নিহত হন।
স্থানীয় প্রসিকিউটরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন, এমন তালিকায় সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম ছিল এবং তাঁকে বিতাড়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এ ঘটনাকে সন্দেহাতীতভাবে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মাখোঁ বলেন, ‘আমি আমাদের দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও আমার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
উপাচার্যের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর গত ৭ মাসে একাধিকবার তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। ড. মুহসিনকে পুনর্বহাল ও উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
ড. মুহসিন জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন শিক্ষকরা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন– তাঁর একটি ভার্চুয়াল সভার অডিও গত শনিবার ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ওই সভাটি করেছিলেন। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ড. মুহসিনকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও পরে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবিগুলো হলো– অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা-অপমানজনক অপবাদ প্রত্যাহার, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদে পুনর্বহাল; অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ; ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিন খান জানান, একজন নিরপরাধ শিক্ষককে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষর্থীরা ক্ষুব্ধ। সোমবার তারা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা জেনেছেন, গতকাল তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। চার দফা দাবি না মানলে বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ড. শুচিতা যোগদানের পরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন, তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অনুসারী। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের ৩৫০ বিশিষ্টজন গত বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। উপাচার্যও সেই বিবৃতিদাতাদের একজন। এ ছাড়া কলিমুল্লাহকে ববির একাডেমিক কাউন্সিলর, পরীক্ষা কমিটি ও পূর্বের চাকরি গণনা কমিটির সদস্য করা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার করেন তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ, তিনি সব একাডেমিক কাজের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান করবেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে বাদ দিয়েই নথিভিত্তিক ও সভাভিত্তিক একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেন। কোষাধ্যক্ষ ড. মামুন অর রশিদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক কোষাধ্যক্ষ এবং তদূর্ধ্ব চেক উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যৌথ স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু উপাচার্য সব চেকে একাই স্বাক্ষর করেন। এসব অভিযোগ এর আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার উপচার্যের পদত্যাগে এক দফার আন্দোলনে নেমেছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর তাঁর কক্ষে তালাও লাগিয়েছিলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সোমবার রাতে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন জানান, উপাচার্য সারাদিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এখন তিনি বিশ্রামে রয়েছেন।