Samakal:
2025-04-24@16:52:17 GMT

কৃষকের দুঃখ বাল্লা নদী

Published: 22nd, February 2025 GMT

কৃষকের দুঃখ বাল্লা নদী

নদীর মুখের স্লুইসগেট ৪২ বছর ধরে অকেজো। পলি পড়ে শুকিয়ে গেছে কয়েক কিলোমিটার নদী। বোরো মৌসুমে ১৩ গ্রামের ৩০ হাজার কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারেন না পানির অভাবে। আবার যখন ফসল ঘরে তুলবেন, তখন বর্ষার আগাম পানিতে তলিয়ে যায় ক্ষেতের ফসল। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়।
বাল্লা নদীর ৫ কিলোমিটার অংশ শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর মুখের স্লুইসগেট ৪২ বছর ধরে অকেজো। বোরো মৌসুমে কৃষক সময়মতো জমিতে পানি ধরে রাখতে কিংবা বৃষ্টির পানি ছাড়তে পারেন না নদীতে। অগ্রহায়ণ মাস এলে কৃষক চেয়ে থাকেন কখন নদীতে জোয়ার আসবে আর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে কৃষক দোয়া করেন যেন নদীতে জোয়ার না আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ, ফরদাবাদ ও রূপসদী ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের কৃষকের সেচ সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকার ১৯৮২ সালে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গঙ্গানগর গ্রামের পশ্চিম পাশে বাল্লা নদীর মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করে। মাত্র ২ বছর সুফল ভোগ করতে পেরেছেন কৃষক। এই এলাকার কিছু নৌকার মালিক ও বালু ব্যবসায়ী তাদের নৌ চলাচলের জন্য স্লুইসগেটের পাশে নদীর পাড় কেটে দেন। এতে অকার্যকর হয়ে পড়ে স্লুইসগেট। ফলে সেচের সময় পানি আটকে রাখতে না পারায় কৃষক সময়মতো জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। অন্যদিকে ধান কাটার মৌসুমে বর্ষার আগাম পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের পাকা ধানের জমি। বাল্লা নদীর ৫ কিলোমিটার পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে সেচ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। 
স্থানীয়দের দাবি, বাল্লা নদী খনন ও স্লুইসগেট সংস্কার করলে এলাকায় কৃষি বিপ্লব হবে। কয়েক হাজার টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন সম্ভব হবে। পানি সংকটের কারণে জমিতে সময়মতো সেচ দিতে না পারায় অনেক কৃষক বোরো চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গঙ্গানগর গ্রামে তিতাস নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে বাল্লা নদী পাঠামারা, ভুরভুরিয়া, একরামপুর, খাগকান্দা, ঝুনারচর হয়ে ফরদাবাদের বালিয়াদাহ বিলে পতিত হয়েছে। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় এই নদীর ওপর নির্ভর করে শতাধিক সেচের আওতায় ছলিমাবাদ, ফরদাবাদ ও রূপসদী ইউনিয়নের পাঠামারা, ভুরভুরিয়া, একরামপুর, খাগকান্দা, ঝুনারচর, ফরদাবাদ, রূপসদী, হোগলাকান্দা, হোসেনপুর, তাতুয়াকান্দি, হায়দর নগর, আশ্রাববাদ, খাউর পুরা গ্রামের প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হয়। প্রায় ৩০ হাজার কৃষক তাদের জমিতে বোরো চাষ করেন। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে জমিতে বোরো ধানের চারা লাগাতে হয়। ভরাট হওয়ার কারণে নদীতে এ সময় পানি থাকে না। তাই সময়মতো সেচ দিতে না পারায় বালিয়াদাহ বিলের কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে প্রতিবছর। আবার কৃষক কয়েক মাস নিরলস পরিশ্রম করে যখন ধান কাটার সময় হয়, তখন নদীর মুখের স্লুইসগেট অকেজো থাকায় আগাম পানি ঢুকে নিচু জমি তলিয়ে যায়।
খাগকান্দা গ্রামের কৃষক রইস মিয়া জানান, বোরো ধানের চারা রোপণের সময় জমিতে সেচ দিতে পারেন না পানির অভাবে। ধারদেনা করে জমিতে বোরো চাষ করলেও বর্ষায় আগাম পানি এসে তলিয়ে যায় ক্ষেত।
ফরদাবাদ গ্রামের ব্লক ম্যানেজার ময়না মিয়ার ভাষ্য, বাল্লা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ মৌসুমে বিলে পানি থাকে না। স্লুইসগেট অকেজো থাকার কারণে পানিও ধরে রাখা যায় না। আবার ধান পাকার সময় আগাম বন্যার পানিতে জমি তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। জরুরি ভিত্তিতে বাল্লা নদী খনন ও স্লুইসগেট সংস্কার করলে কৃষকের উপকার হবে।
ছলিমাবাদ ইউপির ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, বালিয়াদাহ পানির ওপর নির্ভর করে এলাকায় বোরো চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু বাল্লা নদীটিতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে কৃষক জমিতে ঠিকভাবে সেচ দিতে পারছেন না। আবার স্লুইসগেট নষ্ট থাকায় বর্ষার আগাম পানি ডুকে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান দরকার।
ছলিমাবাদ ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকের দুঃখ এই বাল্লা নদী। নদীটি খনন ও স্লুইসগেট পুনর্নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এগুলো করলে এই এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, ছলিমাবাদ, ফরদাবাদ ও রূপসদী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক বোরো চাষ নির্ভর করে বাল্লা নদীর ওপর। বাল্লা নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সময়মতো জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। স্লুইসগেটটিও নষ্ট থাকায় পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। আবার আগাম বন্যায় ফসলহানি ঘটছে। এসব সমস্যার সমাধান হলে কৃষকের উপকার হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দল এসে ঘুরে দেখে গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তারা একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ র স ল ইসগ ট এল ক য় র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

কম্বাইন হারভেস্টার কিনে উল্টো বিপদে কৃষক

অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সরকারি ভর্তুকিতে জমির ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র কিনেছিলেন হবিগঞ্জের কৃষকরা। তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। উল্টো কয়েকদিন পর পর মেরামত সংস্কারে খরচ বাড়িয়ে গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে সেগুলো। কেনার পর থেকে অধিকাংশ মেশিন বিকল হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হারভেস্টার মালিকরা। অন্যদিকে, হারভেস্টার মেশিন বিকল থাকায় সময়মতো ধান গোলায় তুলতে পারছেন না কৃষকরা।

এসব হারভেস্টার মালিকদের অভিযোগ, প্রতিকার পেতে কৃষি বিভাগের কাছে সাহায্য চাইলেও ফল মেলেনি। মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা বলে দায়সারা জবাব দিচ্ছেন তারা। এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, অগ্রগতি সাধিত হওয়ার কথা ছিল। সেটি হয়নি, বরং কৃষকরা উল্টো দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

জানা যায়, বিগত সরকার ধান কাটা ও মাড়াই সহজ করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হাতে নেয়। সরকারের ভর্তুকির সহযোগিতা নিয়ে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বিক্রেতা কোম্পানির সঙ্গে কিস্তির মাধ্যমে টাকা পরিশোধের চুক্তিতে জেলায় ৬৩২টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদরে ৭০, শায়েস্তাগঞ্জে ৫, মাধবপুরে ৩০, চুনারুঘাটে ৩৬, বাহুবলে ৭৯, নবীগঞ্জে ১১৬, লাখাইয়ে ৮৬, বানিয়াচংয়ে ১০৬ এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১০৪টি হারভেস্টার যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। 

একাধিক উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, ওই প্রকল্পের আওতায় কেনা হারভেস্টার মেশিন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিকদের অনেকে। জেলায় ৬৩২টি হারভেস্টার মেশিনের মধ্যে অর্ধেক বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যন্ত্রপাতি মেরামত না করায় ধান কাটার কাজে আসছে না সেগুলো। সময়মতো ধান গোলায় তুলতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষক। এছাড়া হারভেস্টার মেশিন বিকল থাকায় লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মালিকরা। হারভেস্টার মেরামতে বার বার তাগিদ দিলে দায়সারা জবাব দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। এমনটাই দাবি স্থানীয় হারভেস্টার মালিকদের।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের হারভেস্টার মালিক হাবিবুর রহমান মুক্তার জানান, ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার দামের হারভেস্টার সাড়ে ৪ লাখ টাকা জমা দিয়ে সরবরাহ করেন। ২০ লাখ টাকা সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার কথা রয়েছে। বাকি টাকা তাঁর কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা। অথচ, বোরোর প্রথম মৌসুমে তাঁর হারভেস্টার মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। এতে করে তিনি ধান কাটতে পারেননি। 

একই অবস্থা লাখাই উপজেলার কদম আলী গ্রামের হারভেস্টার মালিক ইউপি সদস্য ছায়েদ আলীর। তিনি জানান, ২০২১ সালে আলীম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করে। মৌসুমের শুরুতে বোরো জমিতে নামালে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে। বিষয়টি তিনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানালেও কেউ মেরামত করেনি।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের আবজল মিয়া জানান, ২০২১ সালে ইয়ানমার হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করেন তিনি। প্রথম মৌসুম থেকে মেশিনের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে। মাঝে মধ্যে মেরামত করে ধান কাটলেও ব্যাপক ভোগান্তি দেখা দেয়। একই এলাকার সিজিল মিয়া বলেন, ‘২০২১ সালে হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করি। মৌসুমের শুরুতে ধান কাটতে পারিনি। জমিতে নামার পর প্রায় সময়ই বিকল হয়ে পড়ে। এতে কৃষকরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। যন্ত্রপাতির দাম থাকায় সময়মতো মেরামত করতে পারিনি।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৬৩২টি হারভেস্টার মেশিনের মধ্যে ৫২৮টি চালু রয়েছে। যেগুলো চলতি মৌসুমে ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া হবিগঞ্জ সদরে ১৭, মাধবপুরে ২, চুনারুঘাটে ১২, বাহুবলে ২৬, নবীগঞ্জে ২২, লাখাইয়ে ৭, বানিয়াচংয়ে ৬ ও আজমিরীগঞ্জে ১২টি হারভেস্টার বিকল রয়েছে। সরবরাহের সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সেগুলো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কম্বাইন হারভেস্টার কিনে উল্টো বিপদে কৃষক