আত্তার, হাল্লাজ, খৈয়াম, রুমি, গালিবের জগৎ-জিজ্ঞাসা, মূল্যবোধ এবং প্রেমময় দৃষ্টিভঙ্গির মিলিত রূপের উচ্ছ্বাস ও উচ্চারণ ‘আত্মার আওয়াজ’। জব্বার আল নাঈমের এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হবে– এ তো আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার, স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির কিংবা প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমীর কথোপকথন।

কবিতার শরীর, শাখা-প্রশাখা আর ভেষজ গুণ কীভাবে নৈঃশব্দ্যের কারিগরের আরশে পৌঁছে যায় এবং কীভাবে মানুষকে তার স্রষ্টার সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এই গ্রন্থের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। তাঁর কবিতায় সুফিবাদের সেই ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যা আত্মারূপে পৌঁছবার সরণি। ‘মাওলার প্রতি পূর্ণমঞ্জিল’ সিরিজের ৮ নম্বর কবিতায় জব্বারকে বলতে শুনি– ‘তোমাকে কী করে ভুলি, জগতের মহাজন/প্রেমের পর্দা খুলে করেছ মহা আয়োজন।’

একই সিরিজের ১৮ নম্বর কবিতায় গভীর আবেগে জব্বার উচ্চারণ করেন– ‘যে মাওলার হয়ে যায়/মাওলা তার হয়ে দুনিয়া হেঁটে বেড়ায়।’
যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা, গবেষণা চললেও আধ্যাত্মিক সাধকরা নিজের মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পেয়েছেন। সাধারণ ধার্মিকের স্রষ্টা সাত আসমান দূরত্বে থাকলেও, ভক্তের স্রষ্টা তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। ‘প্রার্থনাঘরে একা’ সিরিজের তৃতীয় কবিতায় জব্বার বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন এভাবে– ‘কেউ তোমাকে দেখতে চাইলে আমার দিকে তাকাতে বলি।’ একই কবিতায় তিনি আরও বলেন– ‘মহাজন থাকে মনের ভাঁজে, যাকে ছাড়া আত্মা শূন্য মরূদ্যান!’

কবিতায় জব্বার ভক্ত ও স্রষ্টাকে পরস্পরের সামনে দাঁড় করিয়েছেন প্রেমিক-প্রেমিকার ভূমিকায়। মানব প্রেম থেকে ঐশী প্রেমে উত্তরণের মাঝখানে অনেক চড়াই-উতরাই থাকে। এই বই পড়তে পড়তে মনে হয়েছে ঐশী প্রেমের আবেশে যিনি আছেন, বাহ্যিক আমল-ইবাদত তাঁর কাছে মুখ্য নাও হতে পারে। শব্দের সঙ্গে শব্দ জুড়ে দিয়ে নতুন এক সম্মোহনে প্রচলিত অর্থ থেকে নতুন অর্থকে প্রবহমান করেছেন জব্বার। তাঁর কবিতার পঙ্‌ক্তিগুলো কখনও হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের তির্যক ভাষা, আবার পরক্ষণে তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। ‘পয়গম্বরের প্রতি প্রার্থনা’ সিরিজের ‘নবীর প্রেম’ কবিতায় তিনি বলেন– ‘যদি আত্তারের প্রেমে কাদকান/যদি রুমির প্রেমে বালখ/ইবনুল আরাবির দরদে আন্দালুসিয়া/মহাত্মা লালনের সায়র কুষ্টিয়া/নবী আপনার প্রেমে সৌরজগতের সুনাম/জব্বারের প্রেমে হোক জাগ্রত চট্টগ্রাম!’

আরব থেকে আগত সুফিরা এ দেশের ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা বিভিন্ন তরিকার মাধ্যমে খোদাপ্রাপ্তির পথকে সহজ করেছেন। গত কয়েক মাসে সুফি তরিকার এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাদের মাজার ভাঙা হয়েছে। এমন সময়ে জব্বার আল নাঈমকে তাঁর সুফি ঘরানার কবিতার বই ‘আত্মার আওয়াজ’কে সামনে নিয়ে আসার জন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়। 

তিন পর্বে বিভক্ত ‘আত্মার আওয়াজ’ এমন এক গ্রন্থ যেখানে মানবিক সব কদর্য থেকে আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন করতে আহ্বান জানিয়েছেন কবি। তাঁর এ কাব্যগ্রন্থের পাঠ শেষে আমার মনে হয়েছে– বাংলা কবিতায় যারা সুফিবাদ, আধ্যাত্মিকতার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছেন জব্বার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে। তাঁর এ কবিতাগুলো হতাশার মাঝে যেমন আশার আলো সঞ্চার করে, তেমনই সৃষ্টিজগতের সেবায় আত্মনিয়োগের অনুপ্রেরণাও জোগাবে।

আত্মার আওয়াজ, জব্বার আল নাঈম, প্রচ্ছদ মোস্তাফিজ কারিগর, সাহস পাবলিকেশন্স, ৬৪ পৃষ্ঠা, দাম ১৩৫ টাকা।

মর্তুজা হাসান সৈকত, কবি ও কলামিস্ট

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

১০ বছর ধরে সকাল ও দুপুরে না খেয়ে থাকছেন শামি

চোট কাটিয়ে দীর্ঘ ১৪ মাস পর ফিরেছেন ক্রিকেটে। প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছি দারুণ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে মোহাম্মদ শামি নিয়েছেন ৫ উইকেট। ফেরার গল্পটা যে সহজ ছিল না, তা তো জানা কথাই।

অস্ত্রোপচারের পরের দিনগুলোতে নাকি শামির মনে হতো, নতুন করে হাঁটা শিখছেন।
এ সময়ে যে আরও অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁকে দেখে ভারতেরই সাবেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নবজ্যোত সিং সিধুরই মনে হয়েছে, ৫–৬ কেজি ওজন কমিয়েছেন। ওই কথার জবাবে স্টার স্পোর্টসে ম্যাচের পর তিনি বলেছেন, ‘আমি ৯ কেজি ওজন কমিয়েছি। সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হচ্ছে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা। আমি যখন এনসিএতে ছিলাম, ৯০ কেজির কাছাকাছি ওজন ছিল। আমি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাইনি। মিষ্টি থেকেও দূরে থেকেছি।’


এ তো গেল চোটের সময়কার কথা—একজন ক্রিকেটারকে ফিট থাকতে যে কত কিছু করতে হয়, তার উদাহরণই হয়তো শামি। এর আগে ঘরোয়া লিগে শামির দল বাংলার বোলিং কোচ শিব সুন্দর দাস জানিয়েছিলেন, ফিট থাকতে শামি নাকি তাঁর প্রিয় বিরিয়ানি বিসর্জন দিয়েছিলেন। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে হেসে শামি উত্তরে বলেন, ‘যদি বিরিয়ানির কথা বলেন, মাঝেমধ্যে খাওয়া তো যায়ই এ রকম কিছু! (হাসি)।’

আরও পড়ুন‘পাকিস্তান যদি ভারতকে হারায়, সেটা হবে অঘটন’১৭ ঘণ্টা আগে


এরপরই ক্রিকেটের জন্য কত ত্যাগ করতে হয়, তার একটা বড় উদাহরণ সামনে আনেন ভারতীয় এই পেসার, ‘২০১৫ সালের পর থেকে আমি শুধু একবেলা খাই। সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার খাই না এতগুলো বছর ধরে। শুধু রাতে খাই। এই কাজ করা কঠিন, কিন্তু আপনি যখন একবার অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, তখন সহজ হয়ে যায়।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি

সম্পর্কিত নিবন্ধ