গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। সেই ক্রিকেটে আজকাল আইসিসির কোনো ইভেন্ট মানেই একটি বিষয় নিশ্চিত—ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। আইসিসি কী করে যেন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে একই গ্রুপে ফেলার কায়দাকানুন রপ্ত করে ফেলেছে। সেটি না করে অবশ্য সংস্থাটির কোনো উপায় নেই! ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ তো তাদের জন্য সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই তাই প্রতিটি আইসিসি ইভেন্টে গ্রুপ পর্বে দেখা হয়ে যায় ভারত ও পাকিস্তানের। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও আজ যেমন আবার দেখা হচ্ছে দুই দলের।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি একটু উত্তেজনা। এবার সেই উত্তেজনা একটু বেশি হওয়ারই কথা। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে কম জল তো ঘোলা হয়নি এবার। ২৯ বছর পর দেশের মাটিতে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বত্ব পাকিস্তান পেয়েছিল বেশ আগেই। তবে ‘ভারত যাবে তো পাকিস্তানে’—এই প্রশ্নটার জন্মও সেই দিন।

প্রশ্নটার উত্তরও তো সেই কবেই জানা হয়ে গেছে। ভারত যাচ্ছে না পাকিস্তানে। বরং স্বাগতিক পাকিস্তানই আরব সাগর পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে গেছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। সেটি না করে অবশ্য উপায় ছিল না দলটির। হাইব্রিড কাঠামোর টুর্নামেন্টে রাজি না হলে যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজক স্বত্ব হারানোর উপক্রম হয়েছিল।

ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইয়ে আয়োজন করেই সেই শঙ্কা দূর করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সেই দুবাইয়েই আজ বড় এক শঙ্কা সঙ্গী করে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান। করাচিতে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারা দলটি জন্য আজকের ম্যাচটি প্রায় নকআউটই হয়ে গেছে। আজ যদি পাকিস্তান হারে, আর আগামীকাল নিউজিল্যান্ড হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে, তাহলেই নিজের দেশের টুর্নামেন্টে দর্শক হয়ে যাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান।

দুবাইয়ে কাল পিচ পরীক্ষা করে দেখছেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিটি দায়সারা

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির একটি খসড়া তৈরি করে নাগরিকদের মতামত চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাড়াহুড়ায় করা প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি দায়সারা হয়েছে। এতে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। বরং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা করবে এবং তারা আরও বেশি মুনাফাভোগী হবে। জনগণের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ বাড়বে।

উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) উদ্যোগে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির একটি খসড়া নিয়ে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ রোববার বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে উপস্থাপন করা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে সব সময় সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যায়। এর ফলে এ খাতের সফলতা অধরা থেকে যাচ্ছে এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালাটি প্রণয়নে সরকার বেশ তাড়াহুড়ো করছে। আগের সরকারের সময় করা খসড়া কিছুটা কাটছাঁট করে এটি তৈরি হয়েছে। সরকারের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালায় আলাদা পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাই সবার আগে জাতীয় জ্বালানি নীতিমালা তৈরি করা দরকার।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, নীতিমালার খসড়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনাগুলো খুবই অস্পষ্ট। কোন উৎস থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, তা উল্লেখ করা নেই। শুধু কার্বন নিঃসরণ নয়, অর্থনৈতিক বিবেচনাতেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ দরকার। বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তির দাম কমছে। এতে এ খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে আসছে। সরকারের তরফ থেকে শুধু বাস্তবসম্মত নীতি সহায়তা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, সরকার একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে চার বছরের বেশি সময় নিয়েছে। আর মতামত দিতে নাগরিকদের মাত্র ২১ দিন সময় দিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, খসড়া নীতিমালাটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য কমানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ হাজার ১৪৫ মেগাওয়াট (২০%) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট (৩০%) ধরা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল বা অর্থায়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা খসড়ায় নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানিগুলো ১০ বছর সম্পূর্ণ এবং ৫ বছর আংশিক কর অব্যাহতি পেলেও সাধারণ নাগরিকেরা কোনো কর–সুবিধা বা প্রণোদনা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে অন্যান্য দেশে ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনে সরাসরি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমন কোনো সুবিধা রাখা হয়নি।

ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের সমন্বয়কারী বারিশ হাসান চৌধুরী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার সংজ্ঞাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর। এতে কার্বন নির্গমন হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছে, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এই নীতিমালা একধরনের দিকনির্দেশনাহীন নৌকার মতো, যা বাস্তবে কার্যকর ফল দিতে পারবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ