অভাবের সংসার ওমর আলীর (৬৫)। ভ্যান চালান তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর ছোট সংসার। ভ্যান চালিয়ে যে টাকায় আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে এক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন তিনি। সরকারি চাল দেওয়ার কথা বলে ওই চক্র তাঁর আয়ের একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি নিয়ে গেছে।

শনিবার পিরোজপুরের নাজিরপুর শহরের সরকারি বালক বিদ্যালয়ের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে ওমর আলীর কান্না থামছে না। বাড়িতেও যেতে চাচ্ছেন না তিনি। তাঁর বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাতীলাখালী গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালেও ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন ওমর আলী। দুপুর ১২টার দিকে যাত্রীবেশে দুজন তাঁকে সরকারি চাল দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তাঁকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত সরকারি বালক বিদ্যালয়ের কাছে নিয়ে যায়। পরে সরকারি বালক বিদ্যালয়ের এলাকায় এলে ভ্যান রেখে একজন ওমর আলীকে বিদ্যালয়ের ভেতর থেকে কিছু মালামাল আনতে পাঠায়। ওমর আলী বিদ্যালয়ের ভেতরে গেলে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

কাঁদতে কাঁদতে ওমর আলী বলেন, ‘কলেজের দিকে চলেন বলে দুই ব্যক্তি আমার ভ্যান ভাড়া নিছে। আমি সরল মনে ভাড়া নিয়ে আইছি। আসার পরে আমাকে সরকারি চালের কার্ড দেওয়া হবে জানান। তাঁরা আমাকে বলেন, “আপনি এই কার্ড দিয়ে পাঁচ কেজি চাল পাবেন আর  কলেজের ভেতর থেকে থেকে কিছু মাল এনে দেওয়ার পর আপনাকে দুই শ টাকা দেওয়া হবে।’ তাঁদের কথা শুনে আমি কলেজের ভেতরে যাই। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বিদ্যালয়ের বাইরে এসে দেখি ভ্যান নেই। ওই ব্যক্তিরা ভ্যান নিয়ে পালিয়ে গেছে। ২৫-৩০ বছর ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। ভ্যান না ফিরে পেলে আমার আর কোনো উপায় নাই।’

ভ্যান চুরির ঘটনায় ওমর আলীর স্ত্রী নাজিরপুর থানায় কটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে এই ভ্যানটি কিনেছিলাম। এই ভ্যানটা চুরি হয়ে গেল। এখন তো আমাদের পথে বসতে হবে।’

নাজিরপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত (ওসি) শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই চোর চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারের ‘গলফ মাঠ’ এক টুকরা সবুজ ঘাসের দেশ

মৌলভীবাজারের শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কটি গেছে শমশেরনগর চা-বাগানের ভেতর দিয়ে। সড়কের দুই পাশে চা-বাগানের গাছ, সারি সারি ছায়াবৃক্ষ। দু–চারটি বট-অশ্বত্থেরও দেখা পাওয়া যায়। কোথাও চা-শ্রমিকদের লাইন (চা-শ্রমিকদের বসবাসের ঘরবাড়ি), লাইনে মানুষের শান্ত জীবন। চা-বাগানটি পড়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে।

সম্প্রতি টমটমে শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়ক দিয়ে কিছুটা পূর্ব দিকে গিয়ে চা-বাগানের একটি জায়গায় থামতে হয়েছে। ওখান থেকে দক্ষিণ দিকে একটি আধা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে ঝাঁকুনিতে হেলেদুলে গাড়ি চলছে সামনের দিকে। প্রায় আধা কিলোমিটারের কাছাকাছি দূরত্বে গিয়ে হঠাৎ চোখের সামনে বিশাল, প্রশস্ত এক টুকরা সবুজ হৃদয় উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। উঁচু-নিচু টিলামতো স্থানটিতে ঢেউ খেলছে ঘাসের সবুজ।

স্থানীয় লোকজন জানান, এটা হচ্ছে শমশেরনগর চা-বাগানের ভেতর ‘গলফ মাঠ’। কিছু তরুণ-তরুণী, শিশু ও নারী-পুরুষ মাঠটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের মতো করে ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ছায়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আলাপ-সালাপে সময় কাটাচ্ছেন।

চা-বাগানের ভেতরই গলফ মাঠটি। মাঠজুড়ে বিছানো সবুজ চাদর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গেছে। কোথাও কিছুটা সমান, তারপর ঢালু হয়ে আবার সমান হয়ে গেছে। অনেকটা প্রান্তরজুড়ে এই সবুজের বিস্তৃতি। এক টিলায় আটকে নেই এই খোলা সবুজ হৃদয়। কয়েকটি টিলা এ রকম ঘাসে ঘাসে গাঁথা হয়ে আছে।

শমশেরনগর চা-বাগানের বাসিন্দা, কৃষি উদ্যোক্তা ও সংগঠক মোহন রবিদাস জানালেন, তখন ব্রিটিশ শাসনের যুগ। ১৮৪৮ সালে শমশেরনগর চা-বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই সময় ব্রিটেন থেকে আসা লোকজনই বাগান চালাতেন। তাঁরা অন্যকিছু খেলতেন না, ‘গলফ’ খেলতেন। এই সবুজ মাঠটি সেই ব্রিটিশদেরই তৈরি। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা এই বাগান থেকে চলে গেছেন। কিন্তু চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সৌন্দর্যের জন্য মাঠটিকে অপরিবর্তিত অবস্থাতেই রেখে দিয়েছে। মাঠটি তাই সবুজের প্রশস্ত হৃদয় হয়ে এখনো টিকে আছে। এক টুকরা ‘সবুজ ঘাসের দেশ’ হয়ে মানুষকে স্বস্তি দিয়ে চলছে। মাঝেমধ্যে চা-কোম্পানির ঊর্ধ্বতন লোকজন গলফ খেলতে এখানে আসেন। বাগান ব্যবস্থাপকেরাও এই মাঠে গলফ খেলে থাকেন। তখন মাঠটিকে রঙিন কাগজে সাজিয়ে তোলা হয়। মাঠে উৎসবের রং লাগে।

মোহন রবিদাস প্রথম আলোকে বলেন, গলফ মাঠে এমনি অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। বিকেলেই বেশি লোকজন আসেন। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, এই সবুজমাখা মাঠ মানুষকে নীরবেই টানে। শীত, হেমন্ত ও বসন্তে এখানে গা-জুড়ানো রোদে ভিজে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখার নির্মল আনন্দ হয়তো অনেকে খুঁজেন। চা-বাগানের টিলা পেরিয়ে সূর্য যখন লাল হয়ে দূরের দেশে চলে যায়, কুয়াশায় জড়িয়ে পড়ে আলো। সেই কুয়াশা, সেই আলোরও আছে ভিন্নতর মায়া। আহলাদি সবুজের সঞ্চয় নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন। সে প্রকৃতির যেকোনো মৌসুমই হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ