ধর্ষণের ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ
Published: 23rd, February 2025 GMT
মাদারীপুর শহরের এক নারীকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণ ও সেই ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত রাহাত ওরফে শুভ (৩০) সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামের মতিউর রহমান সেলিম ওরফে সেকান্দার শেখের ছেলে। এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। শুভকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনার তদন্ত ও সঠিক বিচার চেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে নতুন শহর এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী নারী। তিনি জানান, অভিযুক্ত শুভ তাঁর আত্মীয়। আত্মীয়তার সম্পর্কের সুবাদে শুভ মাঝেমধ্যে তাঁর বাবার বাড়িতে আসত। শুভ প্রাইভেটকার চালক হওয়ায় পারিবারিক প্রয়োজনে তাঁর গাড়ি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া হতো।
ভুক্তভোগী বলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই সুযোগে শুভ তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনার কথা বলে। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রাইভেটকারযোগে তাঁর স্বামীর কর্মস্থল রাজবাড়ীতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে বাসা থেকে নিয়ে যায় শুভ। পরে শহরের পাকদী এলাকায় নিয়ে গাড়ির মালিকের বাসায় একটু কাজ আছে বলে গাড়ি থামায় শুভ। এ সময় তাঁর মুখে নেশাদ্রব্য মেশানো রুমাল দিয়ে চেপে ধরে শুভ। তিনি অচেতন হয়ে পড়লে শুভ তাঁকে মাদারীপুর শহরের পাকদী এলাকার কাইয়ুম মিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। এর পর শুভ তাঁকে ধর্ষণ করে ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। এ ছাড়া কিছু অশ্লীল ছবিও তুলে রাখে। রাত ১০টার দিকে তাঁর চেতনা ফিরলে বাসায় কেন আনা হয়েছে জানতে চান তিনি। এ সময় শুভ কিছু অশ্লীল ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে বলে কাউকে এ ঘটনা বললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
তিনি আরও বলেন, শুভকে তাঁর মোবাইল ফোন থেকে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। বরং ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মাদারীপুর শহরসহ ঢাকাতে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে তাঁকে কয়েকবার ধর্ষণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ব্র্যাক, আশা ও সিএসএস এনজিও থেকে তাঁকে স্ত্রী সাজিয়ে দুই লাখ টাকা লোন তুলে নেয়। এর কিস্তি তাঁকেই পরিশোধ করতে হয়। বিষয়টি শুভর পরিবারকে জানালে তারা কর্ণপাত করেননি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বিকেলে ভয় দেখিয়ে ঘটমাঝি গ্রামে শুভর মামার নির্মাণাধীন ফাঁকা ভবনে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে শুভ।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মোকসেদুর রহমান বলেন, আসামি শুভকে ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাঁকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে: আলী রীয়াজ
গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়কে বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, এ দেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা বারবার পর্যদুস্ত হয়ে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক শাসনে পরিণত হয়। গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে বিভিন্নভাবে সে বিজয়কে ভূলন্ঠিত করা হয়েছে।
শনিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ শাসনকে পরাভূত করে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে দাবি করে দলটির উদ্দেশে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিনের যে ফ্যাসিবাদী শাসন জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের বুকের উপর বসে ছিল, তার বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে লড়াই, অকুতোভয় সংগ্রাম এবং আপনাদের সাথীদের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সে শাসনকে পরাস্ত করতে পেরেছেন। একটি ফ্যাসিবাদী শাসনকে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন যা বাংলাদেশকে রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর করেছে। তিনি বলেন, এখন সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এসেছে। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনও এ দেশে ফিরে না আসে, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্থায়ী রূপ নেয়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সব রকমের নিপীড়ন যেন আমরা প্রতিহত করতে পারি।
আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ছাড়াও ছিলেন সামান্তা শারমিন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন ও নাহিদা সারোয়ার নিভা।
উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। ২৩ মার্চ জাতীয় নাগরিক পার্টি কমিশন বরাবর তাদের মতামত জমা দেয়। সে প্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন। দিনব্যাপী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।