খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে ঢাকায় যাচ্ছেন। আজ রোববার সকালে ক্যাম্পাস থেকে ভাড়া করা দুটি বাসে তাঁরা রওনা হয়েছেন।

সকাল আটটার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বাস দুটি রওনা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, এই ক্যাম্পাস তাঁদের জন্য নিরাপদ নয়। তাঁরা এখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তাঁরা তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে যাবেন। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না পর্যন্ত তাঁরা আর ক্যাম্পাসে ফিরে আসবেন না।

এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘রক্ত যখন ঝরেছিল, প্রশাসন তখন কোথায় ছিল’, ‘সন্ত্রাসীরা বাইরে কেন?’, ‘নিরাপদ ক্যম্পাস চাই’, ‘নিরাপত্তা দিতে পারে না—এমন ভিসি চাই না’, ‘মাসুদ হটাও, কুয়েট বাঁচাও’ প্রভৃতি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাঁদের চোখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।

ঢাকায় যাওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের স্মারকলিপি গণমাধ্যমে দিয়েছি, আন–অফিশিয়ালি পৌঁছানোরও চেষ্টা করেছি। তারপরও আমরা সরকার থেকে কোনো সাড়া পাইনি। কুয়েট ক্যাম্পাসে আমরা নিরাপদ নই। এই হামলার পর যেখানে সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা সার্বক্ষণিক আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেখানে গেটগুলোয় কুয়েটের গার্ড ছাড়া কেউ নেই। বহিরাগত ব্যক্তিরা অবাধে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছে। আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করে যাচ্ছি। আমরা খুবই আতঙ্কিত।’

তিনি জানান, তাঁরা দুটি বাসে করে ৮০ থেকে ১০০ জন প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া জন্য যাচ্ছেন। বাসভাড়া নিজেরাই বহন করছেন।

আরও পড়ুনকুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের মামলা, আসামি অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কুয়েট প্রশাসন থেকে বাসের জন্য সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সহায়তা করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তাই আমরা চোখে লাল কাপড় বেঁধে টোটালি শাটডাউন করে বাসায় চলে যাচ্ছি। আমাদের সব দাবি পূরণ হওয়ার আগপর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চলবে না। একই সঙ্গে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য যাচ্ছি। সেখান থেকে আমরা যার যার বাসায় চলে যাব। আমাদের বাকি কার্যক্রম অনলাইনে চলবে।’

এর আগে গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তার আগে বিকেলে ‘রক্তাক্ত কুয়েট ১৮.

০২.২৫’ শিরোনামে ছবি প্রদর্শনী করা হয়। ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীতে আহত শিক্ষার্থীদের ছবি ও শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করা হয়।

আরও পড়ুনকুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত মঙ্গলবার ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতে সংবাদ সম্মেলন করে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার বেলা একটার মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দেন তাঁরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। সভায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ওই ঘটনার তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই ঘটনায় বুধবার রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন। ওই মামলায় বিএনপি ও যুবদলের চার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প উপ চ র য র জন ত আম দ র ন র পদ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পা-চাপা দিয়ে শহর ঘোরানোর পর ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত

নাটোরে ছাত্রলীগের কর্মীকে নির্যাতনের ঘটনায় কলেজ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজ (এন এস কলেজ) ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নাটোর জেলা শাখার অধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কলেজ শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। বিজ্ঞপ্তিটি গতকাল রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, গত রোববার দুপুরে নাটোর শহরের কানাইখালি মহল্লায় জেলা ছাত্রলীগের কর্মী ফয়সাল হোসেনকে (২৫) অটোরিকশায় ওপর করে শুইয়ে পা চেপে নির্যাতন করা হয় এবং প্রকাশ্যে শহরের রাস্তায় ঘোরানো হয়। এই দৃশ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ওই ঘটনায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি এস এম জুবায়েরসহ তাঁর অনুসারী কিছু ছাত্রদল নেতা-কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা খায়রুল আলম বাদী হয়ে জুবায়েরসহ ছাত্রদলের পাঁচ নেতা-কর্মীর নামে সদর থানায় মামলা করেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নজরে এলে দ্রুত ঘটনাটি তদন্ত করে। এরপর কলেজ ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন বলেন, এন এস কলেজ ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা অবগত হয়েছেন। কাউকে ধরে মারপিট করার নির্দেশনা দল থেকে দেওয়া হয়নি। তাই ছাত্রলীগের কর্মী ফয়সালকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে যেটা করার, কেন্দ্র তাই করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ