ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর একজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলা করায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার (এএসআই) আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলো– মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিত, শরীয়তপুরের জাজিরা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো.

সবুজ এবং সাভার পৌরসভার টান গেণ্ডা গ্রামের শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ। গত শুক্রবার বিকেলে গেণ্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। শনিবার বিকেলে তিনজনকে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন করিমের আদালতে হাজির করা হয়। এর পর দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আহসান এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

গতকাল নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার তিনজনের বরাতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন টাঙ্গাইলের এসপি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে রাজশাহীগামী ইউনিক রয়েল রোড পরিবহন বাসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে তিন-চার ঘণ্টা ধরে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত ২টার দিকে বাসযাত্রী ওমর আলী মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মির্জাপুর থানা পুলিশ ও টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার মডেল থানায় অভিযান চালায়।

শুক্রবার বিকেলে গেণ্ডা এলাকা থেকে তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোনসেট, একটি ছুরি এবং নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার মহিতের বিরুদ্ধে দুটি বাস ডাকাতিসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, আমরা বাসের যাত্রীদের খুঁজে বের করেছি। নারী যাত্রীদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা আমরা আমলে নিয়ে কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ‘টাচে’ যেতে পারে এবং তা শ্লীলতাহানি পর্যন্ত যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার কারণে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোশারফ হোসেন।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী বাসযাত্রীরা যখন মির্জাপুর থানায় আসেন, তখন থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন আতিকুজ্জামান। তিনি কোনো কাজ না করে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে বলেন। যাত্রীরা কয়েক মিনিট পর চলে গেলেও ডিউটি অফিসারের কাছে তাদের নাম-ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর ছিল না। এভাবে দায়িত্বে অবহেলা করায় এসপি তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেন। শুক্রবার রাতে আতিকুজ্জামানকে মির্জাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘কী সুন্দর তাই না, একজন শিক্ষকের এই পরিণতি’

‘কী সুন্দর তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। আজ একজন শিক্ষকের এই পরিণতি!’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী চৌধুরী (টিএসি) উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক পোস্টে এ কথা লেখেন ওই শিক্ষকের মেয়ে ভাবনা আচার্য। বাবাকে পদত্যাগপত্রে সই করানোর ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। কান্তি লাল আচার্যের তিন মেয়ের মধ্যে ভাবনা আচার্য সবার ছোট। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

কান্তি লাল আচার্যকে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনাটি ঘটে বুধবার। অভিযোগ উঠেছে, ওইদিন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিদ্যালয়ে মিছিল নিয়ে গিয়ে কান্তি লাল আচার্যকে ঘেরাওয়ের পর জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছেন।

ভাবনা আচার্য ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমার বাবা কান্তি লাল আচার্য ৩৫ বছর ধরে ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আমার বাবাকে গতকাল (বুধবার) কোনোরকম প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া বলপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করানো হয়। আমার বাবার কী অপরাধ, কী সমস্যা, কিছু বলা হয়নি।’

ভাবনা আচার্য লেখেন, ‘জানেন, স্কুলে ঝামেলা হওয়ার আগে বাবাকে মানা করা হয় স্কুলে যেতে। বলছিল, স্কুলে গেলে অপমান হতে হবে। বাবা সেই কথার উত্তরে বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার কোনো অপরাধ নেই। আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বললে নির্দ্বিধায় আমি সরে যাব। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াব। কেউ আমার অপরাধের প্রমাণ আনতে পারলে আনুক।’

ভাবনা আচার্য আরও লেখেন, ‘বাবাকে পদত্যাগ করানোর আগে স্কুলে ককটেল ফাটানো হচ্ছিল। আমার বাবা তখনো নির্ভীক। জোর করে সাইন করতে বলছিল এমন একটি কাগজে, যেখানে লেখা ছিল-দুর্নীতির অভিযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি। বাবা নির্ভয়ে বলেছিল, আমি দুর্নীতি করিনি, এই পেজে আমি সাইন করব না। এমনিতেই পদত্যাগ করছি। সেই সময় বাবাকে একদল মারতে যায়। পরবর্তীতে, আরেকটি কাগজে লেখা হয়—ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’

এ ঘটনার পর বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন উল্লেখ করে ভাবনা লেখেন, ‘একজন শিক্ষকের এই অপমান! পৃথিবীতে একমাত্র হীন জাতি আমরা, যারা পদে পদে শিক্ষকদের টার্গেট করে এই অপমানজনক পরিস্থিতি উপহার দিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘...জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্থ হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন উনি শিক্ষক নয় শুধু, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সাথে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের পরিচালনায় গঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। কমিটির বর্তমান সভাপতি জামায়াত–সমর্থিত মহিউদ্দিন আহমেদ। বুধবার প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগপত্রে সই করানোর সময় মহিউদ্দিন আহমেদও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাকেও অনেকটা জিম্মি করে রাখা হয়। তার এক আত্মীয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পদত্যাগপত্রে সই করানোর পর ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ারের গাড়িতে করে কান্তি লাল আচার্যকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটিসহ প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের শাস্তি ও পদত্যাগ দাবি করেছি। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেন জানান তিনি। 

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য বলেন, ২০২৮ সালের মার্চ মাসে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। সাবেক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তা সততার সঙ্গে পালন করে আসছি। নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি মিটিং করে আমাকে বাদ দিতে পারতো। কিন্তু আমাকে অসম্মান করে বাধ্যতামূলক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যারা এ গর্হিত কাজ করেছে অধিকাংশ আমার ছাত্র ছিল। বলার কিছু নাই। বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিলাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্ত্রের মহড়া, কালোতালিকা, কাদা-ছোড়াছুড়ি, জনসংযোগের নামে বলিউডে যা হয়
  • গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় নৌকায় আগুন, ১৪৩ মরদেহ উদ্ধার
  • ফুটবলে তিন ছেলের কে কেমন, জানালেন মেসি
  • ‘কী সুন্দর তাই না, একজন শিক্ষকের এই পরিণতি’
  • দোকানে চুরি, দেরিতে আসায় পুলিশের মাথা ফাটালেন মুদি দোকানি
  • চট্টগ্রামে যুবলীগের ঝটিকা মিছিল, ফুটেজ দেখে আটক ৩
  • বটির কোপে স্ত্রীকে ও ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা, আদালতে জবানবন্দি
  • বটি কোপে স্ত্রীকে ও ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা, আদালতে জবানবন্দি
  • স্ত্রীকে দায়ের কোপে ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা, আদালতে আসামির স্বীকারোক্তি
  • চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি