শিশুর খাবার উগরে দেওয়ার অভ্যাস
Published: 23rd, February 2025 GMT
অনেক শিশুই মুখে খাবার দেওয়ামাত্র বের করে দেয় বা উগরে দেয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে ‘রুমিনেশন ডিজঅর্ডার’ বলা হয়। সচরাচর শিশুর ৩ থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে এ জটিল রোগ প্রকাশ পায়। খাবার ওগরানো প্রায় প্রতিদিন ঘটে। মাঝখানে সুস্থ থেকে একনাগাড়ে কমপক্ষে এক মাস ধরে এমন উপসর্গ চলতে থাকে। তবে ঘুমানো অবস্থায় তা হয় না।
লক্ষণ
এ রোগে আক্রান্ত শিশুর না থাকে কোনো পেটের অসুবিধা, না কোনো বমিভাব। প্রধান বৈশিষ্ট্য, অনবরত খাবার গ্রহণের পর জাবর কাটার মতো প্রক্রিয়ায় উগরে দেওয়া খাদ্যাংশ আবার চিবোতে থাকা। আক্রান্ত শিশুর ওজন কমে যায়। তার বৃদ্ধি-বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কখনো মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগে।
কার্যকারণ
এ অসুখে দুই ধরনের আক্রান্ত শিশু দেখা যায়। প্রথমটা ‘সাইকোজেনিক’। এ শ্রেণিতে যাদের অবস্থান, তারা বাকি সব দিকে ভালো থাকে, যেমন তাদের দৈহিক বৃদ্ধি-মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক থাকে। এখানে রোগের সূচনা হিসেবে বাবা–মা ও সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের সংকটকে দায়ী করা হয়।
আরেক শ্রেণির শিশু আছে, যারা নিজে থেকে এ অভ্যাস রপ্ত করে নেয়। মানসিক সমস্যায় ভোগা শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
এর বাইরেও যেকোনো বয়সের শিশু এ শ্রেণির রুমিনেশন ডিজঅর্ডারে ভুগতে পারে। এমনকি মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের মধুর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো শিশু এ অসুখে আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
রোগটি সচরাচর নয়। তবু অসুখের পরিণতি বিবেচনা করে শিশুর এ ধরনের উপসর্গ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। ওই বয়সের শিশু সামান্য কারণেও বমি করতে পারে। খাওয়ানোর সময় বিভিন্ন কারণে শিশু প্রচুর বাতাস গ্রহণ করে। পরে সে বাতাস পেট থেকে বের হয়ে আসার সময় সঙ্গে দুধ বা অন্য খাবার তুলে নিয়ে আসে; যাকে বলা হয় ‘পসেটিং’। শিশুর এরূপ বমন ‘রুমিনেশন ডিজঅর্ডার’ বলে গণ্য করা ভুল। এসব তুচ্ছ কারণের বমিতে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় না।
রুমিনেশন ডিজঅর্ডার সুনির্দিষ্ট করে বলার আগে শিশুর আন্ত্রিক নালির কোনো জন্মগত ত্রুটি আছে কি না, খতিয়ে দেখা হয়।
আক্রান্ত শিশুর মূল চিকিৎসা ‘বিহেভিয়ার থেরাপি’। এতে শিশু যাতে আগ্রহ নিয়ে, সন্তুষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়ার পর ওগরানো মনোবৃত্তি যাতে শিশু ভুলে থাকে, সে চেষ্টাও চালানো হয়।
শিশুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে, শিশুর প্রাথমিক যত্নকারী যেমন, মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের সবার সহযোগিতায় এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। প্রয়োজনে মনোরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় এ রোগ নিরাময়যোগ্য।
অধ্যাপক ডা.
প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কেন হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা কী
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস একধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ভেতর স্নায়ুরজ্জুকে আক্রমণ করে। এতে ইমিউন সিস্টেম ভুলভাবে স্নায়ুতন্তুগুলোর প্রতিরক্ষামূলক আবরণকে আক্রমণ করে থাকে। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস তাই একধরনের অটোইমিউন ডিজিজ।
এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা, পেশিতে অসহ্য ব্যথা, মাথাব্যথা-মাইগ্রেন, খাদ্যনালি-মূত্রনালিতে সংক্রমণ, সঙ্গে হাত-পা অসাড় হয়ে যায়। কোনো কিছু চিন্তা করার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, অবসাদ, বিষণ্নতা, একাকিত্বে ভোগেন রোগী। নারীদের মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের থেকে কয়েক গুণ। ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এ স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পরিবেশ, জিন ও বংশগত কারণে এটি হতে পারে।
আরও পড়ুনমস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে এই ব্যায়ামগুলো করতে পারেন২৫ অক্টোবর ২০২২উপসর্গ
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে পেশির ওপর চাপ পড়ে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেশির দুর্বলতা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। পেশিতে ব্যথা হয়। হাত-পা নাড়ানো যায় না। পেশিতে টান, খিঁচুনি হতে পারে। একসময় অসাড় হতে থাকে হাত-পা। স্পর্শের অনুভূতি থাকে না। হাঁটাচলা, খাবার খাওয়া, কথা বলায় সমস্যা হয় অনেকের।
খাদ্যনালি, অন্ত্র, মূত্রনালি আক্রান্ত হয়। অবসাদ, উৎকণ্ঠা, হতাশা গ্রাস করে। বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়। অস্থিরতা দেখা দেয়, স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তায় সমস্যা হয়।
কারও কারও শ্রবণশক্তি চলে যায়। মাঝেমধ্যেই শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়।
রোগনির্ণয়
রোগনির্ণয়ে এমআরআই স্ক্যান করা হয়। অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি টেস্টে চোখের স্নায়ুর ছবি তোলা হয়। স্পাইনাল ট্যাপ পরীক্ষায় ধরা যায়, স্পাইনাল ফ্লুইডের কতটা ক্ষতি হয়েছে। রোগ কতটা ছড়িয়েছে, সেটাও নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী থেরাপি দেওয়া হয়। ইভোক পটেনশিয়াল টেস্টে ব্রেন ড্যামেজ হয়েছে কি না, ধরা যায়।
আরও পড়ুনরাতের এই অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্ক যেভাবে দ্রুত বুড়িয়ে যায়১১ নভেম্বর ২০২৪চিকিৎসা
শুরুতে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা, মেডিটেশনে রোগী সুস্থ হয়ে যান। কিছু থেরাপিও আছে, যাতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফিজিক্যাল থেরাপি, আকুপাংচার থেরাপিও কার্যকর। নানা রকম যোগ ও কাউন্সেলিং করানো হয় রোগীকে।
অনেক রকম ওষুধও আছে, যেমন ডিজিজ-মডিফাইং ওষুধ, প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ। স্টেরয়েড দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট ব্যবহার হয়। ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগও আছে।
এসব ছাড়াও শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও দিনে কিছুটা সময় মেডিটেশন করা উচিত।
ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনসালমান খান ভুগছেন সুইসাইড ডিজিজে, জেনে নিন এ রোগ সম্পর্কে২০ ঘণ্টা আগে