দুর্বল কিছু ব্যাংকের উন্নতি হচ্ছে
Published: 22nd, February 2025 GMT
নানামুখী সংকটের মাঝেও ব্যাংকিং খাত কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। অতীতের অনিয়ম ও লুটপাটে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রিজার্ভ সুরক্ষা ও আমদানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে, এমন কোনো কোনো ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ সুশাসন জোরদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যাংকিং খাতের পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পরপরই আতঙ্কের কারণে টাকা উত্তোলনের ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। সংকট মেটাতে ৬টি ব্যাংককে গত নভেম্বর মাসে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ধরনের টাকা দেওয়া সরাসরি টাকা ছাপানোর মতো। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে এভাবে টাকা দেওয়ায় ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়। যদিও গভর্নর জানান, প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলোকে আরও টাকা দেওয়া হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরই মধ্যে আমানতকারীর আস্থা ফেরায় টাকা তোলার চাপ কমেছে। যে কারণে নতুন করে আর কোনো ব্যাংকে টাকা ছাপিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নিয়ে সবচেয়ে চিন্তিত ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ হিসেবে অন্তত ৮৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এস আলম গ্রুপ। তবে ব্যাংকটি প্রচুর আমানত পাওয়ায় এরই মধ্যে আবার ঋণ দেওয়া শুরু করেছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন গভর্নর ড.
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ৮ আগস্ট। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণ, ফরেনসিক নিরীক্ষা পরিচালনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে এ টাস্কফোর্স।
এসব উদ্যোগের ফলে কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যে ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়, তার মধ্যে ইউসিবি অন্যতম। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রণোদনা সহায়তা গ্রহণ না করেই ব্যাংকটি শক্তিশালী অবস্থানে ফিরেছে। ইউসিবি সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দেড় মাসে ইউসিবির সব শাখা, উপশাখা, এজেন্ট আউটলেট ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এক লাখেরও বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থারই প্রতিফলন। ইউসিবিতে ব্যক্তিশ্রেণি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হিসাব খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এই শ্রেণির মধ্যে ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো উদ্যোগের ফলে মানুষ আবার ব্যাংকের ওপর ভরসা করতে শুরু করেছে। আমানত ও ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা ইতিবাচক। সংস্কার ও সুশাসনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই ব্যাংকিং খাত আরও শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হবে।
শুধু ইউসিবি নয়, আরও কিছু ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বাড়ছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে বিধ্বস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমানতকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২৪ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। জানা গেছে, হলমার্কের ঘটনার পর সোনালী ব্যাংক বড় কোনো অর্থায়ন করেনি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং রপ্তানি পণ্য উৎপাদন করে এমন ব্যবসায় বেশি ঋণ দিয়েছে। এই কৌশলেই ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে পুরোনো কিছু খেলাপি গ্রাহক, হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায় এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে।
এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, ‘সংস্কার উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং খাত দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল, সেগুলোও এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বুয়েটে ক্লাস শুরু ১২ এপ্রিল, প্রথম বর্ষে হলে উঠতে সর্বোচ্চ ফি ২৭৮৫০ টাকা
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সব স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস আগামী ১২ এপ্রিল শুরু হবে। এ তথ্য ২৫ মার্চের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বুয়েট ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণির লেভেল-১, টার্ম-১–এর নবাগত শিক্ষার্থীদের হল সংযুক্তি–সংক্রান্ত অপর এক বিজ্ঞপ্তি ২৪ মার্চ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ফি জমা দেওয়ার স্থান, তারিখ ও সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট হল অফিস ও বুথে সাক্ষাৎকার ও টাকা জমা নেওয়া হবে। প্রথম বর্ষে হলে উঠতে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুনচীনে আইইএলটিএস ছাড়াই স্কলারশিপে মাস্টার্স-পিএইচডির সুযোগ৫ ঘণ্টা আগেএ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লেভেল-১, টার্ম-১ (নবাগত) শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার ৯ এপ্রিল ও ১০ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট হল অফিসে নেওয়া হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এবার আবাসিক শিক্ষার্থীদের ২৫ হাজার ৩৫০ এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ১২ হাজার ৭৫০ টাকা সংশ্লিষ্ট হল অফিস বুথে জমা দিতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে ছাত্রদের হলে ভর্তির জন্য ২৫ হাজার ৩৫০ টাকা এবং এর সঙ্গে এক মাসের মেসচার্জ বাবদ ২ হাজার ৪০০ টাকাসহ মোট ২৭ হাজার ৭৫০ টাকার প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকের ৩১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় আসছে এপ্রিলেই৩ ঘণ্টা আগেছাত্রীদের সাবেকুন নাহার সনি ও স্বাধীনতা হলের আবাসিক হিসেবে ভর্তির জন্য ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের তাঁদের হলে ভর্তির ফির টাকার প্রকৃত পরিমাণসহ অফিস বুথে উপস্থিত হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
হলে সংযুক্তি–সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদির জন্য সংশ্লিষ্ট হল অফিসে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। শনি থেকে বুধবার (বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির দিন ব্যতীত) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যোগাযোগ করা যাবে।