১৯ বছর পর সোমবার গোপালগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ, প্রস্তুতি সম্পন্ন
Published: 23rd, February 2025 GMT
১৯ বছর পর আগামীকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির জনসভা। সভা সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন দলটির নেতারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অংশ হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হচ্ছে।
জনসভাকে ঘিরে গোপালগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। কেন্দ্রীয় নেতাদের বরণ করতে বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সড়কের দুইপাশ।
ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৬ সালের পর গোপালগঞ্জে আর কোনো জনসভা করতে পারেনি বিএনপি। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে গোপালগঞ্জে বিএনপিকে প্রকাশ্যে কোনো মিছিল-মিটিংও করতে দেখা যায়নি। ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমেই সীমাবন্ধ ছিল তাদের কর্মসূচি বলে জানিয়েছেন নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়াতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টাকে দুদু
আপনাকে ফুলের মালা দিয়ে বিদায় দিতে চাই
অস্ত্র হাতে বাজারে গিয়ে হুমকি, যুবদল নেতা বহিষ্কার
সোমবার গোপালগঞ্জ জেলা শহরের পৌর পার্কে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড.
সমাবেশ সফল ও রেকর্ড সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিএনপি ও দলটির সহযোগী সংগঠনগুলো দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা, প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানা যায়, গোপালগঞ্জ শহরের শেখ কামল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০০৪ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বশেষ ফরিদপুর বিভাগীয় ইউনিয়ন সভা করেছিলেন। যা জনসভায় পরিণত হয়েছিল। সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সভা-সমাবেশ করতে পেরেছে। ১৯ বছর পর গোপালগঞ্জে আয়োজন করা জনসভায় ৩০-৪০ হাজর লোক সমাগমের টার্গেট নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন বলেন, “দীর্ঘদিন আমরা উন্মুক্তভাবে রাজনীতি করতে পারিনি। ২৪ তারিখের সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামন সেলিমের নির্দেশনায় জনসভা সুন্দরভাবে সফল করতে কাজ করে যাচ্ছি।”
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাভোকেট তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর উন্মুক্ত পরিবেশে আগামীকাল সোমবার পৌর পার্ক মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।”
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকউজ্জামান বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গোপালগঞ্জে স্বাধীনভাবে একটি কর্মসূচিও পালন করতে দেয়নি। বিগত সময় জাতীয়তাবাদী ধারার সমর্থকরা ভয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এখন আর কোনো ভয় নেই। ১৯ বছর পর কোনো বাধা ছাড়াই মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জনসভার আয়োজন করা হবে। এতে ৩০- ৪০ হাজার লোকের সমাগম ঘটবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা ২৪ তারিখের জনসভাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কোনো বাধা ছাড়াই জনসভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে নেতাদের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ প লগঞ জ জ ল র গ প লগঞ জ ব এনপ র স ন ত কর ম সরক র র স মব র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিকে অস্থির অবস্থায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিকে আর অনিশ্চিয়তার মধ্যে না রেখে দয়া করে দ্রুত নির্বাচন দিন। যতটুকু দরকার, ততটুকু সংস্কার করেন। কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচন দেন, ভোটের একটা রোডম্যাপ জনগণকে জানিয়ে দেন। দেশটাকে অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিবেন না। আমি অনুরোধ করবো, জাতিকে অস্থির অবস্থায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন। যে সরকার গঠিত হবে, তার পেছনে জনগণ থাকবে। জনগণ না থাকলে সে সরকার কাজ করতে পারবে না। তাই জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বলবো, আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না; যাতে জাতির ঐক্য নষ্ট হয়। এই মুহুর্তে দেশে ঐক্যের বড় প্রয়োজন। এই ক্রান্তিকালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে দিল্লিতে বসেও ষড়যন্ত্র করছে। ভারত আমাদের বৃহত্তর প্রতিবেশি। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এখন আমাদের দরকার এই সরকারকে সমর্থন করা।
লাকসাম মনোহরগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় সবচেয়ে বেশী অত্যাচারের শিকার হয়েছে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের মানুষ। রীতিমতো ভয়াবহ ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল এখানকার সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সে এখন কোথায় পালিয়েছে, কেউ জানে না। এ সময় মঞ্চে ছিলেন গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান ও হুমায়ুন পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলাম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। শেখ মুজিব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার শাসনামলে সব শেষ করে দিয়েছে। কেউ ভোট দিতে পারেনি। ভোটের আগের রাতে সিল মেরে আওয়ামী লীগের সবাইকে নির্বাচিত করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনটা ছিল ডামি নির্বাচন। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। এই সময় তারেক রহমান একটা স্লোগান দিয়েছিল ‘টেক ব্যাক’। আরেকটা স্লোগান দিয়েছিল, ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’। ঠিকই রাজপথে ফয়সালা হয়েছে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা হিরু-হুমায়ূনের সন্তানদের কথা স্মরণ করিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছিল। তার মধ্যে সিলেটের নেতা ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২ হাজার মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তাই তাকে জেল খাটতে হয়েছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সংস্কার-সংস্কারের কথা বলছেন, সত্যিকার অর্থে আপনারা বলেন তো; মানুষ সংস্কার বলতে কতটুকু বুঝে। মানুষ বুঝে, দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, মোটা কাপড়, মাথার উপরে ছাদ, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া- এগুলোই হলো সংস্কার। এখন যে ব্যবস্থা চলছে, তাতে শান্তি আসবে না। রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তাতেই সমাধান আছে। দয়া করে দেশকে আর নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবেন না। সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যখন আন্দোলন চলে তখন জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেনাবাহিনী।
জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। দলটির কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালামের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার, সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলা-উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসামে জনসভায় হাজারো নেতাকর্মীর ঢল নামে।