গাজীপুরের শ্রীপুরে মাথায় লাল গামছা পেঁচিয়ে রামদা হাতে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে একদল যুবক। এসময় এমসি বাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে মাইকে ঘোষণা দেন যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এমসি বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। 

অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। গতকাল রাতেই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: বিএনপি ও যুবদলের ৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘বোমা’ হামলায় বিএনপি নেতা আহত

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে বহিষ্কার করা হয়। দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে।

ভাইরাল ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, মাথায় লাল গামছা পেঁচিয়ে রামদা, লোহার রড, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুর নেতৃত্বে তার লোকজন বাজারে আসেন। ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশান’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন তার সমর্থকরা। তারা এমসি বাজার ইউটার্ন থেকে মিছিল নিয়ে বাজারের উত্তর পাশে স্বপ্নপুরী হোটেলের সামনে এসে থামেন।

ভিডিওতে যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে হাতে মাইক নিয়ে বাজারের দোকানীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, “এই মুহূর্তে আমি বাজারে খাজনা উঠানো শুরু করব। এমসি বাজার এখন থেকে আমার নিয়ন্ত্রণ চলবে। কেউ বাধা দিলে পরিনতি ভয়াবহ হবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, এমসি বাজারটি আবু বক্কর সিদ্দিক নামের একজন ইজারা নিয়েছিলেন। তার ইজারার মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।  হঠাৎ করে শনিবার বিকেলে একদল যুবক মাথায় গামছা পেঁচিয়ে বাজারে এসে দোকানদারের নিকট খাজনার দাবি জানান। খাজনা দিতে রাজি না হওয়ায় দোকানীদের হুমকি দেয়। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম নামে এক যুবদল নেতা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমসি বাজারের একাধিক দোকানী জানান, বিকেলে হাতে রামদাসহ শতাধিক যুবক বাজারে এসে ভাসমান দোকানীদের কাছে খাজনা দাবি করেন। খাজনা না দিলে বাজারে ব্যবসা করতে দেবে না বলেও হুমকি দেন তারা। 

এ বিষয়ে জানতে যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুর সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন শেখ বলেন, “দল থেকে সবসময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

গাজীপুর জেলা যুবদলের আহব্বায়ক আতাউর মোল্লাহ বলেন, “কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় নেবে না সংগঠন। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টির খোঁজ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানিয়েছি। তাৎক্ষনিক তাকে (জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু) সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

ঢাকা/রফিক/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ জ হ ঙ গ র আলম প ন ট য বদল ন ত য বদল র

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জে একদল লোকের বাধায় সাধুর মেলা হলো না

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে স্থানীয় একদল লোকের বাধায় ফকির মওলা দরবার শরিফের বাউলশিল্পী রশিদ সরকারের সাধুর মেলা পণ্ড হয়ে গেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে উপজেলার আজিমপুরে অনুষ্ঠিত এ মেলায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে বাধা দিলে মেলা বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় ১২ জনকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিঙ্গাইর থানার পুলিশ।

সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেলায় সমস্যাটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। রশিদ সরকারের বড় ছেলে সিঙ্গাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু নাঈম মো. বাশার। পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত ১৫ বছর তাঁদের বিতর্কিত কার্যক্রমে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবারটির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় লোকজনকে বুঝিয়ে ক্ষোভ থেকে যেন কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু মেলা করতে গেলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আয়োজকদের উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে রশিদ সরকারের পরিবারের সদস্যসহ ১২ জনকে হেফাজতে আনা হয়েছে। তাঁদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দরবারের একাধিক ভক্ত জানান, বাউলসম্রাট রশিদ সরকার জীবিত থাকা অবস্থায় সিঙ্গাইর উপজেলার আজিমপুরে প্রতিবছর সাধুর মেলার আয়োজন করা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও মেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী এ মেলা হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েক দিন ধরে মেলা করতে দেবে না বলে জানাচ্ছিলেন মিঠু (উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মিঠু)। এরপরও আজ শত শত ভক্ত ফকির মওলা দরবার শরিফে আসেন। ভক্তরা আসায় দুপুরের দিকে বাধাদানকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে কয়েকজনকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ রশিদ সরকারের স্ত্রী শিরিন রশিদ (৬০), তাঁর বড় ছেলে আবু নাঈম মো. বাশারের স্ত্রী শাহানারা আক্তারসহ (৩৭) কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায়।

মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলার নামে মূলত সেখানে গাঁজা সেবন করা হয়। এটা গাঁজার মেলা। এই মেলা উপলক্ষে সেখানে অন্তত ১০ টন গাঁজা সেবন হয়। পুরো এলাকার লোকজন ভীষণ বিরক্ত। এ ছাড়া ধর্মীয় রীতিনীতিবহির্ভূত কাজও হয় সেখানে। স্থানীয়সহ পুরো সিঙ্গাইরের লোকজন এটি বন্ধের জন্য সেখানে গেলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমরাও সেখানে গিয়েছিলাম।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানিকগঞ্জে একদল লোকের বাধায় সাধুর মেলা হলো না
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ৯টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করাসহ ৮ দফা নির্দেশনা
  • নোয়াখালীতে ওরসের অনুষ্ঠানে হামলা, মাজার ভাঙচুর