জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়েছেন রাবাব সায়েরা। স্নাতক শেষে আর সব বন্ধুর মতোই চাকরিতে যোগ দেন তিনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ–জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রেনিং (বি-জেট) নামে একটি প্রোগ্রামের খোঁজ পেয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেন। কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন জাপানি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য ইন্টারভিউ দেন। অবশেষে চাকরি নিয়ে ২০২২ সালে জাপানে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। হোয়াটসঅ্যাপে রাবাব বলেন, ‘আমি এখন জাপানে আছি। সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছি। জাপানের কর্মবাজারের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম বি-জেট থেকে। দেশে বসেই জাপানি ভাষা ও কাজের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখন জাপানের কাওয়াসাকি সিটিতে ডেটা সায়েন্স ও এআই সফটওয়্যার ফার্মে সিস্টেম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছি।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও জাপানের মিয়াজাকি ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে নর্থ সাউথ ক্যাম্পাসে কাজ করছে বি-জেট সেন্টার। অনেক তরুণই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাগ্য গড়ছেন। এ প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক কর্মবাজারের জন্য তৈরি হচ্ছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-জেট সেন্টার দেশের কম্পিউটার প্রকৌশল ও আইসিটি নিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জাপানের মতো উন্নত দেশের কর্মবাজারের জন্য তৈরি করছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জাপানের বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক মান অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তৈরির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন‘অনেক চাকরি নিয়ে বসে আছি, কিন্তু লোক পাচ্ছি না’১৯ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনবাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা যেভাবে বিসিএসের ভাইভাতেও কাজে লাগল০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বি-জেট সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে পাড়ি দিয়েছেন—এমন আরও এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ হলো। নাম এস এম ইশতিয়াক আহমেদ। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ২০২১ সালে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক হয়েছেন তিনি। বলছিলেন, ‘জাপানের মিয়াজাকিতে আছি প্রায় তিন বছর। একজন ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার হিসেবে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের ফ্রন্টএন্ড ও ব্যাকএন্ড নিয়ে কাজ করি। বি-জেট ট্রেনিং থেকে আমি মূলত জাপানে বসবাস ও কর্মজীবনের মৌলিক দিকগুলো শিখেছিলাম। যেমন প্রাথমিক ভাষাগত দক্ষতা, ব্যবসায়িক যোগাযোগের শিষ্টাচার, জাপানি কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপায় ইত্যাদি। বিশেষ করে জাপানের অফিসের পরিবেশ, সময়নিষ্ঠা ও পেশাদারির ব্যাপারে যে ধারণা পেয়েছিলাম, তা এখন আমার বেশ কাজে লাগছে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও জাপানের মিয়াজাকি ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে নর্থ সাউথ ক্যাম্পাসে কাজ করছে বি-জেট সেন্টার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন য ক জ করছ ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মাংসের বিকল্প তৈরির চেষ্টা করছে জার্মান স্টার্টআপ

জার্মানির একটি স্টার্টআপ মাংসের বিকল্প তৈরির চেষ্টা করছে, যা খেতে সুস্বাদু হবে। আরেক স্টার্টআপ একটি সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা করছে, যেটি দিয়ে গাছের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখা যাবে। এই দুই স্টার্টআপের কাজ নিয়ে ইতিমধ্যে ইউরোপে আগ্রহ দেখা দিয়েছে।

সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা স্টার্টআপটির নাম ‘গ্রিনহাব’। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার ইয়াভরস্কি জানান, তাঁদের লক্ষ্য বিশ্বের সবার জন্য তাজা খাবার নিশ্চিত করা।

বার্লিনের স্টার্টআপ ‘এসেনসিয়া ফুডস’ মাংসের বিকল্প তৈরি করছে। ‘সলিড-স্টেট ফার্মেন্টেশন’ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মাশরুমের শিকড় মাইসেলিয়াম থেকে এই বিকল্প মাংস তৈরি করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা হেন্ডরিক কায়ে বলেন, ‘আমরা বলছি, সবার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকা দরকার। সব পরিবার যেন এটা পেতে পারে, এমনকি নিম্ন আয়ের দেশের মানুষও যেন পায়।’

এসেনসিয়া ফুডসের আরেক প্রতিষ্ঠাতা আর্জেন্টিনার ব্রুনো স্কোকোসা। বায়োফিজিকসে পিএইচডি করেছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি একজন শেফও। মাশরুম দিয়ে মাংসের একটি ভালো বিকল্প তৈরি করতে চান স্কোকোসা। কারণ, বর্তমানে যে ভেগান বিকল্প পাওয়া যায়, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন।

স্কোকোসা বলেন, ‘উদ্ভিদভিত্তিক যেসব বিকল্প আছে, তার অনেকটির সমস্যা হচ্ছে। সেগুলোতে প্রোটিন পাউডার ব্যবহার করা হয়, যেটা খেতে সুস্বাদু নয়। তাই ওই স্বাদে পরিবর্তন আনতে অনেক মসলা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আমরা এমন কিছু ব্যবহার করছি না, যেটার স্বাদ পরিবর্তন করতে হবে।’

ক্লারা কোম্পানির একজন খাদ্যবিজ্ঞানী। তিনি নতুন পণ্য উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যেমন এই ভেগান ড্যোনার কাবাব। সামান্য মসলা ছিটানোর পরই এটি খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায়।

ক্লারা বলেন, এটি আসলে বহুমুখী। বিভিন্ন ধরনের পণ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন সসেজ হিসেবে খাওয়া যায়। এ ছাড়া ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত করতে হয় এমন সব খাবার, যেমন কিমা করা মাংস, কাবাবের স্ট্রিপ—যেমনটা এখানে দেখতে পাচ্ছেন, মুরগির টুকরা ইত্যাদি হিসেবেও খাওয়া যায়।

গাছের স্বাস্থ্য রক্ষায় সফটওয়্যার

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে লাইপজিগের স্টার্টআপ গ্রিনহাব। খরা ও অতি বৃষ্টির কারণে ঘরে জন্মানো সবজির কোনো সমস্যা হয় না। তবে গ্রিনহাব একটি সফটওয়্যার তৈরি করছে, যা দিয়ে এসব সবজির বৃদ্ধির ওপর নজর রাখা যায়।

গ্রিনহাবের সহপ্রতিষ্ঠাতা কাই প্লাট জানান, সফটওয়্যারটা আসলে মালির মতো কাজ করে। এটা গাছের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখে। পুষ্টির মাত্রার মতো পানির প্যারামিটার থেকে শুরু করে এটি গাছের সামগ্রিক অবস্থা মূল্যায়ন করে থাকে।

তবে সফটওয়্যারটি এখনো অভিজ্ঞ মালির মতো হয়ে উঠতে পারেনি। সে কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিতে চায় গ্রিনহাব। তাই এখন গাছের সর্বোচ্চ পরিচর্যার জন্য প্রয়োজন এমন সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেমন আলো, পুষ্টি ও আর্দ্রতার সঠিক মাত্রা কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি।

গ্রিনহাবের আরেক প্রতিষ্ঠাতা ইয়াভরস্কি বলেন, ‘এগুলো বেশ জটিল প্রক্রিয়া। কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত চমক নিয়ে আসে। যেমন গাছ হয়তো ছত্রাক সংক্রমণের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তেমনটা হলে কী করতে হবে, সেই সমাধান এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই।’

তারপরও জার্মানির দুটি বড় গবেষণা সংস্থা গ্রিনহাবের সফটওয়্যার নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন উদ্ভিদের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা জানতে এটি ব্যবহার করতে চায় তারা। এসেনসিয়া ফুডসের মাংসের বিকল্পের প্রতিও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। একটি জার্মান সুপারমার্কেট চেইন ইতিমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাই কোম্পানিটি এখন উৎপাদন বৃদ্ধির পথ খুঁজছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাংসের বিকল্প তৈরির চেষ্টা করছে জার্মান স্টার্টআপ