সকালের দিকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল কম। তাই প্রকাশকরা বিকেল ও সন্ধ্যার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে সব আশায় গুড়ে বালি। ক্রেতা-দর্শনার্থীরা যে যার মতো এদিক-ওদিক চলে যান। পরে বৃষ্টি থামলেও মেলা তেমন জমেনি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলায় কথাগুলো বলছিলেন আবিষ্কার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন। রাজধানীতে বসন্তের বিরল বৃষ্টি স্বস্তি আনলেও বইমেলায় বিক্রি এলোমেলো করেছে।
এদিন সকাল থেকে উন্মুক্ত ছিল মেলার দ্বার, ছিল শিশুপ্রহরও। তবে সকালে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় তেমন চোখে পড়েনি। প্রকাশকরা বিকেল ও সন্ধ্যায় বিক্রিতে জোয়ার আসবে– এমন প্রত্যাশা করছিলেন। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৫টার পর শুরু হয় বৃষ্টি। এতেই ঘটে ছন্দপতন।
সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টি আসার আগে বারবার মাইকিং করে স্টল মালিকদের সতর্ক করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রস্তুত থাকতে তাগিদ দেওয়া হয়। মাইকিং করে পাঠক-দর্শনার্থীকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়।
তুমুল বৃষ্টি ও বাতাসে স্টলের তেমন ক্ষতি না হলেও বই বিক্রিতে ধস নামে বলে জানান অবসরের বিক্রয়কর্মী জামিল। তিনি বলেন, বিকেলের দিকে যখন লোক সমাগম ও বিক্রি বাড়তে শুরু করেছিল, তখনই বৃষ্টি এলো। তবে কিছু ক্রেতা বৃষ্টির মধ্যেও ছিলেন। পরে বই কিনেছেন। বৃষ্টি না হলে বিক্রি আরও বাড়ত।
দিনের শুরুতে শিশুচত্বরে লোক সমাগম ও শিশুদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ঝিঙেফুলের প্রকাশক গিয়াসউদ্দিন বলেন, আসলে বাচ্চাদের কাছে শিশুচত্বরে মূল আকর্ষণ থাকে সিসিমপুর। সেটা না থাকায় আমাদের বিক্রিতেও ঘাটতি পড়েছে। এমনিতে এ বছর মেলায় বিক্রি কম।
সন্ধ্যা ৭টার পর বৃষ্টি কমতে শুরু করলে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় কিছুটা বাড়ে। বৃষ্টিতে প্রায় ভেজা সাদিয়া জাহান বলেন, ‘চাকরির কারণে মেলায় আসার সময় পাই না। আজ এলাম কয়েকটি বই কিনতে। কিন্তু এসেই দেখি বৃষ্টি। তবুও যাইনি। কারণ পরে আসতে পারব না। তাই বই কিনেই যাব।’
বিদ্যাপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী কাউছার ইসলাম সজল বলেন, সন্ধ্যার দিকেই মূলত বই কেনার পাঠক আসেন। আজ ছুটির দিন ছিল। বৃষ্টিতে স্টলের তেমন ক্ষতি না হলেও বিক্রিতে ভাটা নামে।
বৃষ্টির পর মেলার বেশির ভাগ স্টল খুললেও বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে যায়। লিটলম্যাগ চত্বরে কাদা-পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এসব ডিঙিয়ে হলেও বৃষ্টির পর গাবতলায় আসেন পাঠক-দর্শনার্থী। তবে বৃষ্টিতে মেলা বেচাকেনা ব্যাহত হলেও চোখে পড়ে বিপুলসংখ্যক হকার। কেউ খাবার বিক্রি করছেন বা কেউবা ফুল।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অবসর প্রকাশনা সংস্থা থেকে গোলাম মুরশিদের ‘আত্মকথা ইতিকথা’, সৌম্য প্রকাশনী থেকে পীযূষ সিকদারের ‘অসীম শূন্যে হাঁটি’, সময় প্রকাশন থেকে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘অ্যাডভেঞ্চার মেঘবতী’, কিডস বুকস থেকে লিটন মোস্তাফিজের ‘অপ্রত্যাশিত মহাকাশযাত্রা’, সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে বুলবুল হাসানের বায়োফিকশন ‘অন্তহীন বিতর্কযাত্রা’।
মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কায়কোবাদের সাহিত্যে শ্মশানের চিত্রাবলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশ নেন হাবিব আর রহমান। সভাপতিত্ব করেন আবু দায়েন। ইমরান কামাল বলেন, কায়কোবাদ স্বশিক্ষিত মানুষ হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। কবি হিসেবে কায়কোবাদের আবির্ভাব তখন, যখন বাংলার সাহিত্যধারায় কাহিনিকাব্যের প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করেছে। কবি হিসেবে কায়কোবাদ নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘পুরাতন’ পথের পথিক হিসেবেই।
হাবিব আর রহমান বলেন, কবি কায়কোবাদের মধ্যে খুব অল্প বয়সেই স্বদেশ চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। তিনি কেবল কাহিনিভিত্তিক কাব্যেরই কবি নন, গীতিকাব্যেরও কবি।
‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আমিরুল মোমেনীন মানিক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মালেক মুস্তাকিম, কবি ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল বই ক ন ট র পর
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক কোচিং সেন্টার মালিকের কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. জোবায়দুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ওই নালিশি মামলা করেন।
জোবায়দুর রহমানের আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পল্টন থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জোবায়দুর রহমান মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র মালিক।
মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ছাড়াও আসামি হিসেবে আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা, উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও এসআই আতিকুর রহমান। অভিযুক্ত পরের তিনজন সিআইডিতে চাকরি করলেও তারা এখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, জোবায়দুর রহমান সপরিবারে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলিবাগে থাকেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট সাদা পোশাকে সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় তারা জোবায়দুর রহমানকে তুলে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যায় এবং তাঁর বাসার বিভিন্ন মালামাল লুট করে। তাঁকে ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হলেও তাঁর বিষয়ে পরিবারকে জানায়নি সিআইডি।
মামলার আরজিতে বলা হয়, সিআইডি কার্যালয়ে জোবায়দুরের দুই চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। পরে ওই ছবি তাঁর স্ত্রী ও পরিবারকে পাঠানো হয়। তৎকালীন সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে জোবায়দুরের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দেওয়া না হলে তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ও তাঁর স্ত্রীকে মানিলন্ডারিংয়ে মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।
জোবায়দুরের পরিবার গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে সিআইডির এসআই মেহেদী হাসানের গাড়িচালক সবুজের কাছে দফায় দফায় চার কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এসআই আতিকুর রহমান টাকা দেওয়ার স্থান ও সময় জানিয়ে তা তদারকি করতেন। টাকা নেওয়া–সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড জোবায়দুরের কাছে আছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব ৬ মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
জোবায়দুরকে রিমান্ডে নিয়ে পেটালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে ৪৩ দিন কারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী জোবায়দুর রহমান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ও এজাহারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরপর শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছে।
আজ বুধবার এ ব্যাপারে জানতে সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া ২০২২ সালের আগস্টে সিআইডি প্রধান হন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট মোহাম্মদ আলীকে সিআইডি থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি হত্যা মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুনসিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের২৩ মার্চ ২০২৫