গোপালগঞ্জে ১৯ বছর পর বিএনপির সমাবেশ, ব্যাপক প্রস্তুতি
Published: 23rd, February 2025 GMT
গোপালগঞ্জে ১৯ বছর পর আগামীকাল সোমবার জনসভা করবে বিএনপি। এই জনসভা ঘিরে শহরজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ।
আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে খ্যাত গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কের মুক্তমঞ্চে এদিন সকাল ১০টায় সমাবেশের আয়জন করেছে দলটি। গোপালগঞ্জ শহরসহ জেলার আনাচে কানাচে দেখা যাচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন ও তোরণ। নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী আওয়ামী লীগের ৩ মেয়াদে বিএনপিকে প্রকাশ্যে কোনো মিছিল মিটিং করতে দেখা যায়নি। ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমেই বিএনপির কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপি ও জামায়াত প্রকাশ্যে রাজপথে শোডাউন ও মিছিল সমাবেশ করছে। এটি বিগত প্রায় ১৬ বছরে দেখা যায়নি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ও জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অংশ হিসেবে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন ও প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) খন্দকার মাশুকুর রহমান, সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেহবাহ। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকউজ্জামান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন ও জেলা বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন হিরা।
এদিকে সমাবেশ সফল করতে ও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা, প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করে চলছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ শহরের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০০৪ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বশেষ ফরিদপুর বিভাগীয় ইউনিয়ন সভা করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে জনসভা নামে পরিবর্তন করা হয়। ১৯ বছর পর আগামীকাল সোমবারের এ জনসভায় নেতাকর্মীরা ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটাতে চাইছে।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও তৎকালীন প্রশাসনের বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনায় গোপালঞ্জে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশকে সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিমসহ অন্যরা দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা উন্মুক্ত কাজ করতে পারিনি। তাই ২৪ তারিখের সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ রফিকউজ্জামান বলেন, ‘বিগত দিনে আওয়ামী লীগ ও তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে বিএনপির কন্ঠ রোধ করা হয়েছিল। আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিরলসভাবে বিএনপিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আশা করি, প্রায় ৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ ব এনপ ব এনপ র স ব এনপ র ক গ প লগঞ জ ন ত কর ম আওয় ম রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিকে অস্থির অবস্থায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিকে আর অনিশ্চিয়তার মধ্যে না রেখে দয়া করে দ্রুত নির্বাচন দিন। যতটুকু দরকার, ততটুকু সংস্কার করেন। কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচন দেন, ভোটের একটা রোডম্যাপ জনগণকে জানিয়ে দেন। দেশটাকে অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিবেন না। আমি অনুরোধ করবো, জাতিকে অস্থির অবস্থায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন। যে সরকার গঠিত হবে, তার পেছনে জনগণ থাকবে। জনগণ না থাকলে সে সরকার কাজ করতে পারবে না। তাই জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বলবো, আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না; যাতে জাতির ঐক্য নষ্ট হয়। এই মুহুর্তে দেশে ঐক্যের বড় প্রয়োজন। এই ক্রান্তিকালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে দিল্লিতে বসেও ষড়যন্ত্র করছে। ভারত আমাদের বৃহত্তর প্রতিবেশি। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এখন আমাদের দরকার এই সরকারকে সমর্থন করা।
লাকসাম মনোহরগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় সবচেয়ে বেশী অত্যাচারের শিকার হয়েছে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের মানুষ। রীতিমতো ভয়াবহ ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল এখানকার সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সে এখন কোথায় পালিয়েছে, কেউ জানে না। এ সময় মঞ্চে ছিলেন গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান ও হুমায়ুন পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলাম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। শেখ মুজিব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার শাসনামলে সব শেষ করে দিয়েছে। কেউ ভোট দিতে পারেনি। ভোটের আগের রাতে সিল মেরে আওয়ামী লীগের সবাইকে নির্বাচিত করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনটা ছিল ডামি নির্বাচন। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। এই সময় তারেক রহমান একটা স্লোগান দিয়েছিল ‘টেক ব্যাক’। আরেকটা স্লোগান দিয়েছিল, ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’। ঠিকই রাজপথে ফয়সালা হয়েছে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা হিরু-হুমায়ূনের সন্তানদের কথা স্মরণ করিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছিল। তার মধ্যে সিলেটের নেতা ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২ হাজার মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তাই তাকে জেল খাটতে হয়েছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সংস্কার-সংস্কারের কথা বলছেন, সত্যিকার অর্থে আপনারা বলেন তো; মানুষ সংস্কার বলতে কতটুকু বুঝে। মানুষ বুঝে, দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, মোটা কাপড়, মাথার উপরে ছাদ, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া- এগুলোই হলো সংস্কার। এখন যে ব্যবস্থা চলছে, তাতে শান্তি আসবে না। রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তাতেই সমাধান আছে। দয়া করে দেশকে আর নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবেন না। সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যখন আন্দোলন চলে তখন জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেনাবাহিনী।
জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। দলটির কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালামের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার, সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলা-উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসামে জনসভায় হাজারো নেতাকর্মীর ঢল নামে।