আধ্যাত্মিকতা, বিশুদ্ধতা এবং জীবনবোধের অপূর্ব সংমিশ্রণ
Published: 23rd, February 2025 GMT
আত্তার, হাল্লাজ, খৈয়াম, রুমি, গালিবের জগৎ-জিজ্ঞাসা, মূল্যবোধ এবং প্রেমময় দৃষ্টিভঙ্গির মিলিত রূপের উচ্ছ্বাস ও উচ্চারণ ‘আত্মার আওয়াজ’। জব্বার আল নাঈমের এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হবে– এ তো আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার, স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির কিংবা প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমীর কথোপকথন।
কবিতার শরীর, শাখা-প্রশাখা আর ভেষজ গুণ কীভাবে নৈঃশব্দ্যের কারিগরের আরশে পৌঁছে যায় এবং কীভাবে মানুষকে তার স্রষ্টার সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এই গ্রন্থের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। তাঁর কবিতায় সুফিবাদের সেই ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যা আত্মারূপে পৌঁছবার সরণি। ‘মাওলার প্রতি পূর্ণমঞ্জিল’ সিরিজের ৮ নম্বর কবিতায় জব্বারকে বলতে শুনি– ‘তোমাকে কী করে ভুলি, জগতের মহাজন/প্রেমের পর্দা খুলে করেছ মহা আয়োজন।’
একই সিরিজের ১৮ নম্বর কবিতায় গভীর আবেগে জব্বার উচ্চারণ করেন– ‘যে মাওলার হয়ে যায়/মাওলা তার হয়ে দুনিয়া হেঁটে বেড়ায়।’
যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা, গবেষণা চললেও আধ্যাত্মিক সাধকরা নিজের মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পেয়েছেন। সাধারণ ধার্মিকের স্রষ্টা সাত আসমান দূরত্বে থাকলেও, ভক্তের স্রষ্টা তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। ‘প্রার্থনাঘরে একা’ সিরিজের তৃতীয় কবিতায় জব্বার বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন এভাবে– ‘কেউ তোমাকে দেখতে চাইলে আমার দিকে তাকাতে বলি।’ একই কবিতায় তিনি আরও বলেন– ‘মহাজন থাকে মনের ভাঁজে, যাকে ছাড়া আত্মা শূন্য মরূদ্যান!’
কবিতায় জব্বার ভক্ত ও স্রষ্টাকে পরস্পরের সামনে দাঁড় করিয়েছেন প্রেমিক-প্রেমিকার ভূমিকায়। মানব প্রেম থেকে ঐশী প্রেমে উত্তরণের মাঝখানে অনেক চড়াই-উতরাই থাকে। এই বই পড়তে পড়তে মনে হয়েছে ঐশী প্রেমের আবেশে যিনি আছেন, বাহ্যিক আমল-ইবাদত তাঁর কাছে মুখ্য নাও হতে পারে। শব্দের সঙ্গে শব্দ জুড়ে দিয়ে নতুন এক সম্মোহনে প্রচলিত অর্থ থেকে নতুন অর্থকে প্রবহমান করেছেন জব্বার। তাঁর কবিতার পঙ্ক্তিগুলো কখনও হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের তির্যক ভাষা, আবার পরক্ষণে তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। ‘পয়গম্বরের প্রতি প্রার্থনা’ সিরিজের ‘নবীর প্রেম’ কবিতায় তিনি বলেন– ‘যদি আত্তারের প্রেমে কাদকান/যদি রুমির প্রেমে বালখ/ইবনুল আরাবির দরদে আন্দালুসিয়া/মহাত্মা লালনের সায়র কুষ্টিয়া/নবী আপনার প্রেমে সৌরজগতের সুনাম/জব্বারের প্রেমে হোক জাগ্রত চট্টগ্রাম!’
আরব থেকে আগত সুফিরা এ দেশের ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা বিভিন্ন তরিকার মাধ্যমে খোদাপ্রাপ্তির পথকে সহজ করেছেন। গত কয়েক মাসে সুফি তরিকার এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাদের মাজার ভাঙা হয়েছে। এমন সময়ে জব্বার আল নাঈমকে তাঁর সুফি ঘরানার কবিতার বই ‘আত্মার আওয়াজ’কে সামনে নিয়ে আসার জন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়।
তিন পর্বে বিভক্ত ‘আত্মার আওয়াজ’ এমন এক গ্রন্থ যেখানে মানবিক সব কদর্য থেকে আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন করতে আহ্বান জানিয়েছেন কবি। তাঁর এ কাব্যগ্রন্থের পাঠ শেষে আমার মনে হয়েছে– বাংলা কবিতায় যারা সুফিবাদ, আধ্যাত্মিকতার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছেন জব্বার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে। তাঁর এ কবিতাগুলো হতাশার মাঝে যেমন আশার আলো সঞ্চার করে, তেমনই সৃষ্টিজগতের সেবায় আত্মনিয়োগের অনুপ্রেরণাও জোগাবে।
আত্মার আওয়াজ, জব্বার আল নাঈম, প্রচ্ছদ মোস্তাফিজ কারিগর, সাহস পাবলিকেশন্স, ৬৪ পৃষ্ঠা, দাম ১৩৫ টাকা।
মর্তুজা হাসান সৈকত, কবি ও কলামিস্ট
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে প্রাণ হারাল দুজন
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ দুই কিশোর নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও ভাওড়পাড়া এলাকার আজহারুল ইসলামের ছেলে আশিকুর হক (১৬) ও একই গ্রামের মক্তবপাড়া এলাকার আকরামের ছেলে মিনহাজ (১৬)। আশিকুর এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয়রা জানান, ঈদের দিন মোটরসাইকেলে তিন বন্ধু পাশের টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজারের কাছে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মিনহাজ মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আশিকুর মারা যায়। এ ঘটনায় তাদের সঙ্গে থাকা অপর বন্ধু জিহাদ গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে সখিপুর থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।