জন্ম ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে। সেখানেই জীবনের প্রথম ১৪ বছর কেটেছে জশ ইংলিসের। কাউন্টি দল ইয়র্কশায়ারের যুব দলের হয়ে খেলেছেন। সে হিসেবে তাঁকে ইংল্যান্ডের ঘরের ছেলে তো বলাই যায়। সেই ‘ঘরের ছেলে’র হাতেই কাল ধরাশায়ী হয়েছে ইংল্যান্ড।

জফরা আর্চারদের বিপক্ষে ৮৬ বলে অপরাজিত ১২০ রানের ম্যাচজয়ী এক ইনিংস খেলেছেন ইংলিস। সেটিও কিনা ৩৫২ রানের রেকর্ড লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে নেমে। এটি আবার ইংলিসের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে ইংলিসের কালকের সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য অনেক।

তো ইংল্যান্ডের ইংলিস অস্ট্রেলিয়ার হলেন কীভাবে? ১৫ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান ইংলিস। কিন্তু ১৫ বছরও তো কম সময় না! এই সময়ের প্রভাবটা তো একজন মানুষের ওপর সারা জীবন থেকে যায়।

আমি মনে করি এটি সত্যিই বিশেষ। এটি কার বিপক্ষে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো প্রথম ম্যাচেই জয় পাওয়াজশ ইংলিস

২০১৭ সালে যখন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার জন্য লড়েছেন, তখনো স্বীকার করেছেন তিনি ইংল্যান্ডের সমর্থক। ২৯ বয়সী ইংলিস অবশ্য সেঞ্চুরির পর কাল জানিয়েছেন, সে সময় চলে গেছে অনেক আগেই।

কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ডকে সমর্থন করেন কি না—এই প্রশ্নে ইংলিস বলেছেন, ‘সেই দিনগুলো অনেক আগেই শেষ। তবে আমি এখনো ফুটবলে (ম্যানচেস্টার) সিটিকে সমর্থন করি। আমি এরই মধ্যে ইংল্যান্ড থেকে কয়েকটি বার্তা পেয়েছি, যা বেশ ভালো লেগেছে।’

আরও পড়ুনমেসি–ঝলকে বাঁচল প্রায় ৮০ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলা মায়ামি১ ঘণ্টা আগে

দল হিসেবে ছন্দে ছিল না অস্ট্রেলিয়া। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলটি হেরেছে ২ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। দলে নেই মূল দলের ৫ ক্রিকেটার। তাই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই জয় পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার জন্য বেশ জরুরি ছিল।

ইংলিসের মুখেও শোনা গেছে সেই কথা, ‘আমি মনে করি এটি সত্যিই বিশেষ। এটি কার বিপক্ষে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি আগেও বলেছি, এটি খুবই ছোট টুর্নামেন্ট। প্রথম ম্যাচ থেকেই পুরোপুরি মনোযোগী থাকতে হয়। তাই, সম্ভবত সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো প্রথম ম্যাচেই জয় পাওয়া।’

৮৬ বলে অপরাজিত ১২০ রানের ম্যাচজয়ী এক ইনিংস খেলেছেন ইংলিস.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম ম য চ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির ৩১ দফা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পথরেখা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছে। প্রথম দফায় জিঘাংসার রাজনীতি পরিহার করে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য দফায় অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন, দলীয়করণ রোধ করা এবং সরকার পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠন ও বিচারপতি নিয়োগের আইন প্রণয়নসহ জাতীয় জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসংগতি দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিপ্রায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যাকে একটি উদার, মধ্যপন্থি ও গণতান্ত্রিক দলের কর্মসূচি বিবেচনা করা যায় এবং তা অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে বলে অনুমিত হয়। 


অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ব্যর্থতার কারণে যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো, তেমন বাস্তবতায় আমার মনে হয়, একই ভুল আর বিএনপি করতে চায় না; যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণও প্রত্যাশা করে না। জনমতকে অবজ্ঞা করে বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করলে সুদীর্ঘকাল ক্ষমতা টেকসই হয় না। স্বল্পকালের বিষয় হলেও তা দীর্ঘকালের নয়। আবার আমাদের ভূরাজনীতি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দলটির প্রতি প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্রের সমর্থন ও দুর্বলতাকে অগ্রাহ্য করলে চলে না। সেটা হতে পারে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবিবেচনা ও অবিচক্ষণতা।  


আজ ড. আকবর আলি খানের কথা খুব বেশি মনে পড়ে। ‘দুটি বড় দল কেউ কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না, এক দলকে বাইরে রেখে  দিয়ে আরেক দল শাসন দণ্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না।’ তার বক্তব্যে ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের আকুতি। আজ তাঁর কথা কাঙালের কথার মতো বাসি হলেও ফলেছে। আবার যদি ভুল করেছে বলেই আরেকটি বড় দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলে, তাকে রাজনীতির বলয়ের বাইরে রাখার অপচেষ্টা হয় স্বল্পকালে, তার ফলাফল সুখকর হলেও দীর্ঘকালের তার ফলাফল অশুভ হতে পারে।   তাতে করে মনে হয় আবারও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমাজ গঠনের পথ রুদ্ধ হয়। সেই নির্জলা সত্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই হয়তো বিএনপি দলটির ওই সুস্পষ্ট অবস্থান। তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও তার দুর্নীতিবাজ সহযোগীদের বিচার হোক, বিচারের কারণে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হতে পারে– তা নিয়ে কোনো কথা নেই। 

ছাত্র-জনতার উপলব্ধি আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ত্রুটিপূর্ণ, তার মধ্য দিয়ে শীর্ষ নেতা-নেত্রী হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী। তাই বন্দোবস্ত পরিবর্তনের সংস্কার জরুরি। সে কারণেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া অনিবার্য। তবে বিচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের মালিকানা। তাদের যথার্থ বিচার হোক, আবার অচোরা যেন বন্দি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাচ্যুত দলটির নিরপরাধ নেতাকর্মীর রাজনীতি করার পথ উন্মুক্ত হলে জাতিকে ঐক্যের বন্ধনে বাঁধা সহজ হতে পারে। 


সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের উপলব্ধি তার অধিকাংশের সঙ্গেই রয়েছে ৩১ দফার সংগতি। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে ছাত্র-জনতার নতুন দলের আবির্ভাব, জামায়াতে ইসলামী ও সরকার এই তিন শক্তির প্রাবল্য দেখে আমার মনের জানালায় কবির অমিয় বাণী উঁকি দেয়, ‘ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট’। ওই তিন শক্তির প্রাবল্যকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে তাদের সঙ্গে বিএনপি যদি সুকৌশলে সমঝোতা করতে পারে, ধৈর্যের সঙ্গে ঐক্য গড়তে পারে তাহলে তার অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পথ মসৃণ হতে পারে। সেটা করতে পারলে মধ্যপন্থি উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তার ঘরে সোনালি ফসল তোলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে। তবে দলটির বিজয় অর্জনের পথের কাঁটা হলো, তার চাঁদাবাজ দখলদার নেতাকর্মী। তাদের শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাই বয়ে আনতে পারে সফলতা। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হতে পারে চালকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া। তাই মনে হয়, দলটির সামনে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা আবার অগ্নিপরীক্ষা।

ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান: সাবেক অধ্যক্ষ, নওগাঁ সরকারি কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ