সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোট নয়
Published: 23rd, February 2025 GMT
সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে না করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থানীয় সরকার সংস্থায় শুধু সদস্য বা কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদস্যরা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশও করেছে কমিশন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে জেলা পরিষদের সদস্যদের জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সদস্যদের ভোটে তাঁদেরই একজন নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ হবে ‘পরিকল্পনা ইউনিট’। আর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে ‘বাস্তবায়ন ইউনিট’।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গত বুধবার সংস্কারের ‘প্রাথমিক সুপারিশমালা’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়। গতকাল শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে কমিশনের দেওয়া ওই সুপারিশ গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া হয়। সেখানে ১৪টি ক্ষেত্রে মোট ২১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা পাঁচটি কমিশনের মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রাথমিক সুপারিশ জমা দিয়েছে।
সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান—ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য পৃথক আইন ও বিধিমালা বাতিলের সুপারিশ করেছে। বলা হয়েছে, ‘এসব আইন ও বিধিসমূহ বাতিল করে সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি একীভূত এবং স্থানীয় সরকার আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে একটি আইনের অধীন আনা এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য আরেকটি আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই সদস্যদের ভোটে তাঁদেরই একজন নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ হবে ‘পরিকল্পনা ইউনিট’। আর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে ‘বাস্তবায়ন ইউনিট’।মৌলিক এ দুটি আইনের অধীন একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীন আনার সুপারিশ করা হবে। এতে নির্বাচনী ব্যয় ও সময় কমবে।
সুপারিশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো দুটি প্রধান অংশে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। একটি বিধানিক অংশ, দ্বিতীয়টি নির্বাহী অংশ। বিধানিক অংশে প্রধানকে বলা হবে সভাধ্যক্ষ। তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো দায়িত্ব পালন করবেন। আর নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন মেয়র বা চেয়ারম্যান।
নির্বাচিত কাউন্সিলর বা সদস্যরা পরিষদের প্রথম সভায় ভোট দিয়ে একজন সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত করবেন। পরে সভাধ্যক্ষের সভাপতিত্বে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। কাউন্সিলররা বা সদস্যরা নিজেদের মধ্যে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। আর নির্বাচিত মেয়র বা চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে আইন অনুযায়ী তিন বা পাঁচ সদস্যের ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠন করবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা চেয়ারম্যান ও মেয়রের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস অগ্রাধিকার পাবে।
জুনের মধ্যে নির্বাচনসুপারিশে সংস্কার কমিশন বলেছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করতে হবে। এরপর জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা যেতে পারে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ আইনকেও সংসদীয় কাঠামোতে সংস্থাপিত করে আইন সংশোধন করে জুনের মধ্যেই পাহাড়ের দুটি পরিষদের নির্বাচনও শেষ করা যেতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে। তাই মূল সুপারিশগুলো তাঁরা সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পরে জমা দেওয়া হবে।স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদগ্রাম আদালতের বিলুপ্তিসুপারিশের স্থানীয় বিচারব্যবস্থা অংশে ইউনিয়ন পরিষদের অধীন থাকা গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়, কমিশনের বিচারবিষয়ক প্রধান সুপারিশ হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশের সব উপজেলায় আগামী দুই বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করা। পাশাপাশি একই পদমর্যাদায় প্রতিটি উপজেলায় ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর)’ জন্য একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নিয়োগ এবং এর পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা। ইউনিয়ন পরিষদের অধীন ‘গ্রাম আদালত’ বিলুপ্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিসি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান এবং সালিসগুলোর তত্ত্বাবধান, সালিসকারীদের প্রশিক্ষণ ও সালিসের আপিল শুনানির জন্য এডিআর আদালতের বিচারকের এখতিয়ার ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে। তাই মূল সুপারিশগুলো তাঁরা সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পরে জমা দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ন র জন য সরক র র উপজ ল সদস য প রসভ গঠন ক ইউন ট করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমাকে কেন বাজে কথা শুনতে হলো, প্রশ্ন কাজী মারুফের
গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে সিনেমা দেখে বের হওয়ার সময় বরেণ্য নির্মাতা কাজী হায়াতের গাড়ি আটকে রাখেন শাকিব ভক্তরা। এরপর কাজী হায়াৎ গাড়ি থেকে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে ‘তুমি কে আমি কে, শাকিবিয়ান, শাকিবিয়ান’ বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা। কেবল তাই নয়, এই পরিচালকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় শাকিব ভক্তদের।
এ ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করেন কাজী হায়াতের পুত্র চিত্রনায়ক কাজী মারুফ। প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী, ডিপজলও। তারপরও কাজী মারুফ, কাজী হায়াতকে নিয়ে ট্রল করছেন নেটিজেনরা। এসব নজরে পড়েছে আমেরিকা প্রবাসী কাজী মারুফের। ফের এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
কাজী মারুফ বলেন, “আমি আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বসবাস করি। আমি কি বাংলাদেশ সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য? আমি কি ‘বরবাদ’ সিনেমার কেউ? কার সিনেমা আসলো কার আসলো না এতে আমার কি কোনো লাভ-ক্ষতি আছে? আমি কি কোনো সিনেমার প্রমোশনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত? আমার কি কোনো সিনেমা এই ঈদে বা আগামী ঈদে মুক্তি পাচ্ছে? তাহলে আমাকে কেন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মানুষের বাজে কথা শুনতে হলো?”
আরো পড়ুন:
জটিলতা কাটিয়ে আসছে ‘কৃষ-ফোর’, নয়া অবতারে হৃতিক
এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক-নিন্দনীয়, কাজী হায়াৎ প্রসঙ্গে ডিপজল
কাজী হায়াতের হার্টে ৯টি রিং পরানো হয়েছে। বাবার অসুস্থতার তথ্য জানিয়ে কাজী মারুফ বলেন, “৭৮ বছর বয়সি একজন মানুষ কাজী হায়াৎ(আমার বাবা)। একবার স্ট্রোক করেছে, একবার ওপেন হার্ট করা, ৯টা রিং পড়ানো একজন মানুষ, তার গাড়ি আটকানো কেন হলো? সেন্সর বোর্ডে কি উনি একাই ছিলেন সদস্য? সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক, বোর্ডের সদস্যদের সাথে কেন ভিতরে মিটিং করলো না? তবে কি এটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল?”
শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’। ঈদুল ফিতরে সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার সিনেমাটির প্রদর্শনী দেখতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে যান নির্মাতা ও বোর্ড সদস্য কাজী হায়াৎ। আর সেদিন দুপুরে আনকাট সেন্সর সার্টিফিকেটের দাবিতে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সামনে মানববন্ধন করেন শাকিবভক্তরা। সেখানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
ঢাকা/শান্ত