লিন্ডা জারুর যখন উত্তর গাজার জাবালিয়ায় তাঁর বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে এক প্রতিবেশীর তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন তাঁবুর ওপর একটি ছাদের টিন ভেঙে পড়ে। ভারী বৃষ্টি এবং প্রবল বাতাসে এটি তাঁর আশ্রয়স্থলে আঘাত হানে। ৪৫ বছর বয়সী লিন্ডা সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম এটি ইসরায়েলি বিমান হামলা। আমি ও আমার স্বামী যেখানে ছিলাম, এটি এর খুব কাছেই এসে পড়েছিল।’
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পর উত্তর গাজায় অধিকাংশ মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে এসেছেন, যেখানে তারা অস্থায়ী আশ্রয়ে তাঁবুতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। শীত ও বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত আশ্রয় তাদের নেই। গত সপ্তাহে ভারী বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসে অনেক তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর জারুর ও তাঁর স্বামী আল-খাতিব (৫৫) বাড়ি ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। তীব্র বোমা হামলায় গোটা এলাকা তখন কাঁপছিল। তারা দক্ষিণ গাজায় খান ইউনিসে আশ্রয় নেন। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, ওই এলাকাটি তারা নিরাপদ হবে বলে মনে করেছিলেন। জারুরের জন্য বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
২০২৪ সালের মে মাসে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই তাদের মাত্র ৫০ মিটার দূরে একটি বাড়িতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। এতে লিন্ডা আহত হন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণেও তারা সর্বত্র হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল। আমরা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছি, ক্ষুধার্ত থাকতে হয়েছে, অপমানিত হতে হয়েছে, ঠান্ডায় ন্যূনতম আশ্রয়টুকুও পাইনি।’
এক আত্মীয়ের কাছ থেকে লিন্ডা ফোনে জানতে পারেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাঁর বাড়িটি ধ্বংস হয়েছে। তখন বাড়ি ফেরার আশাও তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। লিন্ডা বলেন, ‘আমার বেশ বড় ও সাজানো বাড়ি ছিল। এটি ছিল আমাদের কাছে স্বর্গের মতো। বাড়ি ধ্বংসের খবর শোনার পর আমার স্বামী ডায়াবেটিসে ভুগতে শুরু করেন এবং আমি জানতে পারি, আমার রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে।’
জানুয়ারি মাসের শেষদিকে ইসরায়েলি বাহিনী নেটজারিম করিডোর থেকে সরে গেলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসার অনুমতি পান। সে সময় লিন্ডা ও আল-খাতিব বাড়ি ফিরে আসেন। তারা নিজ এলাকায় ধ্বংসের মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে যান।
লিন্ডা বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখে কেঁদে ফেললাম। আশা করেছিলাম, শীতকালে উষ্ণ থাকার জন্য অন্তত একটি তাঁবু পাব। এখনও কোনো সাহায্য পাইনি। প্রতিবেশীরা তাদের তাঁবুতে আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন; কিন্তু তাঁবুর অভাব রয়েছে এবং প্রয়োজন ক্রমাগত বাড়ছে। যখন বৃষ্টি হয়, তখন আমাদের তাঁবুতে পানি ঢোকে। বাতাসের শব্দ ভয়ানক মনে হয়। ভয় পাচ্ছি, এই বুঝি তাঁবুটা উড়ে যাবে!’
গাজার আবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৫ মাসের টানা বোমাবর্ষণে ইসরায়েলি বাহিনী আড়াই লাখেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস করেছে। এ আগ্রাসনে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে তাঁবু ও অন্যান্য সাহায্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
তবে কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও লিন্ডা বা অন্য ফিলিস্তিনিরা নিজের মাটি থেকে সরতে রাজি নন। লিন্ডা বলেন, ‘তারা চায় আমরা আমাদের মাটি ছেড়ে চলে যাই। আমরা তা কখনও করব না। আমি আমার এলাকায় মরতে রাজি আছি। আমাদের এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না।’ v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

কারণ ছাড়াই বাড়ছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর

কোনো প্রকার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা কোনো কারণ ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (ডিজিআইসি) লিমিটেডের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) এমন তথ্য জানিয়েছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসই। ওই চিঠির জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষে জানিয়েছে, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই তাদের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে।

দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের গত ৬ এপ্রিল শেয়ার দর ছিল ২৪.২০ টাকায়। যা ২১ এপ্রিল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩০.৪০ টাকায়। অর্থাৎ ১০ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৬.২০ টাকা বা ২৬ শতাংশ।

এভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ