মৌলভীবাজারের শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কটি গেছে শমশেরনগর চা-বাগানের ভেতর দিয়ে। সড়কের দুই পাশে চা-বাগানের গাছ, সারি সারি ছায়াবৃক্ষ। দু–চারটি বট-অশ্বত্থেরও দেখা পাওয়া যায়। কোথাও চা-শ্রমিকদের লাইন (চা-শ্রমিকদের বসবাসের ঘরবাড়ি), লাইনে মানুষের শান্ত জীবন। চা-বাগানটি পড়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে।

সম্প্রতি টমটমে শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়ক দিয়ে কিছুটা পূর্ব দিকে গিয়ে চা-বাগানের একটি জায়গায় থামতে হয়েছে। ওখান থেকে দক্ষিণ দিকে একটি আধা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে ঝাঁকুনিতে হেলেদুলে গাড়ি চলছে সামনের দিকে। প্রায় আধা কিলোমিটারের কাছাকাছি দূরত্বে গিয়ে হঠাৎ চোখের সামনে বিশাল, প্রশস্ত এক টুকরা সবুজ হৃদয় উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। উঁচু-নিচু টিলামতো স্থানটিতে ঢেউ খেলছে ঘাসের সবুজ।

স্থানীয় লোকজন জানান, এটা হচ্ছে শমশেরনগর চা-বাগানের ভেতর ‘গলফ মাঠ’। কিছু তরুণ-তরুণী, শিশু ও নারী-পুরুষ মাঠটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের মতো করে ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ছায়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আলাপ-সালাপে সময় কাটাচ্ছেন।

চা-বাগানের ভেতরই গলফ মাঠটি। মাঠজুড়ে বিছানো সবুজ চাদর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গেছে। কোথাও কিছুটা সমান, তারপর ঢালু হয়ে আবার সমান হয়ে গেছে। অনেকটা প্রান্তরজুড়ে এই সবুজের বিস্তৃতি। এক টিলায় আটকে নেই এই খোলা সবুজ হৃদয়। কয়েকটি টিলা এ রকম ঘাসে ঘাসে গাঁথা হয়ে আছে।

শমশেরনগর চা-বাগানের বাসিন্দা, কৃষি উদ্যোক্তা ও সংগঠক মোহন রবিদাস জানালেন, তখন ব্রিটিশ শাসনের যুগ। ১৮৪৮ সালে শমশেরনগর চা-বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই সময় ব্রিটেন থেকে আসা লোকজনই বাগান চালাতেন। তাঁরা অন্যকিছু খেলতেন না, ‘গলফ’ খেলতেন। এই সবুজ মাঠটি সেই ব্রিটিশদেরই তৈরি। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা এই বাগান থেকে চলে গেছেন। কিন্তু চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সৌন্দর্যের জন্য মাঠটিকে অপরিবর্তিত অবস্থাতেই রেখে দিয়েছে। মাঠটি তাই সবুজের প্রশস্ত হৃদয় হয়ে এখনো টিকে আছে। এক টুকরা ‘সবুজ ঘাসের দেশ’ হয়ে মানুষকে স্বস্তি দিয়ে চলছে। মাঝেমধ্যে চা-কোম্পানির ঊর্ধ্বতন লোকজন গলফ খেলতে এখানে আসেন। বাগান ব্যবস্থাপকেরাও এই মাঠে গলফ খেলে থাকেন। তখন মাঠটিকে রঙিন কাগজে সাজিয়ে তোলা হয়। মাঠে উৎসবের রং লাগে।

মোহন রবিদাস প্রথম আলোকে বলেন, গলফ মাঠে এমনি অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। বিকেলেই বেশি লোকজন আসেন। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, এই সবুজমাখা মাঠ মানুষকে নীরবেই টানে। শীত, হেমন্ত ও বসন্তে এখানে গা-জুড়ানো রোদে ভিজে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখার নির্মল আনন্দ হয়তো অনেকে খুঁজেন। চা-বাগানের টিলা পেরিয়ে সূর্য যখন লাল হয়ে দূরের দেশে চলে যায়, কুয়াশায় জড়িয়ে পড়ে আলো। সেই কুয়াশা, সেই আলোরও আছে ভিন্নতর মায়া। আহলাদি সবুজের সঞ্চয় নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন। সে প্রকৃতির যেকোনো মৌসুমই হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গলফ ম ঠ ই সব জ

এছাড়াও পড়ুন:

সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ মিছিল

সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল কয়েকটি সড়ক ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।

সমাবেশে বক্তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানান। একই সঙ্গে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে দেখেছি, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের সময় ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। আজ কিন্তু সেই সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নেই। তবুও আমরা সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের ঘটনা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি। গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম ধর্ষণের ঘটনা, ছিনতাইয়ের ঘটনা ও সন্ত্রাসের ঘটনা দেখব, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা যদি একটা সাম্য, মানবিক ও ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ গড়তে চাই, তাহলে সরকারকে প্রথমেই বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সুশাসন গড়ে তুলতে হবে। একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইলে সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা আছে, সে আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যদি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে তাঁকেও আমরা ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামাব। আমরা কাউকে ক্ষমতায় বসাতে আন্দোলন করিনি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছি ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার যে ঘাটতি শেখ হাসিনার আমলে ছিল, সেটি যেন পূরণ হয়। এ জন্য অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, দেশের যে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রয়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ রাখতে হবে এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সমাপনী বক্তব্য দেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘রাজধানী ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশের কোথাও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। মনে হচ্ছে, এই বুঝি ছিনতাই করে নিল সবকিছু। অবিলম্বে প্রত্যেক নারী ও ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত যাতে বাংলাদেশের ল অ্যান্ড অর্ডার ফাংশন করে, তার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যে দায়িত্ব সেটি পালন করতে হবে, তা না হলে জাহাঙ্গীরনগর থেকে আমরা ঘোষণা দিতে চাই, আপনাকে টেনেহিঁচড়ে নামাতে আমরা এক মিনিটও সময় নেব না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ মিছিল
  • স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে শঙ্কিত ইয়াসমিন
  • স্ত্রীর সামনে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার নেই
  • স্ত্রীর সামনে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, মামলা পরও গ্রেপ্তার নেই
  • ধামরাইয়ে দিনদুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা
  • জাবিয়ান ফুটসাল কার্নিভাল শুরু
  • ফুল দিতে যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের ভিডিও করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা
  • এমসি কলেজে শিক্ষার্থীকে পেটানোর প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫০