বঙ্গোপসাগরের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী জুলাই মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি শেষ হলে সহজেই সুপেয় পানি পাবেন দ্বীপের বাসিন্দারা। প্রকল্পের আওতায় এ ছাড়া দ্বীপের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশেষ এই প্রকল্প নিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে বরাদ্দের পরিমাণ ৩৫ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান—গ্রিন ডট লিমিটেড ও টার্ন বিল্ডার্স।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়েজ প্রমাণিক বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশের যেমন সুরক্ষা হবে, তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সুপেয় পানির সংকট দূর হবে। তিনি বলেন, এপ্রিল-মে মাসে সমুদ্র উত্তাল থাকায় ট্রলারে করে দ্বীপে মালামাল পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিতিশীলতার প্রভাবও দ্বীপে যাতায়াতের নৌপথে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে।

স্মার্ট কার্ডে পানি বিতরণ

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং লবণাক্ততার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সুপেয়ে পানির সংকট রয়েছে সেন্ট মার্টিনে। দ্বীপের কোথাও জলাধার, খাল-নদী না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণই একমাত্র বিকল্প হয়ে ওঠে। শুষ্ক মৌসুমে সেই পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকেরা পানির জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের চাহিদা পূরণে টেকনাফ থেকে বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি কিনে আনতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর বলেন, এই প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা সর্বাধুনিক মেমব্রেন-ভিত্তিক রিভার্স অসমোসিস (RO) প্রযুক্তির, যা লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানিতে রূপান্তর করতে সক্ষম। এটি দীর্ঘমেয়াদি, পরিবেশবান্ধব ও খরচ সাশ্রয়ী সমাধান।

এই প্রকল্পের আওতায় দ্বীপজুড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে ১০টি স্মার্ট ওয়াটার বুথ স্থাপন করা হবে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এসব বুথ। প্রতিটি পরিবার ও অন্য ব্যবহারকারীরা বুথ থেকে পানি নিতে পারবেন এই স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গ্রিন ডট লিমিটেড।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দ্বীপের সমুদ্র কানন রিসোর্টের কাছে ১৫ ফুট ব্যাসের আরসিসি রিং ওয়েল (কুয়া) খননকাজ শুরু করেন, যার গভীরতা ২০-২৫ ফুট। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে আরও চারটি আরসিসি রিং ওয়াল তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে চারতলা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ভবন—যেখানে থাকবে ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার, কার্যালয়, সম্মেলনকক্ষ ও ডরমিটরি। এতে খরচ হবে ২০ কোটি টাকা।

গ্রিন ডট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রিং ওয়েলের সঙ্গে পানি সরবরাহের পাইপলাইন টানানোর কাজও চলমান। সাগরের অবস্থা ঠিক থাকলে আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। জুলাই মাসে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, এই পরিশোধন প্রযুক্তি প্রকল্পে দৈনিক ২ লাখ ৪০ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পানির উৎস হবে ভূগর্ভস্থ ও বৃষ্টির পানি। পাঁচটি আরআরসি রিং ওয়েল এবং সাবমারসিবল সোলার পাওয়ার পাম্প ব্যবহার করে পানি সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত পানি সংরক্ষণের জন্য ১ লাখ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এইচডিপিই ট্যাংক বসানো হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানি সরবরাহ যেন বন্ধ না হয়, এ লক্ষ্যে সোলার সিস্টেম ও ৭০ কেভিএ ডিজেল জেনারেটর বসানো হবে।

প্রতি পাঁচ লিটার পানির বিপরীতে গ্রাহকদের ১ টাকা করে পরিশোধ করতে হবে বলে জানান এ বি এম জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার । প্রতিজনের জন্য দৈনিক গড়ে ৪ লিটার পানি ধরা হলে দিনে প্রয়োজন হবে ৪৪ হাজার লিটার পানি। প্রকল্পের ধারণক্ষমতা ১ লাখ লিটার। খাবারের পাশাপাশি উৎপাদিত পানি দিয়ে রান্নাবান্না-গোসলসহ আনুষঙ্গিক কাজও সামলানো যাবে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার পরিবারকে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে। কার্ড রিচার্জ করে বুথ থেকে যত খুশি পানি সংগ্রহ করা যাবে।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈবসার উৎপাদনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে শোধনাগার। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ র জন য উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

দিন-রাত ব্যস্ততা সেমাইপল্লিতে

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যস্ত রাজবাড়ীর সেমাইপল্লি। রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সেমাই পৌঁছে দিতে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ পল্লিতে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। 
সেমাইয়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে নিয়মিত তদারকি করছেন মিল মালিক ও বিসিক কর্মকর্তারা। মান ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, 
মাগুরা, ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি জেলার বাজারে যাচ্ছে এ সেমাই। 
রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ঈদের বাজার ধরতে কর্মমুখর সেমাই কারখানাগুলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা সেমাই তৈরির কাজ করছেন। বস্তা থেকে আটা মেশিনে ঢেলে মেশানো হচ্ছে। এরপর মেশিনের সাহায্যে সুতোর মতো সেমাই তৈরির পর, রোদে শুকিয়ে আগুনের তাপে ভেজে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। সবশেষে সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় অবস্থিত দ্বীন ফুড প্রোডাক্টস কারখানার ম্যানেজার আব্দুস ছাত্তার জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তারা সেমাই তৈরি করেন। তাদের নিজেদের মিল থেকে ময়দা দিয়ে বানানো হয় সেমাই। প্রতিদিন বিশ মণ সেমাই তৈরি করেন তারা। তাদের উৎপাদিত সেমাই রং ও কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় চাহিদা রয়েছে বেশ। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় এখন দম ফেলার সময় নেই তাদের। রাজবাড়ীর চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে তাদের সেমাই।
শ্রমিক নাফিজা খাতুন জানান, সকাল ৮টায় এসে সারাদিন বিরতিহীন কাজ করে রাত ৯টার দিকে 
বাসায় ফেরেন। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় তাদের কাজের চাপও বেড়েছে। 
আরেক শ্রমিক ফুলজান বেগম জানান, তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে হাতে গ্লাভস পরে কাজ করেন। মিল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় তিনটিসহ জেলায় মোট চারটি কারখানায় প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫শ কেজি সেমাই তৈরি হচ্ছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত বিধিমালা মেনে যেন তারা সেমাই তৈরি করেন। যদি কেউ নোংরা পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুনে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চলমান থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি, বেতন ছাড়াও আছে সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহের নির্দেশ
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
  • ‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালু করবে বিএসইসি
  • সরবরাহ চুক্তিতে না আসায় শাস্তির মুখে চালকল মালিক
  • দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল জীবন, অবশেষে অভিশাপমুক্ত হলেন রিয়া
  • জি এম কাদের ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত
  • দিন-রাত ব্যস্ততা সেমাইপল্লিতে