উত্তর-পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য গ্রেপ্তার
Published: 23rd, February 2025 GMT
উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিএম) আচার্য মাহবুবুল হককে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করেছে প্রতিবেশী আসাম রাজ্যের পুলিশ।
ভারতের সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বিজেপি-শাসিত আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সাম্প্রতিক আক্রমণের মুখে গ্রেপ্তার হলেন মাহবুবুল হক।
আসামের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগু বলেন, ইউএসটিএমের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ আছে। তবে ইউএসটিএমের তরফে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
ইউএসটিএম উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। মাহবুবুল হক বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকও। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শ্রেষ্ঠ ২০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় পরপর তিন বছর জায়গা হয় ইউএসটিএমের।
কী অভিযোগ
আসাম রাজ্যের পাথরকান্দিতে ইউএসটিএম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি স্কুল আছে। নাম সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল। মাহবুবুল হককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আসামের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে এ স্কুলের ছাত্রদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। সে লক্ষ্যে তারা তৎপরতাও চালায়। বহিরাগত পরিদর্শকেরা এর বিরোধিতা করেন। তখন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
পাথরকান্দিতে এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট নামের একটি সংগঠন চালান মাহবুবুল হক। এটি ইউএসটিএমের অন্তর্গত। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, কেন্দ্রটিতে যে ২৭৪ জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২১৪ জন এখানে বিশেষ কোচিং নিয়েছিলেন। অভিযোগ হলো, তাঁদের পরীক্ষার সময় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে ইউএসটিএম কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল। এ অভিযোগের জেরে মাহবুবুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবুল হক আসামের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ
আসাম সরকারের অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে ইউএসটিএমের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সূত্র। তারা সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, কয়েক বছর ধরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আচার্য মাহবুবুল হককে সরিয়ে দিয়ে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
গত সপ্তাহে বিশ্বশর্মা ইউএসটিএমকে একটি ‘জালিয়াত’ বিশ্ববিদ্যালয় বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইউএসটিএম যে সনদ ও ডিগ্রি দেয়, তা ভুয়া। অবশ্য এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে মন্তব্য করা হয়।
এর আগে গত বছরের আগস্টে আসামের গুয়াহাটিতে ‘হড়পা বান’ হয়েছিল। সে সময় বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, ইউএসটিএমের কারণেই গুয়াহাটিতে হঠাৎ করে বন্যা হচ্ছে। কারণ, বনাঞ্চল ও পাহাড় কেটে বিশ্ববিদ্যালয়টি বানানো হয়েছে।
আসাম রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত এই চক্রান্তের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্লাড জিহাদ’ বা ‘বন্যা জিহাদ’। আসামের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, ইউএসটিএমের কারণে মেঘালয়ের রি-ভই জেলা থেকে পানি নেমে গুয়াহাটিকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা পরে এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন।
আচার্য মাহবুবুল হক বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করার পর এটি উত্তর-পূর্ব ভারতে সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। মূলত বাঙালি মুসলমানরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে শুরু করেন। তবে অনেক হিন্দু ছাত্রছাত্রীও আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি মেঘালয় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো কাজের জন্য ইতিমধ্যে সনদ পেয়েছে।
আসামের সরকারপ্রধানের লাগাতার অভিযোগের মুখে মেঘালয় সরকার ও ইউএসটিএম কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনো অন্যায় কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কখনো করা হয়নি।
মেঘালয়ের মুখ্য সচিব ডোনাল্ড পি ওয়াহলাং নিশ্চিত করেছেন, ইউএসটিএম কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ইউজিসি দ্বারা স্বীকৃত। মেঘালয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রেগুলেটরি বোর্ডের নির্দেশিকার অনুসারী এ বিশ্ববিদ্যালয়।
মুখ্য সচিব একসময় বলেছিলেন, ইউএসটিএমের দেওয়া সব ডিগ্রি ইউজিসির স্বীকৃত। তাই জাল ডিগ্রি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২১ সালে ইউজিসির ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল (ন্যাক) থেকে সর্বোচ্চ ‘এ গ্রেড’ পায়।
কেন ক্ষুব্ধ বিশ্বশর্মা
বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন আসামের মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল রোষের শিকার হয়ে প্রায় বন্ধের মুখে। আর সবশেষে গ্রেপ্তার হলেন আচার্য মাহবুবুল হক।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, গত আগস্টে ‘বন্যা জিহাদের’ অভিযোগ সামনে আনার এক সপ্তাহ পর বিশ্বশর্মা আবার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আক্রমণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপরে তিনটি গম্বুজ আছে। এ কারণে বিশ্বশর্মা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নানা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
বিশ্বশর্মাকে ‘জিহাদ’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ইউএসটিএম যা করছে, তা হলো বড় রকমের জিহাদ। তিনি খুব নরম ভাষায় এটিকে জিহাদ বলছেন। এটি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। যার দ্বারা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আক্রান্ত হয়, তা হলো জিহাদ।
মুসলিম মিরর নামে ভারতের একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, আসামের মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী ভবিষ্যতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি স্কুল চালাচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বশর্মার কোনো একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যকে আক্রমণের বিষয়টিকে দেখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব সরক র মন ত র ইউজ স
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠকের পর লুৎফে সিদ্দিকী মঙ্গলবার রাতে তার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান।
মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক চার দিনের সফরে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় আসেন। তাঁর সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপের বুধবার ভোরে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরসঙ্গী হিসেবে মিয়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম প্রতিনিধিদলের এ সফরে বাংলাদেশে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা ও মিয়ানমার পরিস্থিতিসহ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী তার ফেসবুকে আরো লিখেছেন, আজ আমার দপ্তরে উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাই। তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের বাণিজ্য এজেন্ডায় দ্রুত ও গঠনমূলক সাড়া দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী সপ্তাহে (ওয়াশিংটন) ডিসিতে অবস্থিত ইউএসটিআর, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার আরও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচি ঠিক করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের পণ্যের ওপর রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেছিলেন। অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পাশাপাশি ন্যূনতম শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ।
তবে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার দিন ৯ এপ্রিল ট্রাম্প ন্যূনতম ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এর আগে বিভিন্ন দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা ও মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে। ট্রাম্প যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের রপ্তানি কম ও আমদানি বেশি, সেসব দেশের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
নতুন শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠি দুটি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই দিনই হোয়াইট হাউস ও ইউএসটিআরের দপ্তরে পৌঁছে দেয়।
বাংলাদেশের চিঠি দুটি পাঠানোর দুই দিন পর (৯ এপ্রিল) ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে চায়, তা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকা/হাসান/ইভা