রাজধানী ঢাকায় গতকাল শনিবার বৃষ্টি হয়। সাধারণত বৃষ্টি হলে বায়ুদূষণের পরিমাণ কমে আসে। বৃষ্টি একেবারে কমও হয়নি গতকাল। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানাচ্ছে, রাজধানীতে গতকাল আট মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টির পরও আজ রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে বিশ্বে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে আছে রাজধানী ঢাকা। আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ১৮৯। বায়ুর এমন অবস্থাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।

বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী। চলতি মাসেরও একই হাল।

বায়ুদূষণে আজ দ্বিতীয় স্থানে আছে সেনেগালের রাজধানী ডাকার, এ শহরেরও স্কোর ১৮৯।

রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব এলাকায় বায়ুর মান মারাত্মক দূষিত, সেগুলোর মধ্যে আছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি (২৮২) ও সাভারের হেমায়েতপুর (২৮২) এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (২০৬)।

রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে আছে কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো। দূষণ রোধে হাঁকডাক এবং নানা ধরনের প্রকল্পও কম হয়নি সরকারি স্তরে। কিন্তু দূষণ কমছে না।

দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ঢাকায় জানুয়ারিতে একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে। আজ অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুর মান চট্টগ্রামে ১৩০, রাজশাহীতে ১৬৯ ও খুলনায় ১৫8।

আজ আইকিউএয়ারের দেওয়া সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলছিলেন, এখন দূষণ পরিস্থিতি যা, তাতে ব্যক্তিগত সুরক্ষাই মূল ভরসা। ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। জানালায় পর্দা লাগাতে হবে বা অন্য সাধ্য থাকলে বায়ুদূষণ নিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, তাদের প্রতিশ্রুতি কাজগুলো তারা করুক।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩৭ গুণ বেশি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শাবিপ্রবিতে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে মশাল মিছিল

দেশব্যাপী নারীর ওপর সহিংসতা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, শ্লীতাহানি ও সামাজিক হেনস্তার প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘নারীর পীড়ন যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘ধর্ষকদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী’, ‘রাজশাহীতে ধর্ষণ হয়, ইন্টেরিম কি করে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

মিছিল পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার বলেন, “জুলাইয়ের রক্তের ওপর যে সরকার দাঁড়িয়েছে, এ সরকার নারীর ওপর ধর্ষণ ও নিপীড়নকে বন্ধ করতে পারছে না। আমরা  স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে আপনার একদিনও আর ক্ষমতা ভোগ করার দরকার নেই।”

“আপনাকে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য সেখানে বসানো হয়নি।  জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে। রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারীদের শ্লীলতাহানির সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের ও সকল কুশীলবকে দ্রুতই আইনানুগ বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি মঞ্চে নিয়ে যেতে হবে,” যুক্ত করেন তিনি।

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা নুসরাত বলেন, “আমি চাই জাতীয় দিবসগুলোতে ফুল দিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে, ক্লাস শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে। আমি আমার মৌলিক অধিকারটুকু চাই। কিন্তু যে দেশে একটি শিশু মাতৃভাষা দিবসের ফুল কুড়ানোর সময় ধর্ষিত হয়, সে দেশে থাকতে আমার ভয় হয়। কিন্তু কেন হবে এ ভয়?  আমি অন্তবর্তী সরকারের কাছে এর জবাব চাই।”

তিনি বলেন, “নারীর হওয়ার কারণে আমাকে অবলা হিসেবে কেন আচরণ করা হচ্ছে, কেন ধর্ষণকে সাধারণ করা হচ্ছে, কেন ধর্ষকরা শাস্তি পাচ্ছে না? শাস্তি পাচ্ছে না বলেই ধর্ষণের মত ঘটনা সাধারণ ঘটনায় রূপান্তর হচ্ছে। কেন বোনদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে আমাদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। সবগুলো জবাব আমাদের জানতে হবে।”

এ সময় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরাব সাদাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ফয়সাল হোসেন, ইংরেজী বিভাগের নাজনীন লিজা, মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) শিক্ষার্থী তানজিনা বেগম প্রমুখ।

ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ