জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি মঙ্গলবার
Published: 23rd, February 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
রোববার সকালে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেন।
আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
এসময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু ওই দিন শুনানি হয়নি। রিভিউ আবেদনটি শুনানি হওয়া প্রয়োজন। আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ন ন র জন য ধ র য কর ল ইসল ম আজহ র র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বিন্নার বেষ্টনী দিন, চরগুলো নিজে থেকেই বদলে যাবে
বাংলাদেশে সচরাচর যেসব বিন্না ঘাস চোখে পড়ে, সেগুলোর শিকড় ছড়িয়ে যায়, সোজা গভীরে যায় না। অনেকটা বাঁশের আড়ার (ঝাড়) মতো। ঢেউ যখন নদীর পাড়ের তলদেশ থেকে মাটি সরায়, তখন বিন্নার শিকড় তা ঠেকাতে পারে না। কল্পনা করুন, যদি বাঁশের শিকড় সোজা গভীরে যেত, তাহলে নদী তো ছাড়, পাহাড়ি ঢলেও কিছু হতো না। ফলে এগুলো নদীভাঙন ঠেকাতে অক্ষম।
অথচ শিলিগুড়িতে তিস্তার ভাঙন ও থাইল্যান্ডে পাহাড়ধস ঠেকিয়ে রাখে একধরনের বিন্না ঘাস। শিলিগুড়ি বা থাইল্যান্ডের এই বিন্না ঘাস সোজা মাটির ২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে চলে যায়। বছরখানেকের মধ্যেই থোপ বা ঝাড় তৈরি হয়। অর্থাৎ ইরি ধান লাগানোর মতো করে চরের চারদিকে চারা রোপণ করা গেলে এক বছরেই ঘন বেষ্টনী তৈরি হবে।
পাহাড়ের পার্শ্বঢাল রক্ষায় বিন্না ঘাসের জুড়ি নেই। তাই প্রকৃতিতে অনেকটা অনাদরে জন্ম নিলেও এই ঘাসের খ্যাতি ও কদর বিশ্বজোড়া। বিভিন্ন দেশে পাহাড়ের ক্ষয়রোধ ও পাহাড়ধস বন্ধে পার্শ্বঢালে এই জাদুকরি ঘাস লাগানো হয়। কারণ, বিন্না ঘাসের মূল গভীরে চলে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে রাখে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, বিন্নার তিনটি শিকড় এক সুতা লোহার সমান শক্ত। উল্টো লোহা ক্ষয় হয়, এটা দিনকে দিন মজবুত হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস ও লালখান বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বাটালী হিলের মিঠাপাহাড়ের পাদদেশে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এই ঘাস লাগানোও সফল বলে প্রমাণিত হয়। এই পাহাড়ি বিন্না ঘাস পাহাড়ের ধস ঠেকাতে পারলে নদীভাঙন তো সহজ। ২০০০ সালে নেত্রকোনা জেলার কংস নদের পাড়ে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের মাটি রক্ষায় এই ঘাস সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে।
বিন্না ঘাস পৃথিবীর অনেক দূষিত নদীকে শোধনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। হাজার বছর ধরে এ দেশের মানুষেরা পুকুরপাড়ে বিন্না ঘাস লাগিয়ে রাখতেন একটি কোনায়, পানিকে মিষ্টি করার জন্য। এই ঘাসের শিকড়ে দারুণ সুগন্ধযুক্ত তেল হয়। সেই তেলে বেনজয়িক অ্যাসিডের প্রাবল্যের কারণে এর সুঘ্রাণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। এমন গুণের তেলের এমনিতেই পারফিউমশিল্পে কদর বেশি। যার কারণে অন্য ফুলের সুঘ্রাণের স্থিতি রক্ষার্থে বিন্না ঘাসের শিকড়ের তেল নানা প্রসাধনীতে বেশি ব্যবহৃত হয়। বেনজয়িক অ্যাসিড চামড়ার নানা দাগ দূর করে। একজিমা, ফোসকায় কাজে দেয়, ফলে এর তেল চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।
কথা হলো যে বিন্নার বেষ্টনী একই সঙ্গে নদীভাঙন রোধ করে, ভারসাম্যমূলক কৃষি, নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান জাগায়, কার্বন নিঃসরণ ঘটায়, নদীর দূষণ ঠেকায়, এজমালি গোচারণভূমির ভূমিকা পালন করে; তাকে নিয়ে কাজ করবে কোন মন্ত্রণালয়? ভাগের মা নাকি গঙ্গা পায় না।আগে ব্রহ্মপুত্রের কাশিয়ার খেতগুলো (কাশবন) ছিল এজমালি গোচারণভূমি। কাইম বা স্থায়ী ভূখণ্ডের অবস্থাপন্ন গৃহস্থরাও চরের বাসিন্দাদের গরু-মহিষ আধি দিতেন। দেখা যেত, চরের প্রতিটি ঘরে যাঁর কিছু নেই, তাঁরও চার–পাঁচটি গরু ছিল। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ‘চিলেকোঠার সেপাই’–এ এসব চরের গরুর বাথান, খোঁয়াড়ের কথা বলেছেন। দেবেশ রায়ের ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’–এর বাঘারু তো একজন রাখাল। উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান গ্রামে গ্রামে ঢেউ তুলেছিল, তার গোড়ায় তো এই গরু, গোয়াল, গোলাই।
ট্রাক্টর আসায় সেই কাশিয়াখেত এখন আবাদি জমি। ভূমিহীনের নামে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দখলে। বাজার থেকে কেনা কোম্পানির গোখাদ্য দিয়ে কি পোষায়? ট্রাক্টর, সবুজবিপ্লব, খাসজমি দখল চক্রে মিলে ‘চিলেকোঠার সেপাই’–এর ব্রহ্মপুত্র-যমুনার চরের চেংটুরা এখন ঢাকার হাড্ডিখিজিরদের দলে যোগ দিয়ে রিকশা চালায়। শরৎচন্দ্রের গফুর মহেশকে বিক্রি করে দিয়ে পোশাকশ্রমিক হয়।
বিন্না ঘাসের বেষ্টনী হবে গরু-মহিষের এজমালি গোচারণভূমি, প্রকৃত ভূমিহীনেরা গরু-মহিষ পালন করতে পারবেন।
দুই.
চিলমারীর শাখাহাতী, কড়াইবরিশাল, ফেইচকা, অষ্টমীর চরে দেখেছিলাম, ফসলের খেতে জঙ্গলের জন্য জায়গা ছেড়ে রাখে পাখিদের জন্য। এই পাখিরা ফসলভুক পোকাদের সাবাড় করে। এই পাখিরা যেটুকু ফসল খায়, তার চেয়ে বেশি শস্য রক্ষা করে। প্রতিটি শস্যদানায় নাকি লেখা আছে, কোন জীব তা খাবে।
গাছপালার জগতেও এমন উদ্ভিদ শনাক্ত করা গেছে, যেগুলো সম্ভাব্য পোকামাকড়দের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে এই উদ্ভিদগুলোকে মূল ফসলগুলোর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে রোপণ করা হয়। যেমন কৃষ্ণতুলসী, রামতুলসী, বচ, কারিপাতা, গাঁদা, আঁকড়া (প্রেমকাঁটা), আতা, নিম, রেড়ি (হেন্ডা)।
পৃথিবীর ১০ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়ের ৯০ শতাংশের বেশি মাঠের ফসলের কোনো ক্ষতি করে না; বরং উপকার করে। কেঁচো, পিঁপড়া, মৌমাছিরা কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মারা পড়ে। তেমনি মাকড়শা, সোনাব্যাঙ, পাখি ফসলে হামলাকারী পতঙ্গ ও মারিপোকাদের খেয়ে বেঁচে থাকে, তারাও মারা পড়ে। এদের থাকার জায়গা কোথায়?
চরাঞ্চলের চতুর্দিকে ৪০–৫০ হাত প্রশস্ত বেষ্টনী সবার জায়গাটা পূরণ করবে। পূরণ করবে প্রাকৃতিক বনের অভাবও। বিন্নার ঝাড়ু, মাদুর তৈরি চরের নারীদের কুটিরশিল্পের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের রাস্তা তৈরি হবে। নদ–নদীর বাস্তুতন্ত্রও ঠিক থাকবে। শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য কার্বনের প্রাণভোমরা তো এখানেই।
কথা হলো যে বিন্নার বেষ্টনী একই সঙ্গে নদীভাঙন রোধ করে, ভারসাম্যমূলক কৃষি, নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান জাগায়, কার্বন নিঃসরণ ঘটায়, নদীর দূষণ ঠেকায়, এজমালি গোচারণভূমির ভূমিকা পালন করে; তাকে নিয়ে কাজ করবে কোন মন্ত্রণালয়? ভাগের মা নাকি গঙ্গা পায় না।
সর্বশেষ খানা জরিপ বাদে আগের সব কটিতেই কুড়িগ্রাম জেলা দারিদ্র্যের শীর্ষে থেকেছে। শুধু চরের ভাঙন রোধ করা গেলেই ধানে ও ফসলে কুড়িগ্রাম জেলা ভরে উঠবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে চিলমারীতে এসেছিলেন। বলেছিলেন, চিলমারী থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। এত দিনেও হয়নি।
আর্কিমিডিস বলেছিলেন, কপিকলটি বসানোর জায়গাটুকু দিন, পৃথিবীটা বদলে দেব। চরগুলোর চারপাশে বিন্নার বেষ্টনী দিন, চরগুলো নিজে থেকেই বদলে যাবে।
নাহিদ হাসান লেখক, কবি ও কৃষক সংগঠক
[email protected]