ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের হাতে থাকা একজন জিম্মির মরদেহ ঘিরে সংগঠনটি ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা বেড়েছিল। এ নিয়ে হামাস দুঃখ প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলের কাছে সঠিক জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গত মাসে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে কয়েক দফায় জিম্মি ও জিম্মি ব্যক্তিদের মরদেহ ইসরায়েলে ফেরত পাঠাচ্ছে হামাস। এর বিপরীতে ইসরায়েলের কারাগারগুলোয় আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যেই অঘটন ঘটে গত বৃহম্পতিবার। ওই দিন প্রথমবারের মতো চার জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলে ফেরত পাঠানো হয়। এই চার জিম্মি হলো দুই শিশু কেফির বিবাস ও অ্যারিয়েল বিবাস (৪)। শিশু দুটির মা শিরি বিবাস (৩২)। চতুর্থ যে জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে, তিনি ওদেদ লিফশিৎজ (৮৩)।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে এক আয়োজনে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে এই চারজনের মরদেহ তুলে দেয় হামাস। পরে চারটি মরদেহ ইসরায়েলে নেওয়া হয়।

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু মরদেহ দেশে ফেরানোর পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, কফিনে শিরি বিবাসের মরদেহ ছিল না। বরং অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মরদেহ কফিনে করে পাঠিয়েছে হামাস।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, দেশে ফেরানোর পর চারটি মরদেহ পরীক্ষা করে দেখেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। পরে তাঁরা জানান, তিনটি কফিনে কেফির, অ্যারিয়েল ও লিফশিৎজের মরদেহ ঠিকঠাক আছে। তবে শিরির কফিনে যে মরদেহ এসেছে, সেটা ওই ইসরায়েলি নারীর নয় বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে।

এ নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ চরমে পৌঁছায়। ঘটনাটিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘নিষ্ঠুর ও অসৎ’ লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ কাজের জন্য হামাসকে ‘পুরো মূল্য’ চোকাতে হবে।

একদিন পর, অর্থাৎ গত শুক্রবার হামাসের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। হামাস জানায়, ভুলবশত অন্য কারও মরদেহ পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। এ–সংক্রান্ত তদন্তের ফলাফল ‘স্পষ্টভাবে’ ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে হামাস।

তবে এই ভুলের জন্য ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকেই দুষেছে হামাস। সংগঠনটি বলেছে, ওই পরিবারকে (বিবাস পরিবার) গাজায় যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানে আরও ফিলিস্তিনি ছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে বোমা হামলা চালিয়ে অনেককে হত্যা করেছে। তাই মরদেহ নিয়ে এই ভুল হয়ে থাকতে পারে।

রেডক্রস জানিয়েছে, শুক্রবার হামাসের কাছ থেকে তারা আরও একটি মরদেহ বুঝে পেয়েছে। হামাস নিশ্চিত করেছে যে এবার আর ভুল হয়নি। এটা শিরি বিবাসের মরদেহ।

গতকাল শনিবার আল-জাজিরার লাইভ সংবাদে বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, নতুন মরদেহটি শিরি বিবাসের। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিবাস পরিবারের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিবাস পরিবারের চার সদস্য ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের কিবুতজ নির ওজ এলাকা থেকে হামাসের হাতে জিম্মি হন। তখন কেফিরের বয়স ছিল ৯ মাস। জিম্মি করা হয় কেফির ও অ্যারিয়েলের বাবা ইয়ারদেন বিবাসকেও।

আরও পড়ুনইসরায়েলি আগ্রাসনে পশ্চিম তীরে ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বাস্তুচ্যুতি১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনহামাসের হস্তান্তর করা চার মরদেহের একটি কোনো জিম্মির নয়, দাবি ইসরায়েলের২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত বছরের নভেম্বরে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় জিম্মি ওই মা ও দুই শিশু নিহত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কখনোই তাঁদের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেনি। এমনকি শেষ মুহূর্তেও ইসরায়েলের কেউ কেউ তাঁদের মৃত বলে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান।

এর আগে চলতি মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজা থেকে মুক্তি পান ইয়ারদেন বিবাস। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই শিশু ও মায়ের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার তাদের অপেক্ষার প্রহর ঘুচলেও শিরির মরদেহ নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়।

আরও পড়ুনগাজায় দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলতি সপ্তাহে আলোচনা শুরু করবে ইসরায়েল১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনমা ও দুই শিশুসহ চার জিম্মির মরদেহ গাজা থেকে ইসরায়েলে ফিরল  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম ম র মরদ হ ইসর য় ল র ক পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপনে নির্বাচনী তৎপরতা, ফাঁস হওয়ায় সমালোচনা

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি। অথচ অধিকাংশ সদস্যই জানেন না কবে, কখন বা কীভাবে হচ্ছে নির্বাচন। গোপনে নির্বাচনী তৎপরতার খবর ফাঁস হয়ে পড়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি নামে একটি সংগঠনে।

সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৪৩। তাদের মধ্যে কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর  বজলুর রশিদ নান্নু, ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল খাঁ, সাকলায়েন মুরাদসহ অন্তত ৩০ জনের দাবি, তাদের ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাচন নিয়ে কিছুই জানেন না তারা। সংগঠনের এজিএম বা বার্ষিক সাধারণ সভা করা হয়নি। এখন সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু কোনো নিয়ম ছাড়াই কীভাবে নির্বাচন হবে, তা তাদের বোধগম্য না।

ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের জন্য ৩০ জানুয়ারি তপশিল ঘোষণা করা হয়। তপশিলের কপি সংগঠন ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসের নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর কথা। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বিক্রির দিন সংগঠন ও সমাজসেবা অফিসে গিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি  কোনো নোটিশ বোর্ডও দেখা যায়নি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, ডা. ইউনুচ আলী ও সাজ্জাত হোসেন নামে তিনজনকে নিয়ে এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিটি করা হয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত ১৫টি পদের মধ্যে ৪টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। সভাপতি পদে দু’জন, সাধারণ সম্পাদক পদে একজন ও সহসাধারণ সম্পাদক পদে একজন মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সদস্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের ভাষ্য, সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্তরা সদস্যদের তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার জন্য বলেছিলেন। এ মর্মে তিনি একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন। সংগঠনটি কীভাবে এজিএম করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা জানেন না তিনি। এখন এই নির্বাচন নিয়ে নানা জটিলতা সামনে এসেছে। এসব কারণে নির্বাচন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

বণিক সমিতির কমিটি নিয়ে বিতর্ক : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মতামত না নিয়ে গোপনে পৌর শহরের বাজার বণিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। শনিবার সকালে মঠবাড়িয়া পৌরসভার সামনের সড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন কবির, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ, ব্যবসায়ী ওয়ালিউল ইসলাম, জাকির খান, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, নিজামুল কবির মিরাজ, তুষার আহমেদ, রতন কর্মকার প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ-জামায়াত মিলে ইদ্রিস আলী মহারাজকে সভাপতি ও কামরুল ইসলাম রিপনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শামীম মিয়া মৃধা ও উপজেলা জামায়েতের আমির অধ্যাপক জলিল শরীফকে দায়ী করেন তারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শামীম মিয়া মৃধা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নামধারী কতিপয় সুবিধাবাদী নেতা আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। আমাকে ও জামায়াত নেতা জলিল শরীফকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি এবং সহযোগিতা করেনি। বণিক সমিতি নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করে এ কমিটির মাধ্যমে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপনে নির্বাচনী তৎপরতা, ফাঁস হওয়ায় সমালোচনা
  • জিম্মিদের একসঙ্গে মুক্তি দিতে ‘রাজি’ হামাস
  • বিআইএ’র নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন যারা
  • ‘বই অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যতের যোগসূত্র তৈরি করে’
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাইরে কর্মিসভা করবে ছাত্রদল
  • শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রদ্ধা
  • ফল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি আমদানিকারকদের