খবরটা চোখে পড়েছিল কিছুদিন আগে। চীনের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নাকি বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের আগ্রহ কমে গেছে। ২০২৪ সালে চীনজুড়ে ৬১ লাখের বেশি যুগল বিয়ের নিবন্ধন করিয়েছেন। অথচ আগের বছরেও সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৭৬ লাখ ৮০ হাজার। সন্তান লালনপালনের চ্যালেঞ্জ, শিক্ষা খাতের উচ্চ ব্যয়, এমন নানা কারণেই চীনা তরুণেরা মা-বাবা হওয়ার দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। অন্যদিকে দেশটিতে শিশু বা তরুণের তুলনায় বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই সংকট কাটাতে চীনা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ে, ভালোবাসা, পরিবারের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি গত বছর নাকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোবাসা-সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

পড়াশোনা ও কাজের সুবাদে চীনে আছি বেশ কয়েক বছর হলো। এ দেশের শিক্ষা খাতের সঙ্গেও আমার নিবিড় যোগাযোগ আছে। তাই খবরটা পড়ে জানার আগ্রহ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সত্যিই ‘ভালোবাসা’ শেখানো হচ্ছে? খোঁজ নিয়ে যা জানলাম, তা-ই আপনাদের জানাচ্ছি।

ভালোবাসা ও সুখ

তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সাধারণ ঐচ্ছিক পাঠ্যক্রমে ‘ভালোবাসা ও সুখ’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে সত্যি বলতে, এর সঙ্গে প্রেম বা বিয়ের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সম্পর্ক আছে মনোবিজ্ঞান ও যোগাযোগবিদ্যার। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছে, সম্পর্কের জটিলতা, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ কিংবা যোগাযোগ দক্ষতার অভাব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ও সামাজিক জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই এসব বিষয়ে ছেলেমেয়েদের দক্ষ করে তুলতে তিয়ানজিনের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ‘ভালোবাসা ও সুখ’-এর পাঠ দিচ্ছে। তিয়ানজিন ইউনিভার্সিটি ছাড়াও চীনের উহান ইউনিভার্সিটি ও শিয়ামেন ইউনিভার্সিটির পাঠ্যক্রমে এই কোর্স চোখে পড়ল।

আরও পড়ুনচীনে সন্তান লালনপালনে খরচ এত বেশি কেন১৮ মার্চ ২০২৪

চীনের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রধান বিষয়ের বাইরেও অন্যান্য বিষয়ের কিছু কোর্স বেছে নিতে পারে। যেমন খেলাধুলা, ভাষা ইত্যাদি। কেউ হয়তো প্রকৌশলে পড়ছে, তাঁকেও তাঁর বিভাগের বাইরে অন্য বিভাগ থেকে বেশি কিছু কোর্স করতে হয়। ‘ভালোবাসা ও সুখ’ কোর্সটিও সে রকমই একটি। ২ ক্রেডিটের এই কোর্স এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা একাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা অর্জন করতে চান, তাঁদের কাছে। এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য শুধু সঙ্গী নির্বাচনে সহায়তা করা নয়। বরং নিজেকে ভালোবাসার গুরুত্ব জানা, স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক ও মানসিক স্থিতিশীলতা গড়ে তোলা। এখানকার ক্যাম্পাসে তারুণ্যের শক্তিটা চোখে পড়ার মতো। তবে আর সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সম্পর্কের জটিলতা এখানকার শিক্ষার্থীদেরও বেশ ভোগায়।

সামাজিকভাবে চীনে প্রেমের সম্পর্ক তৈরিতে তেমন কোনো বাধা নেই। বরং ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে মা-বাবারাই জানতে চান, ‘তোমার সঙ্গী কোথায়?’ চীনা নববর্ষ, অর্থাৎ এখানকার বসন্ত উৎসবে মা-বাবার সঙ্গে ভালোবাসার মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চলও আছে।

চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং এগুলোর নিয়মিত চর্চার ওপর গুরুত্ব দেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কে থাকা শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতা ও একঘেয়েমি কম হয়। অন্যদিকে যাঁরা সঙ্গী খুঁজছে, তাঁদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা বেশি। তাই ‘ভালোবাসা ও সুখ’ সংক্রান্ত কোর্সগুলো মানসিক ভারসাম্য ও সামাজিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শেখায়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বচ্ছন্দ ও আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে।

আরও পড়ুনচীনে চপস্টিক বানাতে বছরে কত কোটি গাছ কাটা হয়, জানেন?০১ নভেম্বর ২০২৪চোখে চোখ রাখার গুরুত্ব

চীনা ক্যাম্পাসগুলোর পরিবেশ দারুণ। সামাজিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণে এখানে তরুণ-তরুণীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভালোবাসার প্রকাশগুলোও চোখে পড়ে খুব সূক্ষ্মভাবে। যেমন গাছের নিচে বসে থাকা, একসঙ্গে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ। একসঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়াও চীনা সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাইব্রেরি বা ক্যাম্পাসের কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় কোনো যুগল একসঙ্গে পড়াশোনা করছে, এটাও খুব পরিচিত দৃশ্য। এখানকার অনেকে মনে করেন, একাডেমিক সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রেমের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে একে অন্যের পাশে থাকে। শিক্ষকেরাও এ ক্ষেত্রে উৎসাহ দেন, যেন ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু মেসেজিং অ্যাপ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানের কারণে অনেকেই হয়তো চোখে চোখ রেখে কথা বলার গুরুত্ব ভুলে যাচ্ছেন। যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়া খুব জরুরি, এটি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উপলব্ধি করেছে। এ জন্যই তারা যোগাযোগ-শিক্ষার ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল: সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা

মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস ২০২১ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি তাঁদের এই বিচ্ছেদকে ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন।

সাবেক ধনকুবের ব্যবসায়ী স্বামী বিল গেটসের একটি মন্তব্যের কয়েক সপ্তাহ পর মেলিন্ডা ফেঞ্চ এই প্রথম মুখ খুললেন। ওই মন্তব্যে বিল গেটস তাঁদের এই বিচ্ছেদকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অনুতাপের বিষয় বলে মন্তব্য করেছিলেন।

দ্য টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা গেটস এ কথা করেন। ওই সাক্ষাৎকার গত রোববার প্রকাশিত হয়। সেখানে বিল গেটসের মন্তব্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এমন কিছু, যা ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল।

মেলিন্ডা ফেঞ্চ বলেন, ‘আপনি যদি আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে নিজের মূল্যবোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে না পারেন, তাহলে সেটা ছেড়ে যাওয়াই প্রয়োজনীয় ছিল।’

অবশ্য মেলিন্ডা মানবহিতৈষী তাঁর সাবেক স্বামী বিল গেটসের মন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। তবে তিনি যোগ করেন, ‘আমি আসলে জানি না, তিনি ওই বক্তব্য দিয়ে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন। সুতরাং তাঁর বক্তব্য নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করছি না।’

মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ বলেন, ‘তাঁর নিজের জীবন আছে, আমার নিজের জীবন আছে। আমি এখন অনেক সুখী।’

মেলিন্ডা গেটস আরও বলেন, এই বিচ্ছেদ তাঁর ওপর আবেগপূর্ণ গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁদের আলাদা থাকা অবস্থায় তিনি ‘প্যানিক অ্যাটাক’–এর শিকারও হয়েছেন।

বিল গেটসের সাবেক স্ত্রী বলেন, একটা বিবাহবিচ্ছেদ খুবই কঠিন। আর আলোচনা-সমঝোতাও খুব কঠিন।’

মেলিন্ডা বলেন, ২০১৪ সালে বিল গেটসের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজের সময় তিনি প্রথম ‘প্যানিক অ্যাটাক’ অনুভব করেন। তার পর থেকেই তিনি থেরাপিস্টের কাছে যাওয়া শুরু করেন। তখনো তাঁরা স্বামী–স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে ছিলেন।

শুরুর দিকে মেলিন্ডা থেরাপি নিয়ে সন্দিহান থাকলেও পরে এর উপকারিতা বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে আমি ভেঙে পড়েছি। এর অর্থ, আমি কঠিন বিষয়ের মধ্য দিয়ে গেছি, যেগুলো নিয়ে আমাকে বোঝাপড়া করতে হয়েছে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে এনবিসির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে নিজের নতুন বই ‘সোর্স কোর্ড’ নিয়ে কথা বলতে গেলে বিল গেটসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন তিনি এই বিবাহবিচ্ছেদকে নিজের ‘সবচেয়ে বড় অনুশোচনা’ বলে মনে করছেন।

জবাবে বিল বলেছিলেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদটা ভালো কিছু ছিল না। কিন্তু আমাদের তিনটি সন্তান, আমরা একসঙ্গে যেসব কাজ করতে পেরেছি—এমনকি আমি যদি জানতাম যে এই সংসার চিরস্থায়ী হবে না, তবু আমি আবারও সেটাই করব।’

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ২০২১ সালে ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টানেন। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে—ফিবি গেটস (২২), ররি গেটস (২৫) ও জেনিফার গেটস নাসার (২৮)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির ৩১ দফা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পথরেখা
  • বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল: সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা
  • মারা গেছেন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ অভিনেত্রী গুলশান আরা
  • ভিন্ন ‘রামায়ণ’–এর রচয়িতা
  • সংবাদ প্রকাশের জেরে তাণ্ডব থেকে বাদ, নায়িকা বললেন অপেশাদার আচরণ
  • নিউজ হওয়ায় তান্ডব সিনেমা থেকে বাদ, নায়িকা বললেন অপেশাদার আচরণ
  • নিউজ করায় তান্ডব সিনেমা থেকে বাদ, নায়িকা বললেন অপেশাদার আচরণ
  • ঘোষণা দিয়ে বন্ধ ক্যাম্পাসে ঢুকছেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা
  • পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে মারামারি, রাজনীতি এবং রক্ত দিয়ে লেখা প্রেমপত্র
  • যেভাবে ঘোরাবেন টাকার চাকা