মৌলভীবাজারের ‘গলফ মাঠ’ এক টুকরা সবুজ ঘাসের দেশ
Published: 23rd, February 2025 GMT
মৌলভীবাজারের শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কটি গেছে শমশেরনগর চা-বাগানের ভেতর দিয়ে। সড়কের দুই পাশে চা-বাগানের গাছ, সারি সারি ছায়াবৃক্ষ। দু–চারটি বট-অশ্বত্থেরও দেখা পাওয়া যায়। কোথাও চা-শ্রমিকদের লাইন (চা-শ্রমিকদের বসবাসের ঘরবাড়ি), লাইনে মানুষের শান্ত জীবন। চা-বাগানটি পড়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে।
সম্প্রতি টমটমে শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়ক দিয়ে কিছুটা পূর্ব দিকে গিয়ে চা-বাগানের একটি জায়গায় থামতে হয়েছে। ওখান থেকে দক্ষিণ দিকে একটি আধা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে ঝাঁকুনিতে হেলেদুলে গাড়ি চলছে সামনের দিকে। প্রায় আধা কিলোমিটারের কাছাকাছি দূরত্বে গিয়ে হঠাৎ চোখের সামনে বিশাল, প্রশস্ত এক টুকরা সবুজ হৃদয় উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। উঁচু-নিচু টিলামতো স্থানটিতে ঢেউ খেলছে ঘাসের সবুজ।
স্থানীয় লোকজন জানান, এটা হচ্ছে শমশেরনগর চা-বাগানের ভেতর ‘গলফ মাঠ’। কিছু তরুণ-তরুণী, শিশু ও নারী-পুরুষ মাঠটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের মতো করে ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ছায়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আলাপ-সালাপে সময় কাটাচ্ছেন।
চা-বাগানের ভেতরই গলফ মাঠটি। মাঠজুড়ে বিছানো সবুজ চাদর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গেছে। কোথাও কিছুটা সমান, তারপর ঢালু হয়ে আবার সমান হয়ে গেছে। অনেকটা প্রান্তরজুড়ে এই সবুজের বিস্তৃতি। এক টিলায় আটকে নেই এই খোলা সবুজ হৃদয়। কয়েকটি টিলা এ রকম ঘাসে ঘাসে গাঁথা হয়ে আছে।
শমশেরনগর চা-বাগানের বাসিন্দা, কৃষি উদ্যোক্তা ও সংগঠক মোহন রবিদাস জানালেন, তখন ব্রিটিশ শাসনের যুগ। ১৮৪৮ সালে শমশেরনগর চা-বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই সময় ব্রিটেন থেকে আসা লোকজনই বাগান চালাতেন। তাঁরা অন্যকিছু খেলতেন না, ‘গলফ’ খেলতেন। এই সবুজ মাঠটি সেই ব্রিটিশদেরই তৈরি। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা এই বাগান থেকে চলে গেছেন। কিন্তু চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সৌন্দর্যের জন্য মাঠটিকে অপরিবর্তিত অবস্থাতেই রেখে দিয়েছে। মাঠটি তাই সবুজের প্রশস্ত হৃদয় হয়ে এখনো টিকে আছে। এক টুকরা ‘সবুজ ঘাসের দেশ’ হয়ে মানুষকে স্বস্তি দিয়ে চলছে। মাঝেমধ্যে চা-কোম্পানির ঊর্ধ্বতন লোকজন গলফ খেলতে এখানে আসেন। বাগান ব্যবস্থাপকেরাও এই মাঠে গলফ খেলে থাকেন। তখন মাঠটিকে রঙিন কাগজে সাজিয়ে তোলা হয়। মাঠে উৎসবের রং লাগে।
মোহন রবিদাস প্রথম আলোকে বলেন, গলফ মাঠে এমনি অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। বিকেলেই বেশি লোকজন আসেন। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, এই সবুজমাখা মাঠ মানুষকে নীরবেই টানে। শীত, হেমন্ত ও বসন্তে এখানে গা-জুড়ানো রোদে ভিজে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখার নির্মল আনন্দ হয়তো অনেকে খুঁজেন। চা-বাগানের টিলা পেরিয়ে সূর্য যখন লাল হয়ে দূরের দেশে চলে যায়, কুয়াশায় জড়িয়ে পড়ে আলো। সেই কুয়াশা, সেই আলোরও আছে ভিন্নতর মায়া। আহলাদি সবুজের সঞ্চয় নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন। সে প্রকৃতির যেকোনো মৌসুমই হোক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে জাবিতে গাজার মানচিত্র এঁকে গণহত্যার অভিনব প্রতিবাদ
বর্ষবরণের দিনে নানা উৎসবে মেতেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এরই মাঝে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে গাজার প্রতীকী মানচিত্র এঁকে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাবির একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনের মাঠে তারা এ মানচিত্র অঙ্কন করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টিএসসির সামনের মাঠে অঙ্কিত এ মানচিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে নিমার্ণাধীন ভবনের পরিত্যক্ত কংক্রিট। সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা রঙে। এছাড়া লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে সেইসব অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। মানচিত্রের মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। এছাড়া শান্তির প্রতীক হিসেবে রোপণ করা হয়েছে একটি জলপাই গাছ।
আরো পড়ুন:
জাবিতে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
জাবিতে চালু হলো ইলেকট্রিক কার্ট, কমবে দুর্ভোগ
দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতীকী মানচিত্রের উদ্বোধন ও ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ সময় প্রতিবাদ কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা ৪৮তম ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আজ আমরা যেমন আনন্দের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করেছি, তেমনি গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সেখানকার মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এই মানচিত্র নির্মাণ করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সামাজিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ আমরা চালিয়ে যাবো।”
উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “এই আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের মানবিক বোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতার অনন্য দৃষ্টান্ত। একটি রাষ্ট্রের নিরীহ জনগণের ওপর যখন নির্বিচারে হামলা চলছে, তখন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নীরব থাকা নয়, বরং প্রতিবাদ জানানোই দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। এই প্রতীকী মানচিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা ন্যায় ও মানবতার পক্ষে তাদের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী